শিশুরা রোজা রাখার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম রোজা থেকে বন্ধ চাই
মমতাজ বেগম।।
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরো রমজান মাস ছুটি প্রবর্তন করেছিলেন।প্রধানমন্ত্রীর প্রবর্তিত সেই রেওয়াজ অনুসারে প্রতিবছর রমজান মাসে সকল ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরো রমজানে বন্ধ থাকে।এ মাসে শিক্ষার্থীরা রোজা রাখার পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদ-মাদ্রাসায় কোরআন ও নামাজ শিখে।তাছাড়া এমাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে বলে অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের নিয়ে বাড়তি কোন চাপ অনুভব করেনা।প্রতি বছরের রেওয়াজ অনুসারে এবছরেও সকল হাইস্কুল,কলেজ,মাদ্রাসার বার্ষিক ছুটির তালিকায় রমজানের শুরু থেকে পুরো রমজান মাস শিক্ষার্থীদের জন্য বন্ধ ঘোষণার উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রবর্তিত রেওয়াজ উপেক্ষা করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রমজান মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা প্রাথমিক শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন কোমলমতী,তাদের ছুটি সবচেয়ে প্রয়োজন বেশী।এজন্য জাতীয় শিক্ষাক্রমের প্রাথমিক স্তরে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার চাপ থেকে সরাতে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে ৭৬ দিন বার্ষিক ছুটি নির্ধারণ করেছেন।
কিন্তু অন্যসব বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করলেও বার্ষিক ছুটির ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষাক্রম নির্ধারিত ৭৬ দিন বার্ষিক ছুটি নির্ধারণ না করে নিজেদের মনমতো ৫৪ দিন নির্ধারণ করেছেন।অথচ হাইস্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা বার্ষিক ছুটির ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে ৭৬ দিন বার্ষিক ছুটি নির্ধারণ করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জাতীয় শিক্ষাক্রম নির্ধারিত ৭৬দিন বার্ষিক ছুটি অনুসরণ না করে বরং ছুটির সংখ্যা কমিয়ে পবিত্র রমজান মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোমলমতী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে হঠকারিতা করেছেন যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যেও ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে।
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাইস্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা এমনকি প্রাইমারি লেভেলের ইবতেদায়ী মাদ্রাসা যদি বন্ধ থাকে তাহলে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক?
তাই প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাশাপাশি আমরা প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় পুরো রমজান মাস প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা চাই।আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে আসন্ন রমজান মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
আসন্ন রমজানে পুরো মাসজুড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে বেশ সরব তারা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত দাবি জানান শিক্ষকেরা। তবে মন্ত্রণালয়ের আপাতত এ ধরনের কোনও চিন্তাভাবনা নেই বলে জানা গেছে।
শিক্ষকেরা বলছেন, আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৪দিন ছুটি পাওয়া যেত। কিন্তু সেটি কমিয়ে ৫৪ দিন করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষকেরা বাড়তি ১৫দিন ছুটি পেতেন। কিন্তু সেটিও এখন পাচ্ছেন না। এ কারণে রমজানে ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তারা আরও বলছেন, রমজানের ছুটি শিক্ষার্থীদের জন্যও সহায়ক। কারণ এ সময়ে বাড়িতে সবাই ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকে। আর তারা ক্লাসে থাকবে। এতে তাদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া তীব্র রোদ ও গরমে সবার জন্য ক্লাস করা কষ্ট হবে। সব বিবেচনায় প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. বদরুল আলম মুকুল বলেন, আমাদের ছুটি কমানো হয়েছে। সামনে গরমে ক্লাস করাও কষ্টকর হবে শিশুদের জন্য। এ কারণে রমজানে ছুটি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই মন্ত্রণালয়ে দেবেন চিঠিটি।
একই ধরনের কথা বলেন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক সমাজের সভাপতি মোহাম্মদ আনিসুর রহমান। তিনিও রমজানে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আবু ইউসুফ ভুঞা বলেন, রমজানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি দেওয়া নিয়ে এখনো কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কোনও আলোচনাও করা হয়নি। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই রমজানে ক্লাস চলবে। তবে সকল শিক্ষক মনে করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসাথে বন্ধ করে সকলকে সিয়াম সাধনা করার সুযোগ দিবেন।
লেখক- সহকারী শিক্ষক।