ঢাকাঃ দেশের ১৫ হাজার মাদরাসার (আলিয়া) শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন দুই লাখ ২১ হাজার ৪৪৫ জন। তাদের বেতন-ভাতাসহ সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। সরকারি এই অধিদপ্তরটির জনবল কাঠামোর ২৩টি পদের মধ্যে একটি পরিচালক ও পাঁচটি সহকারী পরিচালকের পদই খালি। ফলে মাত্র ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীর প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে অধিদপ্তরটি।
জনবল কাঠামো অনুযায়ী সব পদে লোকবল চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহনওয়াজ দিলরুবা খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি অধিদপ্তর এত কম জনবলে চলে, তা আগে জানা ছিল না। এই অধিদপ্তরটির বর্তমান জনবল কাঠামো ২৩ জনের। এর মধ্যে একজন পরিচালক ও পাঁচজন সহকারী পরিচালকের পদই খালি।
লোকবলের অভাবে আমাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। আমরা প্রয়োজনীয় জনবলের পদায়ন চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশের আট হাজার ২২২টি এমপিওভুক্ত মাদরাসায় এক লাখ ৬০ হাজার ৮০০ শিক্ষক ও কর্মচারীর প্রতি মাসে বেতন ও ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া দেশের এক হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার চার হাজার ৫২৯ শিক্ষককে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অধিক্ষেত্র সারা দেশ। এমপিওভুক্তি, শিক্ষক এমপিওভুক্তিসহ মাদরাসা শিক্ষার একাডেমিক ও কাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে পরার্মশ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া অধিদপ্তরের প্রধান কাজ।
বর্তমানে এমআইএমআইএসের মাধ্যমে অনলাইন পদ্ধতিতে এমপিওভুক্ত মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতন-ভাতা) আবেদন দ্রুত সময়ে প্রক্রিয়াকরণ ও সরাসরি শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদান বা বিতরণ নিশ্চিত করা হয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে। অথচ এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সাধন করতে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই প্রতিষ্ঠানটিতে।
লোকবল কম থাকায় এক দিনের কাজ সম্পন্ন করতে লাগছে তিন-চার দিন। এই সুযোগে দ্রুতগতিতে কাজ করে দেওয়ার নামে অধিদপ্তরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক প্রতারকচক্র। সম্প্রতি এ বিষয়ে সারা দেশের মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের সতর্ক করে জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতারকচক্র বা ব্যক্তি সরাসরি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বা প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এমপিওভুক্তি, এমপিওভুক্ত মাদরাসায় বিশেষ বরাদ্দ প্রদান, উচ্চতর স্কেল প্রদান, পদোন্নতি, ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়নে সহযোগিতা, এমপিও শিটে নাম, পদবি, জন্মতারিখ সংশোধন, বকেয়া প্রদান, প্রশিক্ষণে শিক্ষক-কর্মকর্তা মনোনয়ন, ইনডেক্স প্রদান, ইনডেক্স কর্তনসহ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কাজ করিয়ে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস বা প্রলোভন দেখিয়ে মাদরাসায় ফোন, ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এসএমএস, বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা দাবি করছে। এরই মধ্যে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে একাধিক প্রতারকচক্র নানা মাধ্যমে (হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কর্মকর্তার ছবি ব্যবহার করে) টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে কোনো কাজে টাকার প্রয়োজন নেই। সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধানের ভিত্তিতে সেবা দিয়ে থাকে। অর্থের বিনিময়ে বা উপহারের বিনিময়ে কোনো কিছুই হওয়ার সুযোগ নেই।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১২/১২/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.