নির্বাচন ঠেকাতে এডহক সভাপতির যোগসাজশে আত্মগোপনে মাদরাসার সুপার
নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুরঃ নিশ্চিত সভাপতি পদে হেরে যাবেন জেনে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনকে বাঞ্চাল করতে এডহক কমিটির সভাপতির যোগসাজশে প্রতিষ্ঠান প্রধান আত্মগোপনে চলে যাবার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার পানবর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায়। অভিভাবক ক্যাটাগরি নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হবার পরে দুই দুইবার সভাপতি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নির্বাচনের দিন মাদরাসাটির সুপার আত্মগোপনে চলে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ পানবর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার অভিভাবক ক্যাটাগরির নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এরপর গত ৩ এপ্রিল সভাপতি নির্বাচনের জন্য দিনক্ষণ ঠিক করেন মাদরাসাটির নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আল মাসুদ, প্রিজাইডিং অফিসার ও মাদরাসাটির সুপার। পূর্ব ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী ৩ তারিখে সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটির সভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান ৩ তারিখে 'নিয়ম বহির্ভুত সভাপতি নির্বাচন' উল্লেখ করে তা স্থগিত করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, 'আইনশৃঙ্খলা অবনতি এবং নির্বাচিত তিন জন প্রতিনিধিকে নোটিশ না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার অভিযোগ তুলে ঐদিন নির্বাচন না করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে হাসানুজ্জামান উল্লেখ করেন, বিগত ২৭/০৩/২০২৩ ইং তারিখে পানবর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পর বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধান নব নির্বাচিত সকল সদস্যদের নোটিশের মাধ্যমে একটি সাধারণ সভা আহ্বান করবেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধান সদ্য নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছাঃ কুলছুম, অভিভাবক সদস্য মোঃ মুনছর আলী এবং মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি মতিয়া ইয়াছমিনকে নোটিশে না জানিয়ে একতরফাভাবে সভাপতি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বে-আইনী। সভাপতি নির্বাচন নিয়ে সদস্যদের মধ্যে ও এলাকার জনগনের মধ্যে দুইটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় নির্বাচন করলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে।'
মাদরাসাটির একাধিক শিক্ষক, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এডহক কমিটির সভাপতি হাসানুজ্জামান বুঝতে পেরেছেন যে মোট নয়জন সদস্যের মধ্যে সাত জন সদস্য তাকে বা তার বাবা (দুইজনের যে কেউ সভাপতি পদে দাঁড়াতেন) কে ভোট দেবেন না। এইজন্য যে করেই হোক এই সভাপতি নির্বাচন আটকাতে হবে এবং সময়ক্ষেপণ করতে হবে। তিনি অভিযোগে মাদরাসার সুপারের দিকে অভিযোগ আনলেও বাস্তবে তিনি সুপারের সাথে মিলেই এই অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, হাসানুজ্জামান ৩ তারিখের সভাপতি নির্বাচন বন্ধ করতে ৩ তারিখেই ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন করলেও নির্বাচন বন্ধ করেননি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ইউএনও। নির্বাচন হবে বুঝতে পেরে হাসানুজ্জামান এডহক কমিটির সদস্যসচিব ও মাদরাসাটির সুপার আবুল কালামকে সুকৌশলে আত্মগোপনে পাঠিয়ে দেন। সুপারকে খুঁজে না পেয়ে পরবর্তীতে ৫ এপ্রিল পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়। তবে গত ৫ এপ্রিল সভাপতি নির্বাচনের দিনও সভাপতি আত্মগোপনে থাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধিমালা ২০০৯ অনুযায়ী, অভিভাবক ক্যাটাগরির নির্বাচনের সাত দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সাত দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে অভিভাবক ক্যাটাগরির নির্বাচনের আর কোন মুল্য থাকবে না। পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এডহক সভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান এবং মাদরাসাটির সুপার প্রবিধানমালার এই সুযোগটিই নিয়েছে। তারা যে করেই হোক এই সভাপতি নির্বাচন সাত কার্য দিবসের মধ্যে বন্ধ করতে পারলে পুনরায় নির্বাচন করতে পারবেন। দুই দুই বার সভাপতি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও পূর্ব পরিকল্পণা অনুযায়ী মাদরাসার সুপার নির্বাচনের দুই তারিখেই আত্মগোপনে থাকেন।
এ বিষয়ে মাদরাসাটির সুপার আবুল কালামের মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় এবং বর্তমান রোজার ছুটিতে মাদরাসাটি বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সভাপতি নির্বাচন এখন আর নিয়ম মাফিক করা যাবে না এবং পুনরায় অভিভাবক নির্বাচন করতে হবে মর্মে স্থানীয় একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচনের ৭ দিনের মধ্যে সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। স্থগিত হওয়ার কারণে বিধি মোতাবেক পুনরায় অভিভাবক সদস্য নির্বাচন করতে হবে। পূর্বের নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যদের ভোটে সভাপতি নির্বাচন বিধি মোতাবেক রইল না। নতুন করে পুনরায় অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করতে হবে।
জানতে চাইলে নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ঝিনাইগাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাথে কথা বলেন বিষয়টি তিনি ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইগাতি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও পানবর ইসলামিয়া দাখিলা মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মোস্তফা কামাল মুঠোফোনে শিক্ষাবার্তা'র পক্ষ থেকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদ বলেন, অনেক সময় প্রবিধানমালার এই সুবিধাটা অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়ে থাকেন। সভাপতি নির্বাচনে সাত দিনের মধ্যে করতে হবে এই বাধ্যবয়াধকতা থাকায় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করেন। এ বিষয়ে বোর্ডে যদি কোন প্রতিনিধি যদি লিখিত অভিযোগ করে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়