কিন্ডারগার্টেনের হালচাল: নীতিমালা মানলেও নিবন্ধনে নেই
ঢাকাঃ কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর মধ্যে অনেক স্কুল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নীতিমালা-২০১১ পালন করেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৬৫০ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পেয়েছে। অন্যদিকে দেশের কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠান ৮০ সহস্রাধিক। নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ৩০ সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে স্মারক পেয়েছে ১০ হাজারেরও কম প্রতিষ্ঠান।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ১০ বছর আগে আবেদন করলেও এখনো নিবন্ধন পায়নি। পরে আবেদন করেও অনেক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পেয়েছে। নিবন্ধন না পাওয়ার কারণ জানে না, প্রতিষ্ঠানেরগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএ)।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, অনেক প্রতিষ্ঠান নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে পারে না। তবে প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শর্ত পূর্ণ করেই আবেদন করেছি। এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদরা বলেন, নিবন্ধন না পাওয়ার কারণ সরকারি অফিসগুলোর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন (এপিএসসি) ২০২১ অনুযায়ী, দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ২৮ হাজার ১৯৩ ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৭ হাজার ৯৯টি। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর সংগঠনগুলো জানিয়েছে এ সংখ্যা ৮০ সহস্রাধিক। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তার তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫০টি।
মিরপুর আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, নিবন্ধন পাওয়ার জন্য ২০১৬ সাল থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিবন্ধনের বিষয়ে অধিদপ্তরে সাথে দেখা করতে চাইলেও দেখা করার সুযোগ পাই না। আমরা সব শর্ত পূরণ করেছি। এত বছর স্মারক পেয়েছি। এখনো প্রাথমিক অনুমতি পাইনি। ফিউচার মাউন্ড স্কুলের প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। কয়েকবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঘুরেও গেছেন। কিন্তু সবে মাত্র প্রাথমিক অনুমতি পেয়েছি। আমরা চাই, সরকারের নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হতে। যেকোনো মুদি দোকানেরও একটি লাইসেন্স বা নিবন্ধন থাকে। অথচ সব শর্ত পূরণ করেও আমরা নিবন্ধন পাচ্ছি না।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জয়নুল আবেদীন জয় বলেন, শিক্ষাকে সর্বজনীন করতে হলে নির্দিষ্ট নিয়মের আলোকে পরিচালিত হতে হবে। সে জন্য সরকারের নীতিমালা মেনে আমাদের ৩০ হাজারেরও অধিক প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এর মধ্যে স্মারক পেয়েছে ১০ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। এক প্রোগ্রামে মন্ত্রী বলেছিলেন কোনো আবেদন নাকি ওনারা পাননি। আমি ওনাকে আমাদের আবেদনগুলো দেখাতে চাইলেও পরবর্তীতে উনি দেখা করেননি। নতুন ডিজির সাথে আমরা দেখা করেছি। উনি আমাদের নিবন্ধন পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। কী কারণে নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে না তা আমরা জানি না।
নীতিমালার ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিএ) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, আগের নীতিমালায় নিবন্ধন দিতে আমাদের দীর্ঘ সময় লাগত। অনেক প্রতিষ্ঠান নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে পারতেন না। সেটিকে সংশোধন করে আমরা নতুন নীতিমালা করছি। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজেই আমরা নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারি। এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ জেলা থেকে নিবন্ধন করতে পারবে। নতুন নীতিমালা আসতে আরো দুমাস সময় লাগবে।
আমলাতান্ত্রিক অস্বচ্ছতা দূর করার কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ খান চন্দন বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন না দেয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। যেমন— নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে না পারা, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সম্পর্ক না রাখা ইত্যাদি। দ্বিতীয় কারণটি থাকা গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারি অফিসগুলোর আমলাতান্ত্রিক অস্বচ্ছতা দূর করতে হবে। সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে থাকবে। সেখানে কী কী কারণে তাদের নিবন্ধন এখনো দেয়া সম্ভব নয়। সেই কারণগুলো উল্লেখ করবে। সেটি অভিভাবক ও শিক্ষকরাও দেখতে পাবেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৭/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়