এইমাত্র পাওয়া

আলেমরা আল্লাহর রাজকীয় মেহমান

মাওলানা হাফেজ আল আমিন সরকার।।জগতের শ্রেষ্ঠ সন্তান আলেমসমাজ। সাধারণ মানুষ আলেমদের অনুকরণ-অনুসরণকেই আখিরাতের মুক্তির পাথেয় মনে করে। আলেমদের মর্যাদা সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহতে এত এত গুরুত্ব এসেছে যে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আলেমদের প্রতি মহব্বত রাখা সৌভাগ্য মনে করতে বাধ্য হয়েছে। আলেমদের মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শুনে রাখো! যে ব্যক্তি জ্ঞান সংগ্রহে পথ চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।

কোনো জ্ঞানী যখন জমিনে পা রাখে ফেরেশতারা তার সম্মানে নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেন। জ্ঞানীর জন্য প্রতিটি প্রাণী, এমনকি সাগরের মাছ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনা করে। লাখো তারার চেয়ে চাঁদের আলো যেমন বেশি উজ্জ্বল, তেমনি ইবাদতে মগ্ন হাজারো ব্যক্তির চেয়ে একজন জ্ঞানী আল্লাহর কাছে অনেক বেশি দামি। ’ (আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

আলেমদের চলার পথে ফেরেশতাদের পাখা বিছিয়ে দেওয়া নিয়ে আল্লাহর অলি বলেন, ‘খোদা তাআলার সৃষ্টিরাজ্যে একমাত্র আলেমরাই রাজকীয় মেহমান।

সুরা ফাতিরের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জেনে রাখো! আমার বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমসমাজই আমাকে ভয় করে। 

সব কিছুর একটি নির্দিষ্ট সীমানা থাকে। ইসলামেরও একটি সীমানা আছে। কর্মগত, চিন্তাগত সব বিধি-বিধানের আছে সুস্পষ্ট চৌহদ্দি, সুনির্দিষ্ট অবকাঠামো।

এর ভেতরে যা পড়ে তা ইসলাম, যা পড়ে না তা ইসলাম নয়। তো ইসলামী বিধি-বিধানের এই সীমান্ত যারা পাহারা দেন, যাঁরা ইসলামের মৌলিকত্ব টিকিয়ে রাখেন, তাঁরা হলেন আহলে ইলম। তাঁরা হলেন নবীদের ওয়ারিশ। ওহি পাঠানোর মাধ্যমে নবী-রাসুলদের আল্লাহ তাআলা সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। নবী-রাসুলদের সেই ওহির ইলমের উত্তরাধিকারী হলেন আলেমরা।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আলেমরা নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীরা দিনার বা দিরহামকে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যাননি, বরং তাঁরা রেখে গিয়েছেন কেবল ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বড় কিছু গ্রহণ করেছে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪১)

আলেমদের মর্যাদা বেশি হওয়ার কারণ হলো, তাঁদের কাছেই মানুষ লাভ করে কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান। চিনতে পারে প্রভুকে। মানুষ খুঁজে পায় নিজের আসল পরিচয়। শিখতে পারে আল্লাহর বিধি-বিধান। জানতে পারে হালাল-হারাম। তাঁদের সংস্পর্শে এসেই অন্ধকারজগতের মানুষ সন্ধান পায় আলোকিত জীবনের। মৃত হৃদয়গুলো হয় পুনরুজ্জীবিত। দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে উন্মত্ত মানুষ আখিরাতমুখী জীবন ধারণ করে। তাঁরা পৃথিবীর জন্য রহমত। তাঁরা উম্মতের জন্য বরকত। পরমহিতৈষী ও মঙ্গলকামী। তাঁদের কাছে ইসলাম সবার আগে। আল্লাহ তাআলা আলেমদের বানিয়েছেন নিজ একত্ববাদের অন্যতম সাক্ষী হিসেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতারা এবং ন্যায়নিষ্ঠ আলেমরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। ’(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮)

কোরআনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের সঙ্গেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আলেমদের আনুগত্য করার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করো, অনুসরণ করো রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বসম্পন্ন (ন্যায়পরায়ণ শাসক ও আলেম) তাদের। ’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৯)

যেকোনো শরয়ি সমস্যা নিরসনে তাঁদের দ্বারস্থ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা নিজেই। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘অতএব, জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করো, যদি তোমাদের জানা না থাকে। ’ (সুরা : নাহল আয়াত : ৪৩)

একজন আলেম দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে গেলে মানুষ যেমন দিশাহারা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি কোনো আলেম চলে গেলে পুরো দেশ ও সমাজ অচল হয়ে পড়ে। তাই আলেমদের প্রতি অবজ্ঞা বা ধৃষ্টতা প্রদর্শন করলে, এর পরিণতিও ভয়ংকর। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, ‘আলেমদের গোশত বিষের মতো। যে শুঁকে সে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, আর যে খায় সে মারা যায়। ’

যাঁদের আল্লাহ সম্মান দিয়েছেন তাঁদেরকে অসম্মান করলে আল্লাহ বরদাশত করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, চরপাথালিয়া সালমান ফারসি (রা.)

মাদরাসা, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading