নেত্রকোনাঃ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ মহিলা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পাঠদানের জন্য রয়েছে ৪ জন শিক্ষক ও একজন প্রদর্শক থাকলেও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী আছেন মাত্র পাঁচজন। একই অবস্থা বাণিজ্য বিভাগে। তিন শিক্ষক থাকলেও দুই শ্রেণি মিলিয়ে শিক্ষার্থী আছে মাত্র পাঁচজন। তবে গত দুই বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কোনো শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেনি। বাণিজ্য বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করেছেন চারজন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান বিভাগে কোনো শিক্ষার্থীই ভর্তি হননি। যার ফলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কোনো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেননি। তবে শিক্ষার্থী না থাকলেও ওই পাঁচ শিক্ষকের বেতন বাবদ বছরে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪১ লাখ টাকা।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, হাওর পাড়ের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিষয়ে লেখাপড়ার করার আগ্রহ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বাণিজ্য বিভাগে থেকে চলতি বছরে চার জন শিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ নিলেও এর মধ্যে দুই জনই অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে আবার এক জন ফেল করেছেন। কিন্তু এই চার শিক্ষার্থীর জন্যও ছিলেন তিনজন শিক্ষক।
যদিও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী পৌরশহরে থাকা কলেজে প্রতি বিভাগে ন্যূনতম ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকা আবশ্যক।
কলেজের তথ্য মতে, মোহনগঞ্জ পৌরশহরের দক্ষিণ দৌলতপুর এলাকায় এক একর ৭৩ শতাংশ জায়গায় ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মোহনগঞ্জ মহিলা কলেজ’। কলেজটিতে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যসহ তিনটি বিভাগ রয়েছে। ২০০১ সালে কলেজটি পাঠদানের অনুমতি পায়। এমপিওভুক্ত হয় ২০০৪ সালে।
কলেজটিতে দুটি বহুতল একাডেমিক ভবন রয়েছে। এছাড়া নির্মাণাধীন রয়েছে বহুতল ছাত্রী নিবাস। অবকাঠামোর দিক দিয়ে উন্নত থাকলেও পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নেই এই কলেজে। তবে ২০২৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে কলেজের মানবিক শাখায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রায় ৪৫০-৫০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিপরীতে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে আছেন মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিলেও বাণিজ্য বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছেন চারজন, তাও একজন অকৃতকার্য হয়েছেন। অপরদিকে মানবিক বিভাগ থেকে এবার ২২৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিলেও পাস করেছেন ১১২ জন।
জানতে চাইলে মোহনগঞ্জ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আমাদের হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে পড়তে তেমন আগ্রহী হয় না। এর মধ্যে যারা এসব বিভাগে পড়তে চায় তারা শহরে চলে যায়। শহরে যেহেতু বিজ্ঞান-বাণিজ্যে প্রাইভেট, কোচিংসহ নানা সুবিধা থাকে তাই তারা সেখানেই গিয়ে ভর্তি হয়। তবু আমরা শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গত দুইবছর শিক্ষার্থী না থাকলেও সম্প্রতি বিজ্ঞানে চারজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিভাবে বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’
কলেজের সদ্য মনোনীত সভাপতি গোলাম রব্বানি পুতুল বলেন,‘আমি কয়েকদিন আগে কলেজের সভাপতি মনোনীত হয়েছি। এখনো কলেজে কোনো সভা করিনি। বিষয়টি জেনেছি, ভালো হয়েছে। বিজ্ঞান-বাণিজ্যে শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য সবধরণের উদ্যোগ নেব। মানসম্মত শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া যত সমস্যা আছে সবগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা হবে।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.