পটুয়াখালী: জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে বিলাসী ভ্রমণে মেতেছেন জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা।
তাদের ফেইসবুক আইডি থেকে ভ্রমণের ছবি প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা। সাংবাদিকেরা বক্তব্যের জন্য ফোন দেয়ার পরে এসব ছবি মুছে ফেলেন তারা।
ওই ছবিতে দেখা যায়, পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম, গলাচিপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সগির, গলাচিপা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামাল হোসেন, রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ, রাঙ্গাবালী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বায়েজিদ ইসলাম, মো. আল মামুনসহ রাঙ্গাবালী উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বিলাসী ভ্রমণে মেতেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের চা-নাস্তা ও যাতায়াত খরচের জন্য প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪/৫ হাজার টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করে দেন রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
পরবর্তীতে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশে বিদ্যালয় ভবনেই হয় অফিসারদের থাকার ব্যবস্থা। উপজেলার মৌডুবী হাই এ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৩ নম্বর বাইলাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫১ নম্বর মৌডুবী মুখরবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষকদের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করা হয়। ট্রলারে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিভিন্ন স্পটে ভ্রমণ শেষে দুপুরে চর তুফানিয়ায় আয়োজন করা হয় ভুরিভোজের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাঙ্গাবালী উপজেলার একজন প্রধান শিক্ষিকা বলেন, স্যারেরা ভ্রমণে রাঙ্গাবালী আসবেন বিষয়টি আমাদেরকে আগেই জানানো হয়েছে। তাদের নাস্তা ও যাতায়াতের জন্য প্রতি বিদ্যালয়ে ৪/৫ হাজার টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমার বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চার হাজার টাকা দেওয়া হয়।
কে এই চাঁদা নির্ধারণ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদার বিষয়টি সামনে আসলে, সব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা এক জায়গায় বসে আলাপ আলোচনা করে প্রতি স্কুল থেকে ৪ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারা গত রবিবার আসছেন, এখন পর্যন্ত ভ্রমণে তুফানিয়ায় আছেন।
অন্য এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা শিক্ষা অফিসের কাছে অসহায়। তারা যেভাবে চান সেভাবেই আমাদের চলতে হয়। বাধ্য হয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী গতকাল ৪ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে ভ্রমণে গেছেন। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
রাঙ্গাবালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বদরুল মুনির অপু বলেন, আমরা চা-নাস্তা করিয়েছি, এতে খরচ হয়েছে। এটা ভিন্ন ব্যাপার বলে এড়িয়ে যান তিনি।
রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয় পরিদর্শনে এসেছেন। আমরা কোথায় ঘুরতে যাইনি। আমরা কারও কাছ থেকে টাকা পয়সা নেইনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান বলেন, আমিসহ কর্মকর্তারা সমন্বিত পরিদর্শনে রাঙ্গাবালী গিয়েছিলাম।
ভ্রমণ ও চাঁদার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথাও ভ্রমণে যাইনি এবং টাকা পয়সা নেইনি। আর কেউ টাকা নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, রাঙ্গাবালী উপজেলায় মোট ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশে সমন্বিত বিদ্যালয় পরিদর্শনের কথা রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৬/০২/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.