শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৪

ড. সুলতান মাহমুদঃ দেড় যুগ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। এই সুবাদে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেমন শিক্ষকদের সম্মান করেন, ঠিক তেমনি শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদের¯স্নেহ করেন। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে থাকে।

শিক্ষকদের অনেকেই যেমন তাঁদের দায়দায়িত্বের যথাযথ জায়গায় থাকেন না। আবার অনেক শিক্ষার্থী যথাযথ দায়িত্ব এবং ভূমিকা না রেখে অন্যায় ও অপকর্মে যুক্ত হন। এবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরে বেশ কিছু শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর ঘটনা ঘটেছে। ইতিপূর্বে এভাবে ঢালাও পদত্যাগের নজির আমরা কেউই দেখিনি।

তবে এবার যেসব শিক্ষককে পদত্যাগ করতে জোর করা হয়েছে বা পদত্যাগ করানো হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই নিজেদের নৈতিক অবস্থান থেকে সরে গিয়েছিলেন—এমন অভিযোগেই হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি দেখা গেছে, সেটি হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকের আচরণ, নৈতিকতা এবং একাডেমিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোনো ক্ষেত্রে বেশ কিছু সত্য ঘটনা সাধারণদের কাছে উন্মোচন করা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু ঘটনাও দেখা গেছে।

বিগত ১৫ বছরে লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের দ্বারা অসংখ্য নিরীহ এবং সৎ শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। কোনো ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে কর্মরত শিক্ষকেরা মুখ বুজে সহ্য করেছেন নির্যাতন।

প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি শিক্ষকেরা অন্ততপক্ষে মেধার ভিত্তিতে ছাত্রদের আবাসিক হলে আসন বরাদ্দের মতো ন্যায্য কাজটিও করতে পারেননি। আবার এমন গুরুত্বপূর্ণ এবং ন্যায্য কাজ করতে না পারার পরিবেশ বা চাটুকারিতা নিজেরাই তৈরি করেছেন। কারণ, ১৫ বছরে আমি শুনিনি দু-একজন ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। উপাচার্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক-কর্মকর্তাকে চাকরিও দিতে পারেননি।

দলীয় ক্যাডার শিক্ষক এবং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ হয়েছে অনেক। যে উপাচার্যকে যোগদানের সময় ঢাকঢোল পিটিয়ে ফুলের মালা বা ডালা দিয়ে বরণ করা হয়েছে, সেই একই উপাচার্যের বিদায়ের সময় দেখা গেছে পাঁচজন ব্যক্তিও তাঁর পাশে নেই। এমনকি এমন ফুলের মালাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেকেরই মৃত্যুবরণের পর জানাজার সময়ও খুব কম লোককেই দেখা গেছে।

বেশ কয়েক বছর আগে ক্লাসে উপস্থিতি না থাকায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে ছাত্রলীগের নেতারা রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটরে অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলে দিয়েছিলেন। এমন লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় আমি তখন মোটেও অবাক হইনি। কারণ, শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনা তখন প্রায়ই ঘটতে দেখতাম। কিন্তু ওই সব নির্যাতনকারী শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শাস্তি হতে দেখেছি খুব কমই। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কর্তৃক পুরস্কৃত হতে দেখেছি। এ প্রসঙ্গে আমি নিজে একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই।

বেশ কয়েক বছর আগে আমার বিভাগেরই স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কক্ষে আমরা দুজন শিক্ষক দায়িত্বরত ছিলাম। এ সময় একজন (ছাত্রলীগ নেতা) পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার কক্ষে মুঠোফোনে কথা বলতে না দেওয়ায় ওই পরীক্ষার্থী অন্য সব পরীক্ষার্থীর সামনেই আমাদের সঙ্গে অসদাচরণ করে।

পরীক্ষার কক্ষে সংঘটিত আচরণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি একটি প্রতিবেদন পাঠাই। এরপর ‘ডিসিপ্লিন কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ওই শিক্ষার্থীকে পরবর্তী আরও দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরপর তিন বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী তার ছাত্রত্ব থাকে না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী এবং কতিপয় শিক্ষক তদবির করলে, তা আমলে নিয়ে বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষার কক্ষে শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা ওই শিক্ষার্থীর শাস্তি কমিয়ে তাকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, একজন শিক্ষার্থীœস্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তির পর তিনটি একাডেমিক সেশনের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। এর অর্থ পরিষ্কার যে তিনটি একাডেমিক সেশনের পর কোনোভাবেই তিনি আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। অথচ ওই শিক্ষার্থী শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা অসদাচরণের পরও পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে তার শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়। লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থী কর্তৃক অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত হবেন, শিক্ষক লাঞ্ছিত হবেন—এমন বিষয়ে উদ্বেগ কিংবা উৎকণ্ঠিত হওয়ার কিছু ছিল না। এটি খুব ন্যায্য ও স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছিল।

ইতিপূর্বে দেখেছি, দলীয় লেজুড়বৃত্তির ফলে শিক্ষকেরা যাঁরা প্রশাসনের পদে গিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের মনমতো যা ইচ্ছা তা–ই করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মতো অভিযোগ স্পষ্টভাবে থাকা সত্ত্বেও দলীয় লেজুড়বৃত্তির কারণে ওই সব প্রশাসনিক পদধারী শিক্ষক কোনো শাস্তির আওতায় আসেননি। এখনো শঙ্কা রয়েছে যে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে কি না। বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেন কিংবা নারী কেলেঙ্কারির মতো ভয়াবহ অনৈতিকতার যেসব অভিযোগ আমাদের সামনে এসেছে, সেগুলোর কি যথাযথ তদন্ত ও বিচার প্রত্যাশা করতে পারি?

বাংলাদেশে যাঁদের নীতি-নৈতিকতায় সমস্যা রয়েছে, তাঁরাই যেকোনোভাবে শক্তিশালী। এবারের উদ্ভূত পরিস্থিতিতেও আমরা সেটি লক্ষ করেছি। অনেকেই দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে এখন নিরপেক্ষ সেজে পদ ছাড়েননি কিংবা পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ১২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমরা সবাই যোগ্য মানুষ চাচ্ছি, তবে যোগ্য মানুষটি আমার দলের হতে হবে। অনেকে আবার নিরপেক্ষ চাচ্ছেন। তবে নিরপেক্ষটি একটু আমার পক্ষে হতে হবে। বেশ ইন্টারেস্টিং একটা সময়।’ তাঁর এই বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে যে অনেকেই নিরপেক্ষ সাজছেন পদ নেওয়ার জন্য। আবার নিরপেক্ষতার ভাঁজে পক্ষপাতিত্বও খুঁজছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো অনেকেই আছেন, যাঁরা বিগত সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেই পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন। আবার এখন বিভিন্ন অজুহাতে রাতারাতি দলীয় নিরপেক্ষ হয়েছেন। অথচ তাঁরাই লেজুড়বৃত্তির ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির কাছে মাথা নত করে পদ বাগিয়ে নিয়ে গোটা পরিবেশকে কলুষিত করতে কার্পণ্য করেননি। এখন তাহলে কীভাবে তাঁদের কাছে ভালো কিছু আসা করতে পারি! সুযোগ পেলে যেমন তাঁরা নিরপেক্ষ সাজেন, আবার তাঁরাই পদ আঁকড়ে থাকার জন্য অন্যায়কে সমর্থন করেছেন। তাহলে কি তাঁরা আর অন্যায় করবেন না?

লেখকঃ অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

মোহাম্মদ আলীঃ বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) প্রতিষ্ঠা করে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষক বাছাই করে আসছে। শিক্ষক নিয়োগে কমিটির দুর্নীতি হওয়ায় এনটিআরসিএ সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ শুরু করে।

এ পর্যন্ত ৫টি গণবিজ্ঞপ্তি ও একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। যা চাকরি প্রত্যাশীদের ব্যাপক প্রশংসা পায়।

কিন্তু জাতীয় মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়ার কারণে অনেকের নিজ জেলা বা জেলার আশে-পাশে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত হতে পারেন নাই। অনেকেই বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে দূরবর্তী প্রতিষ্ঠান পছন্দক্রমে রাখতে বাধ্য হয়। কিন্তু, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন অত্যন্ত কম।

একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন সাকল্যে ১৩,৫০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে কোথাও বাড়ি ভাড়া করে পরিবার নিয়ে জীবন-যাপন করা অসম্ভব। তাই, কর্তৃপক্ষের নিকট বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিজ জেলায় বদলির ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

লেখকঃ প্রভাষক

মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের জন্য পূর্ণাঙ্গ উৎসব বোনাস ও সরকারি নিয়মে বাড়িভাড়া দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে আয়োজিত এক সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়। সভা থেকে আগামী ৮-১৭ অক্টোবরের মধ্যে জেলা প্রশাসক কিংবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতনভাতা বৈষম্যের শিকার। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাড়িভাড়া পাচ্ছেন কেবল ১ হাজার টাকা, উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা। যা নিতান্তই পরিহাসের। এ ধরনের অপনীতি শিক্ষকবিরোধীই নই, শিক্ষাবিরোধীও বটে। প্রতিবছর বাজেট উপস্থাপন দেখলে এ দেশকে গরিব বলার কোনো কারণ নেই। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। অথচ শিক্ষকদেরকে বলা হয় জাতি গড়ার কারিগর। এটা মুখরোচক বুলি ছাড়া আর কিছুই না। দুঃখজনক হলেও বলতে হয় ৯৬ হাজার শূন্যপদের বিপরীতে কেবল আবেদনকারী ২৪ হাজার। এত বেকারত্বের মধ্যেও শিক্ষিত বেকাররা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইছেন না। তার কারণ বেতন বৈষম্য, সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার অভাব।

তিনি বলেন, বিগত সরকারগুলো এসব সমস্যা-সমাধানে আন্তরিক ছিল না। আমরা মনে করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে শিক্ষকদের জীবন-জীবিকা, মর্যাদার বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষ্যে বেতন-ভাতা বৈষম্য দূর করে শিক্ষাব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করে একটি টেকসই জাতি গড়ে তুলবেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. নূরে আলম বিপ্লব বলেন, শিক্ষকরা এখনও নাজেহাল হচ্ছেন, বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা, যা খুবই হতাশাজনক। এটা এখনই বন্ধ করতে হবে। সাধারণ শিক্ষকরা যুগ যুগ ধরে নির্যাতন হওয়ার ধারাবাহিকতাও এ নির্যাতনের একটা মাত্রা। এ নির্যাতন শুরু হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠান প্রধান থেকে ম্যানেজিং কমিটি পর্যন্ত। ফলে ম্যানেজিং কমিটির অরাজকতা মেনে নেওয়া যাবে না, এ প্রথা বাতিল করতে হবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইয়াছিন, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অমৃত কারণ, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আমির হোসেন, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার সভাপতি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক আসমান আলী প্রমুখ।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

তানজিদ শাহ জালাল ইমন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকঃ গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যরা পদত্যাগ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জাlমান ভূঁইয়া।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একে একে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপাচার্য পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কার্যক্রম সচল রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২রা সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েরও আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন।

শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কেমন উপাচার্য চান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা- তা জানতে চেয়েছেন শিক্ষাবার্তার ববি প্রতিবেদক তানজিদ শাহ জালাল ইমন।

২০১২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তুলনামূলক নবীন বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু,একই সাথে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগিয়ে রয়েছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতায় বিশ্বের দরবারে তাদের সক্ষমতার পরিচয় দিলেও শিক্ষা, সহশিক্ষা,গবেষণার সুযোগ ও প্রয়োজনীয় সুবিধা পাচ্ছে না। অপ্রতুল এই সুবিধার ইতি টেনে শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের একজন প্রকৃত শিক্ষক আমাদের অভিভাবক হয়ে আসুক এমনটিই আমাদের চাওয়া।

সাদিয়া আফরোজ বৃষ্টি, ইতিহাস বিভাগ,
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে এমন একজন কে আমরা চাই, যার প্রধান উদ্দেশ্য হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংকট কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নতি করা। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে , যার মধ্যে ক্লাসরুম সংকট, শিক্ষক সংকট অন্যতম। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কে শিক্ষা ও গবেষণা জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা ও কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস সাথে সার্বক্ষণিক যুক্ত করবেন। সেই সাথে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের কে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক কর্মকাণ্ডের থেকে বিরত রেখে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে এমন একজন অবিভাবক আমরা চাই।

মো: হাসিবুর রহমান হাসিব,রসায়ন বিভাগ
২০১৮-২০১৯ সেশন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা চাওয়া এমন একজন উপাচার্য আসুক যিনি দক্ষ,যোগ্য, সৎ,শিক্ষার্থী বান্ধব এবং ব্যক্তিত্ববান হবেন।এর ফলে তিনি বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতি, শিক্ষা,সংস্কৃতি এবং গবেষণার চিন্তাধারাই অবগত থেকে শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে ক্যাম্পাসকে শিক্ষা,গবেষণা এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কার্যক্রম মুখী করে তুলবে।যার ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কে মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে রুপান্তর করতে সক্ষম হবে।

শাহারিয়ার আলম,একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস,২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি হয়ে দাড়িয়েছে। আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি একাডেমিক ভবনের অভাব পূরণ এবং আবাসিক হল বৃদ্ধি ও পরিবহন সংকট কাটিয়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনরে দাবি। সেই সাথে সেশনজট সমস্যা এবং নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশা এমন একজন শিক্ষার্থী বান্ধব উপাচার্য আসুক যিনি কথা নয় তার অমীয় কাজের মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর করবেন।

নওরীন নূর তিশা, দর্শন বিভাগ,
২০১৯-২০ সেশন।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

জামাল উদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দ্রুত সময়ের মধ্যে সৎ, যোগ্য ও বিশ্বমানের উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিলটি শুরু করে তারা।

মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই জায়গায় এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘রেকর্ড দেখে ভিসি দিন দুর্নীতির খবর নিন, ক্লিন ইমেজের ভিসি চাই, ‘ক্লাস চাই পরীক্ষা চাই অবিলম্বে ভিসি চাই’, একাডেমিক স্থবিরতা দূর করতে যোগ্য ভিসি চাই, ‘ভিসি চাই এমন, শিক্ষার্থীর ব্যাথায় কাদে যার মন’ বিশ্বমানের ভিসি চাই, সেশনজটের কবর চাই, ইবির আঙিনায় দুর্নীতির ঠাই নাই, সৎ ও সাহসী ভিসি চাই’সহ বিভিন্ন প্লাকার্ড ধারণ করতে দেখা যায়।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্দেশ্য থেকে ছিটকে পড়েছে। এই পর্যন্ত আমরা ১৩ জন উপাচার্যের মধ্যে ১ জনও পাইনি যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যর সাথে যুক্ত ছিল। আমরা বিগত ১৫ বছরে দলীয় লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ দিতে দেখেছি। ইতোমধ্যে আমরা সেই লেজুড়বৃত্তিক প্রশাসনকে হটিয়েছি। এমন প্রশাসন আমরা আর চাই না। আমরা নিরপেক্ষ, সৎ, দক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব, একাডেমিশিয়ান প্রশাসন চাই।

এ সময় বক্তারা আরও বলেন, আমরা এমন উপাচার্য চাই না, যে দিনে দুর্নীতি করবে, রাতে মাদকের আসর বসাবে। এমনকি ক্যাম্পাসে রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে এমন কোন উপাচার্য চাইনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগকে রাজনীতি ও সেশনজট মুক্ত করবে, এমন উপাচার্য চাই।

তারা আরোও বলেন, বিগত সময়ে ইবি, ঢাবি, রাবিসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও ছাত্রলীগের মদদপুষ্ট হয়ে বিভিন্নভাবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। এখনও কেউ কেউ সেই লেজুড়বৃত্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এমন দুর্নীতির রেকর্ড যাদের আছে, তাদের আমরা উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই না।

বৈষমবিরোধী আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পর অনেক উপাচার্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ তারা লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে উপাচার্য হয়েছেন। তাই আমরা এমন কাউকে উপাচার্য চাই না, যাকে আবার দুর্নীতির অভিযুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগ করতে হয়।

সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, বিগত ১৫ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। সাধারণ মিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিলো না। সেই স্বৈরাচার সরকরের পতনের সাথে সাথে তাদেরও পতন হয়েছে। এখন আবার সেই আখড়া তৈরি করার চেষ্টা কেউ করবেন না। ছাত্রসমাজ তা মানবে না।

এছাড়াও বলেন, ইতিমধ্যে ঢাবি, রাবি ও জবি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, নীলফামারীঃ জেলার পঞ্চপুকুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জুয়েলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবী করেছেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস বরাবর গত ২৫আগষ্ট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ সুত্র জানায়, এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত ৮০০ টাকা, প্রবেশ পত্র উত্তোলনে ৩’শ টাকা, প্রশংসা পত্র উত্তোলনে ৫’শ টাকা এবং মুল সার্টিফিকেট উত্তোলনের সময় ক্ষেত্র বিশেষে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকেন অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান।

এছাড়াও সরকারী কয়েকটি বরাদ্দের দশ লাখ টাকা উত্তোলন করে নামমাত্র কাজ করে অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষার্থীদের সরকারী বরাদ্দের ভর্তুকি বাবদ গেল ২০বছরে প্রায় ২৫লাখ টাকা এবং জেএসসি পাশের প্রত্যয়ন পত্র বাবদ গেল ২০বছরে প্রায় ৫লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

নীলফামারী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদকে গভর্নিং বডির সভাপতি বানিয়ে নিজের ইচ্ছেমত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তিনি। সভাপতির প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করে প্রায় দেড় কোটি টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবু সাঈদ অভিযোগ করে বলেন, অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জুয়েলের কারণে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। একক ক্ষমতা বলে প্রতিষ্ঠান পরিচালণা করছেন। প্রতিষ্ঠানে ঠিকমত আসেন না। ৬/৭দিন পর আসলেও এক থেকে দেড় ঘন্টা থেকে সই-স্বাক্ষর করে চলে যান। আমরা দুর্নীতিবাজ এই অধ্যক্ষের শাস্তি ও অপসারণ চাই। তিনি থাকলে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুন্ন হবে।

পঞ্চপুকুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, তিনি অবৈধ ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন ১৯৯৫সালে। এনিয়ে তদন্তও হয়েছে। গভর্নিং বডিতে ৫/৬বার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিকে বিধি বর্হিভুত ভাবে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বানানো হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিলো অনিয়ম ও দুর্নীতি করা।

এদিকে অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির শাস্তি এবং তার অপসারণ চেয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-শিক্ষক-এলাকাবাসী আন্দোলন কর্মসুচিতে নেমেছেন। গেল ২৫আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসুচি ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। এরফলে ২১দিন থেকে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থা নিরসনে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকবৃন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গভর্নিং বডির সভাপতিকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে পঞ্চপুকুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জুয়েল জানান, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে এসব করা হচ্ছে। ফরম পূরন, প্রত্যয়ন পত্র, নম্বর পত্র, মার্কশিট কিংবা সনদ পত্র শিক্ষার্থীদের আমি সরবরাহ করি না। অফিসের সংশ্লিষ্ঠ কর্মচারীরা এটা করে থাকেন। মুলত প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক আমার পদে আসতে চান তার ইন্ধনে এসব করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল হক জানান, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন আসলে বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

রংপুরঃ আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এ সময়ে উপচার্য নিয়োগ না হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তাঁরা।

শনিবার (১৪ই সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামানে দ্রুততর সময়ের মধ্যে ভিসি নিয়োগের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, আবু সাঈদের এই আন্দোলনের প্রথম বিপ্লবী শহীদ।

আমরা ভেবেছিলাম, সর্বপ্রথম আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা উত্তরাঞ্চল প্রতিবারের মতোই অবহেলিত। এখনো তাই হচ্ছে। সেটা কেন? আমাদের শিক্ষার্থীরা সব সময়ই কি অবহেলিত থাকবে? এখন বলতে চাই, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক।

এই সময় শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ার দিয়ে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া না হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করা দেওয়া হবে। এর পরও নিয়োগ দেওয়া না হলে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবান্ধব একজন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক।

এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ভিসি নিয়োগ চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে আলটিমেটাম দিয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

তবে পাঁচ কর্মদিবস অতিবাহিত হলেও কাউকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, হবিগঞ্জঃ বাংলাদেশে শুধু ব্যাংক লুট হয়নি, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাও লুট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম আমানুল্লাহ।

তিনি বলেছেন, বর্তমান শিক্ষা মানসম্মতের ধারে কাছেও নেই। বিগত সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় হয়েছে। উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের ১৮ দিনে কমপক্ষে ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি। যেভাবে শুরু করেছি আগামী এক বছরে ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারব।

শুক্রবার রাতে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, “আমাদের দেশের ছাত্ররা যে শিক্ষা নিয়ে বিদেশে গিয়ে ২০ হাজার টাকা বেতন পায়। একই লেখাপড়া করে শ্রীলঙ্কার একজন ছাত্র বেতন পায় লাখ টাকা।

এই তামাশা চলছে বিগত ৫২ বছর ধরে।”

তিনি বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় এক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। বছরে প্রায় এক কোটি সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। কিসের সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে, কী লেখাপড়া হচ্ছে একমাত্র আল্লাহই জানেন। এর ভেতর দিয়েই আমাকে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ্য দিয়ে সময় কাটাতে হচ্ছে। শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনা যায় কি-না আমরা চেষ্টা করছি। যদিও ইতোমধ্যেই অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তারপরও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মত শিক্ষা যদি শতকরা ২৫ ভাগ ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলেও দেশের অনেক উপকার হবে। ”

ড. আমানুল্লাহ আক্ষেপ করে বলেন, “রাজনৈতিক কারণে বিগত সরকারের আমলে ৯৮৮ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। আদালতের আদেশের মাধ্যমে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।”

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আড়াই হাজার কলেজের গভর্নিংবডি বাতিল করা হয়েছে। সমাজের উচ্চ থেকে নিম্ন পর্যায়ের মানুষ গভর্নিংবডির সভাপতি হতে চান। এতে কী মধু আছে জানি না। শিক্ষার মান উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি যাতে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এজন্য তিনি সবার দোয়া কামনা করেন।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

কুমিল্লাঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত মো. সাব্বির (১৭) মারা গেছেন গেছেন।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। সাব্বির দেবিদ্বার পৌর এলাকার দক্ষিণ ভিংলাবাড়ি গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলমগীর মিয়ার ছেলে।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় ছাত্রজনতা আনন্দ মিছিল করে। এক পর্যায়ে কিছু দুষ্কৃতকারী থানা ও পুলিশের ওপর হামলা করে। এ সময়পুলিশ গুলি চালালে সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৬০ জন আহত হন। ওই সময় সাব্বিরের মাথায় গুলিবিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য সাব্বিরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওইখানে এক মাসেরও বেশি সময় চিকিৎসা শেষে গতকাল সেপ্টেম্বর সাব্বির বাড়িতে ফিরেন আসেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার একদিন পরই শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় সাব্বির মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সাব্বিরের মা রিনা বেগম বলেন, ‘এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে গতকাল সন্তানকে নিয়ে বাড়ি আসি। কিন্তু সকালে সাব্বির মারা যায়। গত দুই বছর আগে সাব্বিরের বাবা মারা যাওয়ায় তার আর লেখাপড়া করা হয় নাই। সাব্বির সিএনজি চালিয়ে সংসারের খবর যোগাত।

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মরদেহ দাফন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ আবারো পরীক্ষা ব্যবস্থা ফিরছে গ্রেডিং পদ্ধতি আর ৩ ঘণ্টা সময়সীমার যুগে। এসএসসি ও সমমান পর্যায়ে ফিরছে বিভাগ বিভাজনও। আর জাতীয় শিক্ষাক্রম ফিরছে ২০১২ সালের সৃজনশীল পদ্ধতিতে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, ২০২১ এর শিক্ষাক্রম ত্রুটিপূর্ণ বিধায় ফেরা হচ্ছে ২০১২ এর শিক্ষাক্রমে। যুগ বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাক্রমও ঢেলে সাজানো প্রয়োজন বলে বলছেন শিক্ষা গবেষকরা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়্যারম্যান ডা. একে এম রিয়াজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এ বছর যে কারিকুলাম চালু আছে, তার ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সেটা নিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এখন অনেক সমালোচনা। এমনকি শিক্ষকরা যারা এতদিন মুখ খুলেন নাই, তারাও এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কথা বলছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস সালাম গণমাধ্যমকে  বলেন, সার্বক্ষণিকভাবে, যুগের প্রয়োজনে, মানুষের চাহিদার প্রয়োজনে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিবর্তন-পরিমার্জন সংস্কার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা উচিত। পুরনোটি বন্ধ করা, নতুন চালু করা, নতুন বন্ধ করা পুরনোটি চালু করা সেটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর সাড়ে ৩ মাস সময় বাকি। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি ও টেন্ডার প্রক্রিয়া। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, মে-জুনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রুফ রিডিং করা হয়। তবে এবার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চলতি মাসের শুরুতে আসে বই সংশোধনের ঘোষণা। আগামী শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে কী কী সংশোধন ও পরিমার্জন করা যায়, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এ বছর স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীর জন্য ৩৪ কোটি বিনামূল্যের বই ছাপানোর কথা। মুদ্রণসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের মতো টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে বছরের শুরুতে কিছু বই পৌঁছানো সম্ভব হলেও সব বই ছাপা শেষ হতে মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে।

বিগত সরকারের আমলে এনসিটিবির কিছু অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে নিম্নমানের মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপানোর কাজ দেওয়া হতো। এতে বইয়ের মান ও ছাপা নিয়ে বেশ বিতর্ক ওঠে। এবারও এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান বিতর্কিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছেন। এর মধ্যে অগ্রণী প্রেস অন্যতম। তাদের ছাপানো বই এত নিম্নমানের যে শিক্ষাবর্ষের ৬ মাসও টেকেনি। পৃষ্ঠাগুলোও অনেক পাতলা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উলটাতে গিয়ে প্রায় সব বই ছিঁড়ে গেছে। এবারও তারা প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আরও কয়েকটি বিতর্কিত প্রেসের কাজ পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে ৯ কোটি বই আর মাধ্যমিকে ২৫ কোটি বই শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ছাপানো হবে। নতুন কারিকুলামে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আগামী শিক্ষাবর্ষে কারিকুলাম পরিমার্জন ও সংশোধন হলে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা বাড়বে। এর ফলে বইয়ের ফর্মার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে এবং ছাপাতেও সময় বেশি লাগবে। বিতর্কিত ও নিম্নমানের মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে ভালোমানের অধিকসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হলে দ্রুত বই ছাপানো সম্ভব। এতে সময় কম লাগবে। যথাসময়ে বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো যাবে। এতে খরচও কমবে। এজন্য স্বনামধন্য মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিতর্কিত প্রেসের টেন্ডার বাতিল করে দ্রুত এ প্রক্রিয়া শেষ করার কথা জানান তারা।

শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ২৩ দিনের মাথায় নতুন শিক্ষাক্রম বা জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তাই ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে ২০২৬ সাল থেকে তা পরিপূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে। এর আগে ২০২৫ সালে শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্বের ২০১২ সালের প্রণীত সৃজনশীল কারিকুলাম ধাঁচের পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। এতে পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন ও সংশোধন করে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ের কোনো পরিবর্তন করা হচ্ছে না। এসব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের।

এছাড়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সৃজনশীল কারিকুলামের বই থাকবে বলে খসড়া হলেও এসব বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে কন্টেন্টে নানা পরিমার্জন করা হবে। আর নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে বিভাগ বিভাজন। এতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ আবার চালু হওয়ায় বাড়ছে বইয়ের সংখ্যাও।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, চলতি মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগের শিক্ষাক্রমের আদলের শিক্ষায় ফিরে গিয়ে ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য চলমান শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস ও প্রশ্ন ধরন তৈরি করা কাজে একটু ব্যস্ত ছিলাম। একই সঙ্গে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর কার্যক্রমও অব্যাহত ছিল। এখন পাণ্ডুলিপি সংশোধন ও পরিমার্জন নিয়ে কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজ শেষ হবে। এরপর ছাপানোর কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি বই ছাপানো ও স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দায়িত্বে যারা থাকবেন, তাদের সমন্বয় জরুরি। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই পৌঁছাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। মুদ্রণসংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট হলে এ সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ মুদ্রণ সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য যারা টেন্ডার পেয়েছেন, তারা যথাসময়ে বই দিতে পারবেন না। এনসিটিবির সাবেক বিতর্কিত কর্মকর্তাদের কাছে বিভিন্ন তদবির করে তারা এই ছাপানোর কাজ পেয়েছেন। তাই বছরের শুরুতে বই দিতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিবছর কিছু প্রেস যথাসময়ে বই দেয় না। এনসিটিবির হাতে এখন পর্যাপ্ত সময় নেই। তাই বেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে হবে। তাহলে দ্রুত কাজ শেষ হবে। এছাড়া কারিকুলামের যে সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ রয়েছে, তা দ্রুত শেষ করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া সময়মতো শেষ করতে পরিমার্জনের পাশাপাশি পাণ্ডুলিপি দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করার পরামর্শ মুদ্রণশিল্প সমিতির এ নেতার।

বৃহস্পতিবার বই বাঁধাই শিল্পে সিন্ডিকেট বিলুপ্ত করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক বাঁধাই ব্যবসায়ী সমিতি। দীর্ঘদিন ধরে তারা কর্মক্ষেত্রে সীমাহীন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। স্বাধীনতা-উত্তর জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক বোর্ড বই টেন্ডারের মাধ্যমে তালিকাভুক্তি অবস্থায় বই বাঁধাই করে আসছেন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান তাদের এ সংগঠনটিকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে একচেটিয়াভাবে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এনসিটিবি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের শুরতেই শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এনসিটিবি ভবন পরিদর্শন করেন। সেসময় এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে সম্প্রতি কারিকুলাম সংশোধন সংক্রান্ত যে পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করেছে, সেটি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করার কথা জানিয়েছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, শিক্ষাক্রম সংশোধনসহ দরপত্র বাতিলের বিষয়ে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের পর জানিয়েছিলেন, আগামী বছরের বই দৃষ্টিনন্দন হবে। জানুয়ারিতে সব পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। এবারের বইগুলো দেখতে দৃষ্টিনন্দন হবে, কাগজ ভালো হবে। এক্ষেত্রে কোনো আর্থিক অনিয়ম হবে না। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘পরীক্ষা দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। এবার আমাদের হাতে সময় খুব কম। বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

চাঁদপুরঃ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধা দিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে অজ্ঞাতস্থানে থাকা চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নাছিম আখতারের পাঠানো আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ৯ সেপ্টেম্বর ওই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) পৃথক দুইটি বিবৃতিতে এই প্রত্যাখ্যানের কথা জানায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) চাঁবিপ্রবির শিক্ষক সমিতি ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এসব তথ্য সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক ও সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. জাহিদুল ইসলাম এবং ব্যবসায়ে প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক খাদিজা খাতুন টুম্পা। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে দেয়া বিবৃতিটি সিএসটিউই ইনসাইডার নামক ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়।

শিক্ষক সমিতির দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্য তার অফিসিয়াল ইমেইল ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক অফিস আদেশের মাধ্যমে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক নাজিম উদ্দিন এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক প্রিন্স মাহমুদকে অব্যাহতি দেন।

ওই অফিস আদেশে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বেতন ভোগী শিক্ষক বা কর্মচারীকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে কোনো তদন্ত কমিটি দিয়ে তদন্ত অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এবং তাকে ব্যক্তিগতভাবে বা কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করে চাকরি থেকে অপসারণ বা পদচ্যুত করা যাবে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভিসি আইন লঙ্ঘন করেছেন। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের উপাচার্য ও রেজিস্টার বিরোধী আন্দোলনে অব্যাহতি প্রাপ্ত শিক্ষকদ্বয়সহ সকল শিক্ষকদের সমর্থন থাকায় উপাচার্য ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তাদেরকে কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে অব্যাহতি দেন। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সকল শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উপাচার্যের এহেন সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে এবং উনার বিধিবহির্ভূত সকল কর্মকাণ্ডের জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বৈরাচারী উপাচার্য ড. মোহাম্মদ নাছিম আখতার অবৈধভাবে গত ৯ সেপ্টেম্বর যে অফিস আদেশ জারি করেছেন তা চাঁবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বৈরাচারী উপাচার্য নাছিম আখতার কর্তৃক প্রদত্ত কোনো আদেশ চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানবে না। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি যে চাঁবিপ্রবি এর স্বৈরাচারী উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের অব্যাহতি দিয়ে জারি করা অবৈধ অফিস আদেশ বাতিল না করা পর্যন্ত চাঁবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা কোনো প্রকার একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে না।

প্রসঙ্গত, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে উপাচার্য সরাসরি বাধা দেন এবং ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে নিজের লেখা একটা বই উৎসর্গ করেছেন তিনি। সরকার পতনের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাস ছেড়ে ‘অজ্ঞাতস্থানে’ অবস্থান করছেন তিনি।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৪

magnifiermenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram