এক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ১২ জনই একই পরিবারের

সুভাষ বিশ্বাস, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চরম অমিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর আত্নিয় করনের কারনে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে নীলফামারী কিশোরগঞ্জের কিশামত বদি উচ্চ বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষক দীর্ঘ ১৬ বছরে কিসামত বদি উচ্চ বিদ্যালয়টিকে পরিবার তন্ত্রে রূপান্তরিত করার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে সেটি ভাইরাল হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এরপর থেকেই উঠে আসতে শুরু করেছে বিদ্যালয়টির বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য । জানা গেছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার রণচন্ডি ইউনিয়নের কবিরাজের বাজারে অবস্থিত কিশামত বদি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থেকে আয়া পর্যন্ত সবাই প্রতিষ্ঠানটিতে একমাত্র ইসলাম ধর্মের একজন শিক্ষক মুসলিম রয়েছেন। তিনি ছাড়া বাকি সবাই সনাতম (হিন্দু) ধর্মের।

নীলফামারী ৩ আসনের তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা ও প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এমন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিসামত বদি উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে এমপিওভুক্ত হয় বিদ্যালয়টি । এসময় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে জমিদাতা কুলোদা মোহন রায়কে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করে

অন্তত কুমারকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেন। প্রতিষ্ঠানে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ভাই, স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্নিয় দের নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুলোদা মোহন রায়ের মৃত্যুর পর প্রধান শিক্ষক নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছেলে বিমল চন্দ্র রায়কে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে দেন।পরে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দুজনে মিলে দুই পরিবারের লোকজনদের নিয়োগ প্রদান করেন।

বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক থেকে শুরু করে আয়া পর্যন্ত মোট ১৮ জন কর্মরত রয়েছেন। তার মধ্যে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের একজন শিক্ষক ছাড়া বাকিরা সকলেই সনাতন (হিন্দু) ধর্মের। এর মধ্যে ১২ জন প্রধান শিক্ষকের পরিবারের।

প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমারের স্ত্রী সহকারী প্রধান শিক্ষক ববিতা রানী রায় ঘটনাটি সত্যতা স্বীকার করে বলেন আমার স্বামী এই বিদ্যালয়ের প্রধান। আমার ভাসুর অন্নদা মোহন রায়। দেবর রঘুনাত চন্দ্র রায় ও তুলারাম রায়। তারা সকলে আপন ভাই। এছাড়াও ভাইয়ের স্ত্রী, ভাগিনা, ভাগিনার বউও নিয়োগ পেয়েছেন নিয়ম মেনেই।

প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার বিদ্যালয়ে উপস্থিত ও মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  তবে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি যা করেছি নিয়ম মেনে করেছি। আপনার নিয়মের মধ্যে বাইরের কোনো প্রার্থী নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ছিল কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার কার্যালয়ে আমাকে ডাকছেন বলে তিনি দ্রুত চলে যান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান সরকার বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তালিকা দেখেছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া শিক্ষকের নামের তালিকা দেখে প্রধান শিক্ষককে ডেকেছিলাম। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, নীলফামারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমার জানামতে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে এম পি ও ভুক্ত হয়। এই ১৬ জন শিক্ষক নিজেদের মেধা শ্রম দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটি এটা সত্য । তবে এখন দেখা যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সকলেই প্রধান শিক্ষকের আত্মীয়।

নীলফামারী ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার মুঠোফোন বন্ধ ও পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হলো না

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৩/০৯/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.