ঢাকাঃ পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে জুলাইর ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের এক শহীদের ভুল নাম ছেপেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
বাংলা পাঠ্যবইয়ের এক অংশে লেখা হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালীন সময় নাহিয়ান নামে একজন নিহত হয়েছেন। তবে এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা প্রকৃতপক্ষে নাফিসা হোসেনের কথা উল্লেখ করতে চেয়েছিলেন।
একই বইয়ে বলা হয়েছে, ‘পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। পুলিশ তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এতে আন্দোলন সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল এক গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়।’
‘ঢাকার উত্তরায় শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ আন্দোলনরত সবাইকে পানি বিতরণ করতে করতে নিহত হন। নিহত হন (গোলাম) নাফিজ, নাহিয়ান, আনাসসহ অগণিত প্রাণ। মায়ের কোলের শিশু, বাবার সাথে খেলতে থাকা শিশু, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, কৃষক, ফেরিওয়ালা, চাকুরিজীবী, মা, পথচারী কেউ বাদ যায় না। সারা দেশে হত্যা করা হয় হাজারো মানুষকে’।
উল্লেখিত তিন শহীদ—নাফিজ, নাহিয়ান ও আনাসের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্র জানায়, তারা শহীদদের মধ্যে একজন নারীর নাম যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তারা টঙ্গীর সাহাজউদ্দিন সরকার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাফিসার নাম অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তে উপনীত হন। সাভারে বিক্ষোভ চলাকালীন সময় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের গুলিতে নিহত হন নাফিসা। ‘আমি নাহিয়ান নামে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেইনি’, জানান ওই সূত্র।
আদৌ জুলাইর গণঅভ্যুত্থানে নাহিয়ান নামে কেউ শহীদ হয়েছেন কী না, তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
উৎস আরও জানান, ইতোমধ্যে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলো ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করেন, তারাও এই ভুলটি চিহ্নিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টির সুরাহা করব। আজ স্কুলগুলোতে যে পিডিএফ সংস্করণ পাঠানো হবে, সেটায় আমরা এই ভুলটি সংশোধন করে দেব। স্কুলগুলোতেও আমরা শিগগির একটি সংশোধনী পাঠাব।’
এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বেশ কয়েকটি পত্রিকায় নৌবাহিনী কলেজের ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী গোলাম নাফিজের ছবি ছাপা হয়েছিল। ওই ছবিতে দেখা যায় পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত নাফিজ একটি রিকশার পাদানিতে নিশ্চল অবস্থায় পড়ে আছেন। এ সময় তার মাথায় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা বাধা ছিল। এই ছবিটি আবু সাঈদ ও মুগ্ধের ছবির মতো গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীকে পরিণত হয়।
দশম শ্রেণির ছাত্র আনাস ৫ আগস্ট ঢাকার চাঙ্খারপুলের কাছে বিক্ষোভে অংশ নিতে যেয়ে নিহত হয়। বিক্ষোভে যাওয়ার আগে সে তার মায়ের কাছে একটি চিঠি লিখে যায়। চিঠিতে সে লিখেছিল, ‘ মা আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। একদিন তো মরতেই হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যুও অধিক শ্রেয়।’
যে অধ্যায়ে নাফিসার নাম ভুল করে নাহিয়ান লেখা হয়েছে, সেই একই অধ্যায়ে দেশের জন্য মানুষের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিপ্লবী তিতুমীরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি ঔপনিবেশিক আমলে স্থানীয় জমিদার ও ব্রিটিশ নীলচাষীদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি, ব্রিটিশ আমলের অপর এক বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের কথাও উল্লেখ করা হয়।
একই অধ্যায়ে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও মতিউর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হকের কথাও বলা হয়েছে। তিনি ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন।
এই অধ্যায়ে নুর হোসেন, ডা: শামসুল আলম খান মিলন ও নাজির উদ্দিন জেহাদকে নিয়ে আলাদা আলাদা অংশ রয়েছে। তারা সবাই স্বৈরাচারি সামরিক শাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত হয়েছেন।
এই অধ্যায়ে আবু সাঈদ, মুগ্ধ, তিতুমীর, প্রীতিলতা, আসাদ, মতিউর, নুর হোসেন, ড. মিলন ও জেহাদের হাতে আঁকা স্কেচ সংযোজন করা হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০১/০১/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.