এইমাত্র পাওয়া

চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই রাবিতে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ

রাজশাহীঃ স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাস আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইসিটি সেন্টারে একজনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ১৮ নভেম্বর তাকে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপত্রের অফিস আদেশ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রকাশিত ফলাফল পর্যালোচনা করে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অফিস আদেশ ও ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক অফিস আদেশে মোমেন খন্দকার অপি নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থীকে আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে নিয়োগ দেয়। তার নিয়োগের প্রায় এক মাস পর ১২ ডিসেম্বর তার স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বলছেন, দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্নাতক পাস করেই একজন প্রার্থীকে প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে যোগদান করতে হয়। সহকারী প্রোগ্রামার পদটি সেকশন কর্মকর্তা পদমর্যাদার। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির চাকরি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগের প্রথম ধাপ। এ পদে নিয়োগের জন্য ন্যূনতম স্নাতক পাস হতে হয়। চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই যদি নিয়োগ দেওয়া হয়, তবে সেক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।

নিয়োগপ্রাপ্ত মোমেন খন্দকার অপি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। চাকরিতে যোগদানের এক মাস পর প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৩ দশমিক ২০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার পদে টাকা ২২০০০-৫৩০৬০/- (বাইশ হাজার) টাকা বেতনে সহকারী প্রোগ্রামার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ করা হলো। এ নিয়োগ যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, স্নাতকের চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার আগে কাউকে প্রথম শ্রেণির চাকরি দেওয়ার সুযোগ নেই। স্নাতকের সনদ না পাওয়া মানে সে এইচএসসি পাস। এইচএসসি পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে কেউকে প্রথম শ্রেণির চাকরি দেওয়া মানে তা অন্যায়। এ ধরনের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের সাবেক এক পরিচালক বলেন, সহকারী প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ দিতে হলে কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে তাকে ন্যূনতম স্নাতক পাস হতে হবে।

তবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমেন খন্দকার অপি বলেন, গত নভেম্বরে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগেই আমার স্নাতক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমাদের অফিসিয়াল ফলাফল বের হতে দেরি হয়েছে। তবে আমি আনঅফিসিয়াল ডকুমেন্ট দেখিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. রোকানুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আনঅফিসিয়াল ফলাফল কখনও প্রকাশ হয় না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারও ইমপ্রুভমেন্ট ইস্যু বা হলের সিটের আবেদনের জন্য হলে তাকে এ বিষয়ে জানানো হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি চাকরির মতো জায়গায় ব্যবহার করে তাহলে আমি দায়িত্ব নেব না। চাকরির ক্ষেত্রে আমরা বলি, ফলাফলের অপেক্ষা করতে।

নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। কিছুক্ষণ আগেই জানতে পেরেছি। সে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ করে করেছে কিনা, আমাকে একটু দেখতে হবে। এই নিয়োগের বিষয়টি আমি সম্পূর্ণ আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের এখতিয়ারে ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিয়মকানুনের বিষয়ে আমি রেজিস্ট্রার ও আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলব। বিষয়টি আমি দেখছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম বলেন, আমার দপ্তরে তখন লোকবলের দরকার ছিল। আমি তাৎক্ষণিক সব ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করে লোক পাব না। তাই তাকে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি তার কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তিনি তার ব্যাচের সব থেকে ভালো প্রোগ্রামার।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৫/০৩/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.