নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ সদ্য পদায়ন হওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. এহতেশাম উল হককে প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষা ভবন ঘেরাও করেছে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় আব্দুল গনি রোডে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মূল ভবনের সামনে তিন শতাধিক শিক্ষক কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এরপর শিক্ষকরা মূল ভবনের সামনে এসে ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের কর্মসূচি ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে “শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে প্রত্যাহার হওয়া ব্যক্তিই মাউশির নতুন ডিজি” শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সংবাদ প্রকাশের পরেই ডিজির প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মসূচী ঘোষণা করে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে পদায়ন পাওয়া অধ্যাপক ড. এহতেশাম উল হককে প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে মাউশির মহাপরিচালকের পদত্যাগ করতে হবে।
জানা গেছে, এ অধ্যাপক বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুগত ছিলেন। মাউশির নতুন এ ডিজি ৫ আগস্টের আগে বরিশালে মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক আচরণের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতেও বিভিন্নভাবে কলেজে প্রভাব বিস্তার করেন। স্বৈরাচার পতনের পর তাঁর অপসারণের দাবিতে কলেজে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁকে অপসারণের জন্য শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে নভেম্বরে তাঁকে অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে পটুয়াখালী কলেজে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক পদে পদায়ন করা হয়েছিল। মাউশিতে পূর্ণকালীন মহাপরিচালক না থাকায় বিভিন্ন অধ্যাপক এ পদে পদায়ন পেতে চেষ্টা করে আসছিলেন। কিন্তু আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগী ও জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে কাজ করা অধ্যাপককে শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ এ পদে পদায়ন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষকনেতারা।
শিক্ষকরা জানান, মাউশির ডিজি পদে পদায়ন পাওয়া অধ্যাপক ড. এহতেশাম উল হক বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ অনুচর হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। তার হাত ধরেই বরিশাল বিএম কলেজের রসায়ন বিভাগ থেকে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন পান অধ্যাপক ড. এহতেশাম উল হক। আওয়ামী বলয়ের প্রভাবশালী অধ্যক্ষ হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ লোপাট, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ বিস্তর অভিযোগে পাঁচ আগস্টের পরে অধ্যক্ষ পদ থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিক আন্দোলন, আল্টিমেটাম এবং শিক্ষা সচিবের লিখিত অভিযোগ দেন। এরপরই তাতে অধ্যক্ষ পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ অনুচর ও বিতর্কিত শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তা কীভাবে মাউশির ডিজির পদে আসীন হয় তা শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটসহ শিক্ষার্থী এবং সুশীল সমাজের কারো বোধগম্য নয়।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, শিক্ষা প্রশাসনে পদায়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের দাপট এখনো কমেনি। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের ক্রমাগত চাপের মুখে আওয়ামী ভিসি এবং সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পরিবর্তন পর তাদেরকে আবারও ডেকে এনে পুনর্বহাল করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ সহযোগী আওয়ামী সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল এবং গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখনও আওয়ামী বলয় মুক্ত হয়নি। যার প্রমাণ মাউশির ডিজি পদে আওয়ামীকরণ।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব জাকির হোসেন, সহকারী মহাসচিব অধ্যাপক বদরূল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ আলীবদ্দীন ও যুগ্মমহাসচিব আব্দুল হাকিমসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ শিক্ষকরা।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০২/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.