ঋণের টাকায় মুজিব বর্ষে শিক্ষকদের ঈদ উৎসব
ফিরোজ আলম:
১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয় সরকার ।পরবর্তীতে তা ৩১ শে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়।মুজিব বর্ষে মোট ২৯৩টি কর্মসূচির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার৷শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা,রাস্তাঘাট মেরামত করা,বাঙ্গালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ উপহার স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ শেষ করা,করোনার টিকা সরবরাহ করাসহ অসংখ্য উল্লেখ করার মত কাজ দুশ্যমান হয়েছে ।কিন্তু একটি জায়গায় মুজিব বর্ষ গুরুত্ব হারিয়েছে। তা হল মুজিব বর্ষে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের শ্লোগান ছিল- "মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার,শিক্ষা সবার অধিকার,"শ্লোগানটির বাস্তবায়নকারীদের অধিকার নষ্ট করা।মুজিব বর্ষের চারটি ঈদ উৎসবের তিনটিতেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ঈদের আগে বেতন পাননি।এবছরের ঈদ উল ফিতরের বেতন তোলার শেষ দিন ছিল ব্যাংক বন্ধ।
অন্যদিকে আসন্ন ঈদ উল আযহায় স্কুল- কলেজ শিক্ষকদের বেতন তোলার শেষ তারিখ ৭ ই জুলাই ২০২২। জমিদার বহু সভাপতি এবং অযোগ্য ও তোষামোদে নিয়োগপ্রাপ্ত বহু প্রতিষ্ঠান প্রধানের কারনে বিল পেপারে স্বাক্ষর ই হবেনা ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে।অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন তো এখন পর্যন্ত ছাড় ই হয় নাই।৮ ই জুলাই থেকে ব্যাংক বন্ধ।মানে হল আসন্ন ঈদ উল আযহা তে ও শিক্ষকরা বেতন পাবেন না।কোরবানি দেওয়ার জন্য ঋণ ছাড়া আর কোন পথ ই ৯০ শতাংশ শিক্ষকদের জন্য খোলা থাকল না। অন্যদিকে আপত্তিকর চার আনা তথা ২৫ শতাংশ লোক দেখানো উৎসব ভাতা চোখের কোণে জল এসে আবার ফিরিয়ে যায়,গানটিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বারংবার। এটি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি রাষ্ট্রের চরম বৈষম্য ,অবহেলা ও উদাসীনতার পরিচয় বহন করে নিশ্চয়।
চারদলীয় জোট সরকারের অনৈতিক কত কিছুইতো বর্তমান সরকার মুছে ফেলেছে,২৫% উৎসবভাতা ধরে রেখে কেন আবার গোটা জাতিকে লজ্জায় ফেলেছে? শিক্ষকদের শোষন থেকে বিরত থাকুন,তাদের সন্মানের সাথে বাঁচতে দিন।মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বার বার সরকারের সামর্থ্যের দোহাই দিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শতভাগ উৎসব ভাতার দাবিকে যেমনি প্রশ্নবিদ্ধ করছেন কিংবা সরকার ও শিক্ষক সমাজকে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন, অন্যদিকে শিক্ষক অধিকারের প্রশ্নে সমস্যা সমাধানে নিজের দক্ষতা প্রয়োগের কথা ভুলে গিয়ে শিক্ষকদের স্বপ্নে লালিত শতভাগ উৎসব ভাতার দাবীকে বুট জুতোয় থেথলে দিয়েছেন ।তাঁর কথা মেনে নিলে বোঝায়, সরকার কী করে শত ভাগ বোনাস দেবে?
ঠিক আছে যুক্তির খাতিরে মানলাম সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি চরম নাজুক।কিন্তু যেদেশে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মান শেষ হল,মেট্রোরেল প্রক্ল্প প্রায় শেষের পথে ,দেশের অর্থ প্রাচার হয়ে সুইস ব্যাংক ধনী হয়ে যায়, এক কোটি লোকের প্রনোদনামূলক বাজার ব্যবস্থাপনা হয়,প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি হয়, ব্যাংকের রিজার্ভ তিন লাখ ৭৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা হয়,বাজেট অনুযায়ী মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর প্রতি দিনের অফিস খরচ ১০ কোটি টাকার বেশি হয়,দেশের টাকা কালো হয়ে আবার সাদা হয়,অভিজাত কিংবা একটি বিশেষ গোষ্ঠী আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে বিদেশে বেগম পাড়া তৈরি করে,মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু ভাতা শিক্ষকদের থেকে বেশি হয়,আমলাদের ড্রাইভারের কিংবা প্রাইমারি স্কুলের পিয়নের বেতন এমপিওভুক্ত শিক্ষক থেকে বেশি হয়,সরকারি শিক্ষকদের উৎসব ভাতা শতভাগ হয়। সেদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদান কি অসম্ভব কিছু?
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদান করলে কি দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে?এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মা-বাবা, পরিবার পরিজন নিয়ে একটু উৎসবে ঈদ কাটানোর চিন্তাকে বিবেকহীন কেউ যদি মনে করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দিলে অর্থের অপচয় হবে তাদের জন্য বলবো বাংলাদেশ ব্যাংক কেলেংকারি,শেয়ার বাজার কেলেংকারি, ডেসটিনি কেলেংকারি, হলমার্ক কেলেংকারি,রেল কেলেংকারি,বিমানের হাজার কোটি টাকা লোকসান,পদ্মা সেতুর বিলম্ব লোকসান ইত্যাদি সব কেলেংকারিতে কি দেশের হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়নি?কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ করে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে উক্ত লোকসান গৌরবের ও বটে।এদেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে সব পেশার লোকেরাই ঈদের আগে বেতন ভাতা পান একমাত্র শিক্ষক ছাড়া।২০২১ সালের একটি ঈদ উৎসব এবং ২০২২ সালের দুটি ঈদ উৎসব ছিল শিক্ষকদের কর্জের টাকার লোক দেখানো ঈদউৎসব।
মানে হল রাষ্ট্র শিক্ষকদের উৎসবে প্রধান বাধা।একদিকে চার আনা উৎসব ভাতা দিয়ে শিক্ষকদের কলংকিত করেন,অন্যদিকে ঈদের আগে বেতন না দিয়ে শিক্ষকদের অপমানের ষোলকলা পূর্ণ করেন।যার ফলে শিক্ষক সমাজ অবহলিত হয় সমাজ,রাষ্ট্রের সর্বত্রই।এমনকি ছাত্র- ছাত্রীর কাছেও।তাইতো জনৈক স্কুল শিক্ষকের মেয়ে পিতাকে কুরবানি দেওয়ার কথা বলতেই শিক্ষক বাবা মেয়ের কথা ঘুরিয়ে দিয়ে গনিত চর্চায় মনোযোগী হোন।
বলতো মা, একজন শ্রমিকের প্রতিদিনের আয় ৬০০ টাকা হলে মাসে কত হয়?মেধাবী মেয়ে উত্তরে বলে দিলেন আঠার হাজার টাকা।শিক্ষক বাবা বলে উঠলেন আমার বেতন পনের হাজার টাকা থেকে ও কম।বিস্মিত হয়ে কান্নারত মেয়ে শিক্ষক বাবার নিন্মগামী চোখ থেকে খসে পড়া জল মুচে দিয়ে
গনিত চর্চায় নিজেকে মনোনিবেশ করালেন।মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মান সম্মত শিক্ষক প্রয়োজন।মান সম্মত শিক্ষক নিশ্চিত করতে মান সম্মত আর্থিক নিরাপত্তা কি খুব নিষ্প্রয়োজন?এভাবে চলতে থাকলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হয়ত শিক্ষক নামক শব্দটিকে অচিরেই খুঁজতে হবে যাদুঘরে।
লেখক ও কলামিস্ট-
ফিরোজ আলম,বিভাগীয় প্রধান(অনার্স,এম এ শাখা)।
আয়েশা( রা:) মহিলা কামিল(অনার্স,এম.এ) মাদ্রাসা,সদর,লক্ষীপুর।