এইমাত্র পাওয়া

ডিআইএ’র বহুল বিতর্কিত যুগ্ম পরিচালক আবুয়াল কায়সারকে বদলি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত যুগ্ম পরিচালক আবুয়াল কায়সারকে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে। 

রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মোঃ মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলি করা হয়। 

আবুয়াল কায়সার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ২২ ব্যাচের কর্মকর্তা ও বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি এই পদে পদায়ন পান। তার আগে তিনি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকায় কর্মরত ছিলেন।

ডিআইএর প্রধান কাজ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থা পরিদর্শন এবং নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা পেলে প্রতিবেদনে সেগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই দপ্তরের বিরুদ্ধে পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ঘুস নেওয়ার বিষয়টি বেশ সমালোচিত। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ডিআইএকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঘুস-দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। বরং ফাইল আটকে রেখে অনৈতিক সুবিধা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে।  সম্প্রতি ২৬৯টি ফাইল অনৈতিকভাবে আটকে রাখেন ডিআইএর যুগ্ম-পরিচালক আবুয়াল কায়সার। এ কারণে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়। ঘুষকান্ডে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। 

এর আগে টাঙ্গাইলের শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের (মির্জাপুর সরকারি কলেজ) অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান কে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানাতে ফোনে ‘চায়ের দাওয়াত’ দেন যুগ্ম পরিচালক মো. আবুয়াল কায়সার। এই ‘দাওয়াতে’ সাড়া না দেওয়ায় অধ্যক্ষকে অশালীন কথা বলার ও দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে। ডিআইএর যুগ্ম পরিচালকের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড থেকে এসব জানা গেছে। অধ্যক্ষের অভিযোগ, অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে এমন প্রস্তাব। তবে আবুয়াল কায়সার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অধ্যক্ষের সঙ্গে এক ছাত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ আসায় তাঁকে দেখা করতে বলেছেন। দুজনের কথোপকথনের ৬ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে। শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান জানিয়েছিলেন, মূলত ঘুষ চাওয়ার জন্যই তাকে দেখা করতে বলেছিলেন। এ বিষয়ে  শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছিলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে কঠোর। ঘুষ-বাণিজ্যে জড়ালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এছাড়াও ডিআইএ’র  তৎকালীন পরিচালক কাজী মো. আবু কাইয়ুম শিশিরের সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে টানাপোড়েন ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে জড়ান। এতে অধিদপ্তরের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর  ডিআইএর যুগ্ম-পরিচালক আবুয়াল কায়সারের কারণে ডিআইএর তেমন কোন কার্যক্রম লক্ষ করা যায়নি। বরং শেখ হাসিনা আমলের করা ডিআইএর পরিদর্শন প্রতিবেদন আটকে রেখে ঘুস চান এই যুগ্ম-পরিচালক। বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। তার  দ্বন্দ্বে ডিআইএর পরিচালক প্রফেসর কাজী মো. আবু কাইয়ুম শিশিরকে বদলি করে মন্ত্রণালয়। এবার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জড়িত থাকা নিজেকে ডিআইএর প্রভাবশালী কর্মকর্তা মনে করা আবুয়াল কাওছারকে বদলি করায় স্বস্তি ফিরেছে দপ্তরটিতে। কর্মরত কর্মকর্তারা হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। 

আরও পরুনঃ 

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২০/০১/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.