সোমবার, ২০শে মে ২০২৪

ঢাকাঃ আসছে অর্থবছরের জাতীয় বাজেট একটি জটিল পরিস্থিতিতে প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। গত বাজেটে সমস্যা ছিল একটি। এবার তা বেড়ে হয়েছে তিনটি। সেগুলো হলো অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং কর আহরণ কম হওয়ার কারণে প্রবৃদ্ধির ধারা শ্লথ হয়ে যাওয়া। গতকাল রবিবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা : নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক বাজেট প্রস্তাবনায় এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সংসদ সদস্য এ. কে. আজাদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডি পরিচালিত জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে এখন ত্রিযোগ সমস্যা হয়েছে অর্থাৎ তিনটি সমস্যা যুক্ত হয়েছে। গত দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলেছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে। এ ঋণ শুধু বিদেশি ঋণ না, অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি খাতের ঋণের দায়দেনাও বাড়ছে। তৃতীয়ত, প্রবৃদ্ধির হার শ্লথগতির হয়ে পড়েছে। এটি হয়েছে কর আহরণ কম হওয়ার কারণে, এ খাত না বেড়ে আরও সংকুচিত হয়েছে।’

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি বিরূপভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। ফলে বাল্যবিয়েও বাড়ছে। বিশ্বে মূল্যস্ফীতির পতন ঘটেছে, কিন্তু দেশে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।’

জিডিপিতে ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে সুনাম ছিল আমরা কখনো খেলাপি হই না, সে সুনাম আর থাকছে না। ৫ বিলিয়ন ডলারের দেনা এখনো আমরা দিতে পারছি না। আমাদের গর্বের জায়গায় চিড় ধরেছে। জিডিপিতে সরকারি ঋণ ৩৭ শতাংশ, ব্যক্তি খাতের ঋণ ৫ শতাংশ সব মিলিয়ে ৪২ শতাংশ ঋণের বোঝা আছে সরকারের।’

জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘সরকার ত্রৈমাসিক জিডিপির তথ্য দিচ্ছে। তাতে যা দেখা যাচ্ছে, গড় প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে বাকি সময়ে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব।’

বাজেট প্রত্যাশা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করেছে সিপিডি। এতে আড়াই হাজারের ওপর অংশগ্রহণকারী ছিল। সেই জরিপের তথ্য তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ৬৪ শতাংশ বলেছে তাদের কোনো বাজেট প্রত্যাশা নেই। এতে তিনটি বিষয় পরিষ্কার। তারা শোভন কর্মসংস্থান চায়, মানসম্মত শিক্ষা চায়, সম্প্রসারিত সামাজিক সুরক্ষা চায়।

এ অর্থনীতিবিদ সরকারের উদ্দেশে বলেন, পিছিয়ে পড়া মানুষের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করতে হবে। আর স্বাধীন গণমাধ্যম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। জরিপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ মানুষ বলছেন, স্বচ্ছতার জন্য পেনশন ফান্ডকে আলাদা করতে হবে, সামাজিক সুরক্ষায় যোগ করা যাবে না।

সিপিডির এ জরিপে দেখা যায়, ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ শোভন কর্মসংস্থান চান। ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ মানসম্মত শিক্ষা চান, ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ সম্প্রসারিত সামাজিক সুরক্ষা চান, ৮ শতাংশের বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থা, ৭ দশমিক ৬ শতাংশ দক্ষতা উন্নয়ন, ৬ দশমিক ২ শতাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ চান। সবচেয়ে কম মানুষ অর্থাৎ ১ দশমিক ৩২ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনে বিনিয়োগ চান।

সিপিডির জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ নাগরিক বেকারত্ব কমানোর কথা বলেছেন। ৩৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং ১১ দশমিক ০২ শতাংশ বেকারভাতা চালুর পক্ষে মত দেন।

নাগরিকদের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রত্যাশা হিসেবে রয়েছে শিক্ষা। ৪৯ দশমিক ৭২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তারা মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ চান। আর বৃত্তি/শিক্ষাভাতা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তা চান।

জাতীয় বাজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেছে সিপিডির জরিপ। দেশের সব নাগরিকের চাহিদার প্রতি বাজেট যেন ন্যায়সংগত ও প্রতিক্রিয়াশীল হয়, সেজন্য এটি অপরিহার্য বলে মনে করে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির বাজেট প্রস্তাবনাগুলোকে একত্র করে এই নথি প্রস্তুত করা হয়েছে। পরিতাপের বিষয় এই যে, দেশের ঐতিহ্যগত বাজেট প্রস্তুতির প্রক্রিয়ায় সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টিভঙ্গি/মতামত প্রতিফলনের সুযোগ খুবই সীমিত।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এমনকি শ্রীলঙ্কাও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশ তা পারছে না, প্রায় দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। আসলে ভোগ্যপণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘১০ শতাংশের কাছাকাছির উচ্চ মূল্যস্ফীতি গত দুই বছর ধরে জনগণকে ভোগাচ্ছে। অথচ ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশ ইতিমধ্যেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশ তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। দেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার মাত্র পাঁচ থেকে ছয়জনের নিয়ন্ত্রণে থাকা। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। এ সিন্ডিকেট অনেক ক্ষমতাধর। মাত্র ছয়-সাতটি কোম্পানি নিত্যপণ্য আমদানি করে। তারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের লাইব্রেরি কমিটির সদস্য এ. কে. আজাদ বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি এসব অর্থের যথাযথ ব্যবহারের পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করা না যাবে, ততদিন পর্যন্ত বরাদ্দ বাড়িয়েও কোনো কাজে আসবে না। সব মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহিতার আওতায় না আনলে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হবে না।’

নিজের নির্বাচনী এলাকার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘একটি রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় প্রতিনিধির ৩ লাখ টাকা দাবির বিপরীতে ১ লাখ দিতে চাইলেও ওই প্রতিনিধি নিতে চাননি। তবে পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই রাস্তা ৩০ হাজার টাকা দিয়েই সংস্কার সম্ভব। সরকারি টাকার এ ধরনের অপচয় রোধের পাশাপাশি নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালকেও দুর্নীতিমুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, উন্নয়ন অবকাঠামো খাতে বরাদ্দে বাড়লেও গুরুত্ব কমছে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের মতো সামাজিক খাত, যা দ্বিতীয় প্রজন্মের বড় সমস্যা। সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ ও সুষম বণ্টনের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তারা বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হলেও বাজেট তৈরিতে গুরুত্ব পায় সুবিধাভোগী (প্রেশার গ্রুপের) শ্রেণির সুপারিশ। অনেক দিন থেকে বিশৃঙ্খলায় আর্থিক খাত। অর্থ পাচার বাড়িয়েছে সংকট। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে বাগে আনতে দরকার সুশাসন আর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জোরালো গুরুত্ব উঠে এসেছে আলোচনায়।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

ঢাকাঃ আবৃত্তি সংগঠন ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’। ২০১৭ সাল থেকে এই সংগঠনটি অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী গোলাম মুস্তাফার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘গোলাম মুস্তাফা স্মৃতি সম্মাননা’ প্রদান করে আসছে। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতি বছর একজন এই সম্মাননা পেয়ে আসছেন। এ বছর এই সম্মাননা পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

শুক্রবার (৩ মে) রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তার হাতে এ সম্মাননা পদক তুলে দেওয়া হয়।

তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের সভাপতি ভাগ্যধন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং গোলাম মুস্তাফার মেয়ে অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মুজাহিদুল ইসলাম।

এ সময় অতিথিরা নাসির উদ্দীন ইউসুফকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। একই সঙ্গে তার হাতে তুলে দেন একগুচ্ছ কবিতার বই, সম্মাননা পদক, সম্মাননা স্মারক ও সম্মাননা আর্থিক মূল্য ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও তাকে জাতীয় পতাকায় জড়িয়ে সম্মানিত করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ, কথামালা ও আবৃত্তিতে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী, শিমুল মুস্তাফা, মীর বরকত, অভিনয়শিল্পী চিত্রলেখা গুহ, নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, অভিনয়শিল্পী সাবেরী আলমসহ আরও অনেকে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে আগামী ১২ মে। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশিত হবে।

এসএসসি পরীক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ফলাফল পাবে, তা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার এতে সই করেছেন।

বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী-পরীক্ষার্থীকে ফলাফল দেখতে ঢাকা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে। সেখানে থাকা Result কর্নারে ক্লিক করে বোর্ড ও প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন’র (EIIN) মাধ্যমে ফল জানা যাবে।

এছাড়া এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা যাবে। সেক্ষেত্রে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে SSC লিখে স্পেস দিয়ে ইংরেজিতে বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর দিতে হবে। এরপর স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে। (উদাহরণ-SSC Dha ROLL YEAR)। ফিরতি মেসেজে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করতে পারবেন।

অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক রেজাল্ট শিট পেতে বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এরপর রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন (EIIN) অ্যান্ট্রি করতে হবে। তাহলে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে সারাদেশের ৩ হাজার ৭০০টি কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেন। এ বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

দিনাজপুরঃ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিল ও সুপার গ্রেড বহালের দাবিতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সার্বজনীন এই পেনশন স্কিম বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের পেটে ছুরি মারা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

রবিবার (৫ মে) বেলা ২ টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম-২ এ উক্ত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. সাদেকুর রহমান'র সঞ্চালনায় এবং সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মমিনুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ ও প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের নেতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা।

এসময় সাধারণ শিক্ষকরা বলেন, পেনশন স্কিম বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা থেকে দূরে সরে যাবে তরুণরা। যেখানে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, সেখানে যারা এই শিক্ষা দিয়ে দেশের জন্য সুনাগরিক তৈরি করে তাদের সাথে এই বৈষম্য মেনে নেয়া যায় না। আমরা চাই সার্বজনীন পেনশন স্কিম ব্যবস্থা বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করা হোক। সার্বজনীন এই পেনশন বাতিলে আমরা সাধারণ শিক্ষকরা প্রয়োজনে কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনে নামতে রাজি আছি। বৈষম্যমূলক এই পেনশন নীতি আমরা মানি না। যেখানে আমলাদের সরকারী পেনশনের সুবিধা দেয়া হবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

সভায় সার্বজনীন পেনশন বাতিলে আগামী দিনের আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য উপস্থিত সাধারণ শিক্ষকদের মতামত গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষকদের গণস্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. বলরাম রায় বলেন, অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে বলতে হচ্ছে, সার্বজনীন পেনশন স্কীমের যে, প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে সেটি জুলাই থেকে বাস্তবায়ন হবে। যদিও একটি প্রজ্ঞাপনে লেখা আছে যে, জুলাই মাস থেকে যারা নিয়োগ প্রাপ্ত হবে তারা এই পেনশনের আওতাভুক্ত হবে। কিন্তু আসলে এটি হবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক যখন অধ্যাপক হয় তখন সে গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-২ এ যাবে। আবার গ্রেড-২ থেকে গ্রেড- ১ এ যাবে আর প্রতিবারই একটি করে নতুন নিয়োগপত্র পায় কাজেই এটি সবার জন্য প্রযোজ্য। কাজেই আমাদের সকলকে এই সার্বজনীন পেনশন নীতি প্রতিহত করতে হবে।

সভার সমাপনী বক্তব্যে সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, আজকে এখানে উপস্থিত সকল শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে আমরা হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি আজকের এই সাধারণ সভার মাধ্যমে সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাখ্যান করছি। পাশাপাশি শিক্ষক সমিতির গৃহীত সকল সিদ্ধান্তের প্রতি আমরা একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং তারই ধারাবিহকতায় আমরা আগামী ৭ই মে সকাল ১১.০০ টায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে মৌন মিছিল করবো। এছাড়াও আমরা শিক্ষকদের সুপার গ্রেডের বিষয়ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত করবো।

পরবর্তীতে আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিনে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে মানবন্ধনের আয়োজন করবো। তারপরও দাবি আদায় না হলে প্রয়োজনে আমরা আবার সাধারণ সভা আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিবো।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

ঢাকাঃ জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আপাতত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই।

সোমবার (০৬ মে) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ও সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের দুটি সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এসব কথা জানান।

রফিকুল ইসলাম তার প্রশ্নে বলেন, সরকারি চাকরিতে যোগদানের যে বয়সসীমা রয়েছে, তা অনেক আগে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের মানুষের আয়ুষ্কাল ৬২ বছর থেকে ৭২ বছরে পৌঁছেছে। এখন এটি অত্যন্ত যৌক্তিক, সরকারি চাকরিতে যোগদানের বয়সসীমা শিথিল করে অন্তত ৩৫ বছরের কাছে নিয়ে যান।

তিনি বলেন, বয়সসীমা বাড়ালে কর্মসংস্থানের অভাবে আমাদের হতাশাগ্রস্ত তরুণ ও যুবসমাজ প্রতিযোগিতায় এসে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, বয়সসীমা শিথিল করার সময় এসেছে। সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির সময় হয়েছে। আমাদের ‘না’ মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে ‘হ্যাঁ’-তে আসতে হবে।

এ প্রশ্নের উত্তরে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। চাকরির বয়স ছিল ২৭ বছর, সেখান থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনবল কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন করে থাকি। যুগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আমরা পরিবর্তনও করে থাকি। চাকরিতে প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার (অবসর) বয়সটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারি চাকরিতে এখন বেশ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরির পরিবেশ থেকে শুরু করে বেতন কাঠামো, নতুন প্রজন্মের কাছে বড় আকর্ষণ তৈরি করেছে। সরকারের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা একটি সম্মানের বিষয়। আবার চাকরির নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বেতন কাঠামোও অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে, কাজের পরিবেশও সুন্দর হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, এটি (চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো) নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা সবসময় বলে আসি, ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের রিক্রুট করতে চাই। এটি সরকারের একটি পলিসি। ২২-২৩ বছর বয়স থেকেই শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। তারা ৬-৭ বছর সময় পান। তারা যোগদানের যথেষ্ট সময় পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সংসদে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় যুগের প্রয়োজনে, নতুন যা করলে ভালো হবে, তা চিন্তা করে থাকি। তবে মনে করি, এটি নীতিগত সিদ্ধান্ত- চাকরির বয়স আগামীতে বাড়াব কি বাড়াব না। বাড়ালে ভালো হবে কি না, তা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

ফরিদা ইয়াসমিন তার প্রশ্নে বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে?

জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের একটি পত্র আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। আগেই বলেছি এটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করব। তবে আপাতত চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত নেই। এটি নিয়ে আরও আলোচনা-পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে দেখবো।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

ঢাকাঃ  হজ ভিসায় নতুন বিধান আরোপ করেছে সৌদি আরব। এ-সংক্রান্ত ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই ভিসা দিয়ে শুধু জেদ্দা, মদিনা ও মক্কা শহরে ভ্রমণ করা যাবে। দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ এক প্রতিবেদন খবরটি দিয়েছে।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, শুধু হজ ভিসা দিয়েই ২০২৪ সালে হজের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেওয়া তীর্থযাত্রীরা জেদ্দা, মদিনা ও মক্কা শহরে ভ্রমণ করতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে জোর দিয়ে বলেছে, সৌদি আরবে কোনো কাজ করা, বসবাস বা নির্ধারিত শহরের বাইরে ভ্রমণের জন্য হজ ভিসা বৈধ নয়। এই বিধিনিষেধ লঙ্ঘনকারী ভবিষ্যতে হজে অংশ নেওয়ার অনুমতি না-ও পেতে পারেন। তাঁকে দেশ থেকেও বের করে দেওয়া হতে পারে।

উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের দেশগুলো ছাড়া যেসব আন্তর্জাতিক দর্শনার্থী হজ পালন করতে চান, তাঁদের অবশ্যই হজ ভিসা নিতে হবে।

হজ ভিসা শুধু হজ মৌসুমের জন্যই বৈধ। এই সময়ের মধ্যে হজ ভিসা নেওয়া ব্যক্তিদের ওমরাহ পালন বা যেকোনো ধরনের আর্থিক বা অবৈতনিক কাজের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে নতুন বিধিতে।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভিসা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক রেজিস্ট্রেশন চালু করেছে হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

হজ ভিসার আবেদনের জন্য ভিসা প্ল্যাটফর্মে লগইন করে উপযুক্ত পরিষেবা নির্বাচন এবং প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে।

সব নিয়মনীতির প্রতি সম্মতি জানিয়ে আগে থেকেই ভিসার জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত তিন কার্যদিবস পর্যন্ত সময় লাগে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। যেখানে বর্তমানে দেশে ১৫ ও এর বেশি বয়সী কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠী তথা মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার। গত দুই বছরের বেশি সময়ে দেশের শ্রমশক্তির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেই সঙ্গে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যায়ও হেরফের হয়নি।

অবশ্য ২০২৩ সাল শেষে গড় বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি। তবে লিঙ্গভেদে বেকারের চিত্রে দেখা গেছে, নারী বেকারের সংখ্যা কমেছে, বিপরীতে পুরুষ বেকার বেড়েছে।

আজ সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। এই জরিপ প্রতিবেদনে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত (প্রথম প্রান্তিক) বেকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুসারে, সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং এক মাস ধরে কাজপ্রত্যাশী ছিলেন, এমন কর্মক্ষম ব্যক্তি বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বিবিএস আইএলওর সংজ্ঞা অনুসারেই এই জরিপ করে থাকে।

বিবিএসের জরিপ অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে বেকার ছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার জন। সে হিসাবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে বেকারের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। যেখানে ২০২৩ সালের গড় ছিল ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ছিল ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, নারী বেকার কমেছে। গত মার্চ শেষে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪০ হাজার। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (মার্চ-জানুয়ারি) এই সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১০ হাজার। তবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ হাজার নারী বেকার কমেছে। এখন নারী বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার। গত বছর একই সময় ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, শ্রমশক্তিতে এখন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ আছেন। তাঁদের মধ্যে ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার।

এ ছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী আছেন—তাঁরা কর্মে নিয়োজিত নন, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়। এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার। তাঁরা মূলত সাধারণ ছাত্র, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক নারী-পুরুষ, কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কর্মে নিয়োজিত নন বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক গৃহিণী।

বছরের বিভিন্ন সময়ে বেকারত্বের হারে হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে নানা বিষয় সম্পর্কিত। এর অন্যতম একটি নিয়ামক মৌসুম। যেমন—শীত ও বর্ষা মৌসুমে কাজের সুযোগ কম থাকে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দেশে যুব শ্রমশক্তি (১৫–২৯ বছর বয়সী) ধারাবাহিকভাবে কমছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এই সংখ্যা ২ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার। গত বছর ছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার। আর ২০২২ সালে ছিল ২ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার।

দেশে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর ৪৫ শতাংশই কৃষিতে নিয়োজিত। আর শিল্পে নিয়োজিত ১৮ শতাংশ, আর সেবা খাতে নিয়োজিত ৩৭ শতাংশ। ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কৃষি খাতে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা সেভাবে কমেনি। শিল্প ও সেবা খাতে কর্মে নিয়োজিতদের সংখ্যাও বেড়েছে সামান্য।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ সারা দেশের ৬৪ জেলায় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ২৩৫টি বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ মামলার মধ্যে ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৪৪টি দেওয়ানী মামলা এবং ২১ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৪টি ফৌজদারী মামলা।

সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ কে আবদুল মোমেনের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, ২০২১ সালের ১০ জুন থেকে ২০২৪ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৪৮টি দলিল ই-রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

ছোটবেলায় গানের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল। একটা গানের কলি এ রকম শুনেছিলাম : ‘খোকনসোনা বলি শোনো, থাকবে না আর দুঃখ কোনো, মানুষ যদি হতেই পারো।’

মা-বাবা এমন করেই তাদের সন্তানদের নিয়ে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখে থাকেন। কখনো-সখনো সে স্বপ্ন বাস্তবেও রূপ নেয়। আবার অনেক সময় সন্তান বড় হয় বটে, কিন্তু মানুষের মতো মানুষ হয় না। লালন গেয়েছিলেন, ‘এই মানুষে আছে রে মন, যারে বলে মানুষ রতন।’

মানুষের মধ্যে এই ‘মানুষ-রত্ন’ জেগে না উঠলে পরিবেশভেদে সে অমানুষ হয়, কখনো মানুষ নামের কলঙ্ক হয়, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, জুলুম, খুনাখুনি, দুর্বলের প্রতি সবলের আধিপত্য কি বেড়ে যাচ্ছে? বিবেকবোধ, মনুষ্যত্ব, উদারতা, লোকলজ্জা ইত্যাদি মানবিক গুণ ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে? ‘সেই মানুষ’ কোথায় গেল? কেন গেল? এর দায় কার?

আমরা বলি, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে মানুষরত্ন লুকিয়ে আছে। তাকে বের করে আনতে হয়, উপযুক্ত পরিবেশ ও শিক্ষা দিয়ে লালন করতে হয়, কাজে লাগাতে হয়। তারপর একটা মানুষ ‘মানুষ’ হয়। তাতে তার নিজের, সমাজের, দেশ ও দশের কল্যাণ হয়। উপযুক্ত সুশিক্ষার মাধ্যমেই কেবল মানুষকে প্রকৃত মানুষ, সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী এবং জনসম্পদে পরিণত করা যায়, সঠিক পথে চালানো যায়।

শিক্ষা দরকার প্রথমত নিজের সুষ্ঠু চিন্তা-চেতনাবোধ, পরিশীলিত বিবেক ও সচেতনতা, মঙ্গল-অমঙ্গল বোঝা, পেশা নির্বাচন, আদর্শ পরিবার গঠন, ভালো মন্দ পৃথক করতে পারার ক্ষমতা অর্জনের জন্য; সুখ-শান্তিতে বসবাসের উপযুক্ত প্রগতিশীল সামাজ গঠনের জন্য; উন্নত চিন্তা ও সেবার মাধ্যমে আদর্শ ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখার জন্য। দ্বিতীয়ত, সৃষ্টির কল্যাণ ও স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা, ইবাদত, উপাসনা, প্রার্থনা করার জন্য। তৃতীয়ত, নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুকুমার সৃষ্টিধর্মী প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্য।

প্রশ্ন, আমাদের দেশে কি সে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা ও পরিবেশ আছে? বর্তমানে সরকার প্রাইমারি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে। এটা ভালো। এতে শিক্ষার মান ও গুণগত পরিবর্তন কতটুকু হবে, প্রশ্ন থেকে যায়। শিক্ষার মান অনেকটাই পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। সরকারকে এদিকটা বেশি করে ভাবতে হবে। কর্মমুখী ও জীবনমুখী শিক্ষার দিকে যেতে হবে।

শিক্ষা এবং লেখাপড়া জানা বা অক্ষরজ্ঞান থাকা এককথা নয়। মানুষ শেখে সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে সামাজিক শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-দুটোর মানই ব্যর্থতার গ্লানিতে ভরা। শিক্ষার বর্তমান অবস্থা নিয়ে এ দেশের সচেতন মহল সম্যক অবহিত। এ অস্বস্তিকর অবস্থায় নির্বাক হয়ে কিংবা হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় একদম নেই। করণীয় করতে হবে, পরিবর্তন আনতে হবে; নইলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে বাধ্য।

সাধারণ স্কুল-কলেজের কথাই বলি। লেখাপড়ায় লেখাও নেই, পড়াও নেই। নেই চিন্তা করতে শেখা, বিশ্লেষণের ক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা, মানবিকতা, দেশপ্রেম, সামাজিক মূল্যবোধ, সত্যের সাধনা, চিন্তাধারার উৎকর্ষ, জানার পিপাসা, শিক্ষা নিয়ে ভাবুক মন, গভীর আত্মজিজ্ঞাসা বা অধ্যবসায়।

আছে শুধু নোটবই-গাইডবই বিক্রি, মোসাহেবি আর টিউশনি। সঙ্গে মুখস্থ কিছু উত্তর শিখে টিক চিহ্ন দিয়ে ওপর ক্লাসে ওঠার ব্যবস্থা। আছে অলীক কল্পনা, সার্টিফিকেট প্রাপ্তির তৃপ্ত ঢেঁকুর, বেকারত্ব, দলবাজির উদগ্র স্লোগান, মনোবৈকল্য, মিথ্যার বেসাতি, ভোগবাদী মানসিকতা। শিক্ষা থেকে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা বিদায় নিয়েছে কেন?

এসব দোষ তো আর ছেলেমেয়েদের দিয়ে পার পাওয়া যাবে না! বাবা-মায়ের দিকে, শিক্ষকদের দিকে, পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার দিকে চোখ তুলে তাকাতে হবে। হাতেগোনা অল্প কিছু ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শেখে, কিংবা জ্ঞানার্জন করে-তা শেখে তার নিজের আগ্রহের কারণে, সচেতন বাপ-মায়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, উপদেশ ও প্রেরণার কারণে।

এগুলোতে আত্মপ্রসাদে তৃপ্তির ঢেঁকুর না তোলাই ভালো। ছেলেমেয়েকে স্কুল-কলেজে পড়তে হয়, আবার শহর-গ্রাম নির্বিশেষে বাসায় টিউটর রেখে আলাদা তালিম নিতে হয়। লেখাপড়াটা আনন্দময় না হয়ে দুর্বিষহ ও ভীতিকর হয়ে ওঠে।

বর্তমান শিক্ষকদের সামাজিক অবস্থান ও শিক্ষকসুলভ অবস্থাও বেশ নাজুক। এটা তাদের অপকর্ম ও অপচিন্তার ফসল। শিক্ষকদের ইস্পাতকঠিন নৈতিকতা, ন্যায়নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। অনেক শিক্ষক নিজেদের আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে দুর্নীতি, ফাঁকিবাজি, অব্যবস্থা, বাতিল মতামতের প্রতি আনুগত্য, মোসাহেবি করে শিক্ষকতা পেশাকে সামাজিক অবস্থানের নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে গেছে এবং আত্মবিস্মৃত হয়ে জাত্যাভিমানী শিক্ষাগুরুর মর্যাদা হারিয়েছে।

এর প্রভাব সমগ্র জাতি ও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর পড়েছে। শিক্ষকদের আবার বেতনও কম, তাতে পেট চলে না। মেধাবীরা তাই শিক্ষকতা পেশায় আসতেও চান না। এ দেশে আদর্শ বৈশিষ্ট্যের শিক্ষকইবা বর্তমানে কজন! এ প্রজাতির শিক্ষক ক্রমশই বিলুপ্তির পথে।

শিক্ষার মান নিম্নমুখী, নৈতিকতার মান আরও নিম্নমুখী। মানবিকতা ও সততার স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে; বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত। তাহলে শিক্ষার চিকিৎসকরা কি ভুল ব্যবস্থাপত্র বাতলাচ্ছেন? চিকিৎসা কি ব্যর্থ হতে চলেছে? আমরা কি দিগ্ভ্রান্ত হয়ে গেছি? এক্ষেত্রে জাতির ভবিষ্যৎ কী? এ জাতি কি তাহলে অন্য কোনো সম্প্রসারণবাদী ভিনদেশি গোষ্ঠীর গোলামি করে খাবে? শিক্ষার আলো না থাকলে বুনো গাঢ় আঁধারে চারদিক ছেয়ে যাবে, এটাই প্রকৃতির অবশ্যম্ভাবী নিয়ম।

মাদ্রাসা শিক্ষায়ও কয়েকটা ভাগ। কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা এবং মক্তব/নুরানি ও ফুরকানিয়া/হাফেজিয়া মাদ্রাসা। এখানে সমগ্র জীবনে সৃষ্টি-স্রষ্টার চিন্তাধারা, উদ্দেশ্য ও জীবন-কর্ম শুধু পরকালের বেহেশত নসিবের সরু গলিতে আটকে গেছে। ধর্মটাকেই পুরো পেশা বানিয়ে ছেড়েছে। উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবনের শিক্ষা নেই বললেই চলে।

ভিন্ন কোনো উচ্চমানের পেশায় যাওয়ারও প্রচেষ্টা নেই। মাদ্রাসা শিক্ষা মুসলমানদের সভ্যতা, ইমান, বৈশিষ্ট্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যকে প্রাগ্রসর প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রগতিশীল না করে অজ্ঞতা ও চিন্তার বিকলতা দিয়ে পেছনের দিকে ফিরিয়ে আদিম যুগে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ সেখানেও অবিকশিত প্রতিভাবান ছেলেমেয়ে রয়ে গেছে।

মুসলিম সভ্যতার ইতিহাস বলে-মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সাহিত্য-শিল্প-দর্শন ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই স্থান দখল করে রেখেছিল। মুসলমানরা রসায়নবিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আলোকবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, অস্ত্রচিকিৎসা, ভূ-তত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য দেখিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রপথিক হিসাবে ইতিহাসের পৃষ্ঠাকে অলংকৃত করে রেখেছিল।

বিগত চল্লিশ বছরে মক্তব-মাদ্রাসা অনেকগুণ বেড়েছে। কোরআন-হাদিস পড়া, মিলাদ-মহফিল করা লোক অসংখ্য বেড়েছে, বেড়েছে শ্রোতার সংখ্যাও। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেকারত্ব। বাড়েনি সমাজে, অফিস-আদালতে কর্মরত সুস্থ চিন্তা-করা, জ্ঞানী-দূরদর্শী, কর্মঠ সৎ মানুষের সংখ্যা-তাই পরিবেশ গেছে নষ্ট হয়ে। গলদটা কোথায়? মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষা-কর্তৃপক্ষের বিষয়টি আশু ভাবনার খোরাক।

হালকা আবেগ ও গোঁড়ামি দিয়ে সুশিক্ষিত ও প্রাগ্রসর জাতি গড়া যায় না। শিক্ষার ভিত্তিমূলে যার যে ধর্ম, তাকে সে ধর্ম সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে শিখতে হবে। ধর্ম থেকে আহরিত মানবতার ধর্ম জীবন চলার পাথেয় হিসাবে নিতে হবে। সৃষ্টি ও স্রষ্টার কল্যাণে তা কাজে লাগাতে হবে। যার যেমন খুশি, উচ্চশিক্ষা কিংবা টেকনিক্যাল শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ পেশায় জীবন পরিচালনা করবে।

এ বিশ্বে বিভিন্ন বিষয়ে মতবাদের অভাব নেই। মানবজাতির একটা অংশ কুরুচিপূর্ণ ও বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন; এটা তো সৃষ্টির প্রথম থেকেই আছে। এরা মনুষ্য প্রজাতিকে কিছু কিছু উদ্ভট-উদ্ভ্রান্ত মতবাদ দিয়ে অন্যান্য ইতর প্রাণীর পর্যায়ে নিয়ে দাঁড় করাতে চায়। এদের কাছে পুরো মানবসমাজ ও মানবসভ্যতা আত্মসমর্পণ করতে পারে না। এদের অনুপাত যত বাড়বে, বিশ্বশান্তি-স্থিতি ততো বিঘ্নিত হবে। তাই কোনো দ্ব্যর্থ-মতবাদ প্রয়োগ করতে গিয়ে অদূরদর্শিতা ও নির্বুদ্ধিতা করা একেবারেই চলে না।

এতে এ বিশ্বচরাচরে মানবজাতির সাবলীল ও সৃষ্টি-সেরা জীবনযাপন দুরূহ হয়ে পড়ে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ আস্তিক-নাস্তিক কিংবা সন্দিগ্ধমনা হলে কারও কিছু যায়-আসে না। এটাকে মেনে নেওয়াই ভালো। কিন্তু হালকা জ্ঞান দিয়ে যে কোনো ধর্মেরই খারাপ দিক নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি কখনোই ভালো না, বা কুৎসিত মন্তব্যও করা উচিত না। তা কেউ ধর্ম পালন করুক, চাই না-করুক।

উন্নয়ন কথাটা ভাবার আগে জনগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়নের কথাটা আগে চলে আসা দরকার। শিক্ষার উন্নয়ন মানে জনগোষ্ঠীর মানসিকতার উন্নয়ন। নির্মাণকাজে রডের ব্যবহারের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার, একটা বালিশ উপরতলায় উঠাতে হাজার টাকার কাছে ব্যয় এবং এমনই শত-সহস্র বাস্তব ঘটনাকে উদাহরণ হিসাবে অবতারণা করা যাবে। আমি উন্নয়ন বলতে অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বুঝি না; কোনো দেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মানসিক উন্নয়নের প্রশস্ততাকে বুঝি।

ইস্পাত ছাড়া যেমন খালি লোহার ছুরি অচল, তেমনি উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া মানসিক উন্নয়নের প্রশস্ত পথের ভাবনাও অবান্তর। আগে জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন, সে সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্পোন্নয়নসহ শতেক বহুমুখী উন্নয়ন চলুক। তখন জাতীয় সম্পদের অপব্যয়, অপচয় এত বেশি হবে না, সিস্টেম লসও সীমা ছাড়াবে না। কারণ সুশিক্ষাপ্রাপ্ত সুনীতির একজোড়া উন্নত হাত আর কুটিল বুদ্ধিতে ভরা চোরা হাত কোনোক্রমেই এক হতে পারে না। আমরা দেশের টাকা খরচ করে কৌশলী চোর-ডাকাত কিংবা কুখ্যাত পকেটমার কোনোভাবেই তৈরি করার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারি না।

পেশাগত কারণে অনেক সময়ই বিভিন্ন সেমিনার, কনফারেন্সে যেতে হয়, নানা জনের নানা কথা শুনতে হয়, বলতে হয়। দেখেছি, যিনি যে দেশে লেখাপড়া করে এসেছেন, তাদের অনেকেই সে দেশের সংস্কৃতি, সামাজিক বুনন, চিন্তাধারা, মূল্যবোধ, লেখাপড়ার সিলেবাস হুবহু নকল করে, কপি অ্যান্ড পেস্ট করে এ দেশে চালু করে দেশকে সে দেশ বানাতে চান, উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাওয়ার নুশকা বাতলান।

আমি বরাবরই এতে দ্বিমত পোষণ করি। পশ্চিমা সভ্যতার হুবহু অনুকরণ করতে গিয়ে এ দেশের ছাত্রসমাজ ও যুবসমাজ খুব ভোগবাদ-ক্লান্ত, দিগভ্রান্ত, জীবনের উদ্দেশ্য-বিভ্রান্ত এবং নীতিভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্তঃসারশূন্য গন্তব্যের পেছনে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটতে ছুটতে তারা দিশেহারা। তাদের মধ্যে দেশীয় মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশি বাঙালি আজীবন এদেশীয় বাঙালি। প্রতিটি জাতির নির্দিষ্ট কিছু স্বকীয়তা রয়েছে; রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি, সামাজিক বুনন, মনমানসিকতা, চিন্তাচেতনা।

অন্য কোনো দেশের ভালো কিছু থাকলে সেটা আমরা আত্মস্থ করতে পারি, দেশের উপযোগী করে গ্রহণ করতে পারি। নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন হতে দিতে পারিনে। জাতি গঠনে এটাও একটা শিক্ষা। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী তার অস্তিত্ব রক্ষায় এবং ক্রমবিকাশে নিজস্ব সংস্কৃতি, চিন্তাচেতনা, দেশীয় মূল্যবোধ, আত্মোন্নয়ন ও দেশ গড়ার উপযোগী শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাক-এটাই সর্বোত্তম পন্থা।

প্রফেসর ড. হাসনান আহমেদ : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

 

ঢাকাঃ  সম্প্রতি একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট শিক্ষকদের সঠিক আচরণ এবং যে কোনো বিষয়ে রাজনীতি টেনে না আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

হুগলি উইমেন্স কলেজের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানির মামলা খারিজ করে আদালত এ পরামর্শ দিয়েছেন।

এই আচরণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১.পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের সম্মান করে কথা বলতে হবে।
২. বিষয় এবং শিক্ষণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে।
৩. শিক্ষা সংক্রান্ত এবং প্রশাসনিক লেনদেনে সৎ হতে হবে।
৪. শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনায় পেশাদারিত্ব থাকতে হবে, সীমা অতিক্রম করা যাবে না।
৫. শিক্ষার্থীদের কাজের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে।
৬. শিক্ষায় দক্ষতা বাড়াতে আপটুডেট থাকতে হবে।
৭. সহকর্মীদের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব রাখতে হবে।
৮. শিক্ষাদান, গবেষণা এবং শিক্ষার্থী সহায়তা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ  প্রকল্পে প্রথম যোগদানের তারিখ থেকে প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা গণনা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (৬ মে) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা রাজস্বখাতে যোগদানের তারিখ থেকে গণনা করার জন্য বিগত ৩০.০৮.২০২৩ খ্রি. তারিখ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত অফিস আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা চাকরি নিয়মিতকরণের (প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ) তারিখ থেকে গণনা করার নির্দেশনা চেয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষকগণের দায়ের করা একটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে অদ্য  মহামান্য হাইকোর্ট পূর্বে জারীকৃত রুল এবসোলিউট করে রিটকারী শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা চাকরি নিয়মিতকরণের (প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ) তারিখ থেকেই গণনা করার নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করেন।

আদালতে রিটকারী শিক্ষকদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

রিট পিটিশনের বিষয়ে রিটকারী শিক্ষকদের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, রিটকারীগণ দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক। রিটকারী শিক্ষকগণ প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত দুইটি প্রকল্পের অধিতে যথাক্রমে ২০০১ এবং ২০০৩ খ্রি. সালের বিভিন্ন তারিখে যথাযথ পক্রিয়ায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ২০০৩ সালে সরকার প্রকল্পের অধিতে কর্মরত শিক্ষকদের রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০০৫ সালে রিটকারী শিক্ষকগণকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ থেকে তাদের চাকরি নিয়মিতকরণ করে অফিস আদেশ জারি করা হয়। সেই অনুযায়ী প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ থেকে চাকুরীকাল গণনা করে রিটকারী শিক্ষকদেরকে টাইমস্কেল সহ অন্যান্য সকল সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজস্ব বাজেটের পদে নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা, ২০০৫’ এর বিধি ৬-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ‘এই বিধিমালার অধীন নিয়মিতকৃত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাহার চাকুরী নিয়মিতকরণের তারিখ হইতে গণনা করা হইবে’। কিন্তু বিগত ৩০.০৮.২০২৩ খ্রি. তারিখ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা রাজস্বখাতে যোগদানের তারিখ থেকে গণনা করে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য জ্যৈষ্ঠতা তালিকা তৈরি করার নিদের্শনা দিয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করেন যাহা উক্ত বিধিমালা সরাসরি লঙ্গন। উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে বিধি বহির্ভূতভাবে প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা রাজস্বখাতে যোগদানের তারিখ থেকে গণনা করার জন্য ইতঃপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চিঠি পত্র জারি করেছেন এবং উক্ত শিক্ষকদের বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন। রিটকারী শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিটকারী শিক্ষকগণ উক্ত অফিস আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশনটি দায়ের করেন। অদ্য উক্ত রিট পিটিশনটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে মহামান্য আদালত রিটকারী শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা চাকরি নিয়মিতকরণের (প্রকল্পে ১ম যোগদানের তারিখ) তারিখ থেকেই গণনা করার নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করেছেন।

রিটকারীরা হলেন– মো. শাহিদার রহমান, আবু সৈয়দ মোস্তফা কামাল, মো. আব্দুল আউয়াল, মোছা. মমতাজ বেগম, মো. রোকনুজ্জামান খান (টেক্কা), মোছা. নাজনীন আক্তার বিপ্লবী, স্মৃতি কনা বর্মণ, মোছা. সোহাগী বেগম, মোছা. মাহফুজা বুলবুল, মোছা. রেজিনা বেগমসহ বিভিন্ন জেলার মোট ৫৯৩ জন শিক্ষক।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪

আমি সাংবাদিক, আমি সম্পাদক, নেতা কিংবা প্রভাবশালী কেউ। কিন্তু এ সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে পারি না, কিছুই করা হয় না। বক্তৃতা, বিবৃতি, টক শো'তে সমাজকে উদ্ধার করতে, দেশকে এগিয়ে নিতে কতই না বাহাদুরি আমার।

অথচ সমাজ বিনষ্টকারী, তরুণ-যুবদের নষ্ট পথের দিশারী, বেশ পরিচিত এক মাদক ব্যবসায়ীকে ভালো হওয়ার সুযোগটুকু দিতে পারি না আমি।

ওই মাদক ব্যবসায়ী আকুতি জানিয়ে বলেছিল, আমি অন্ধকার পথ ছেড়ে আলোর পথে আসতে চাই। নোংরা কর্দমাক্ত পথ চলতে চলতে ক্লান্ত আমি। গাড়ির ড্রাইভিং ভালো জানি, লাইসেন্সও আছে - তবে মেয়াদোত্তীর্ণ। একটা লাইসেন্স করে ড্রাইভিংয়ের চাকরি দিয়ে দেন প্লীজ। ৮/১০ হাজার টাকা বেতন হলেও হবে।

বিশ্বাস করুন আমি সব ছেড়ে ভালো হয়ে যাবো। তার করুন আকুতিতে মন গলেছে আমার,,, কিন্তু দুই মাসেও তাকে লাইসেন্স করিয়ে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারিনি।

আরেকজন তরুণীকে চিনি আমি। যিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আর প্রতি ভোরে কোরআন তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে দিন শুরু হতো তার।

নিজের মা, দুই সন্তান আর দুই ভাতিজির সংসার নির্বাহ করতে গিয়ে দিশেহারা ওই নারী। অনেক ঘোরাঘুরি করে একটা গার্মেন্টেও একটা চাকরি জোটাতে পারেননি। উপায়ন্তরহীন অবস্থায় বারের ড্যান্সার হয়ে কোনমতে জীবন চালাচ্ছেন।

এরমধ্যে তিন ওয়াক্তের নামাজ বন্ধ হয়ে গেছে, বন্ধ হয়েছে কোরআন তেলওয়াতও। কিন্তু সম্ভ্রম ধরে রাখা ডান্সারের আয়েও সংসারের চাকা চলছে না তার। সব কিছুতে রাজি থাকলে তিন বেলা খাওয়া পড়ার নিশ্চয়তা মিলবে।

কিন্তু ওই নারী এখন হন্যে হয়ে একটা বৈধ কাজ খুঁজছেন, নিদেনপক্ষে কোনো দোকানের সেলস এর কাজ হলেও চলবে তার। মাসে ১৪ হাজার টাকা বেতন হলেও ১২ ঘণ্টা করে শ্রম দিতে তার অনিহা নাই।

ভালো থাকার নিদারুণ আকুতিতে মন গলেছে আমার, তার চোখের পানি আমাকেও ব্যথিত করেছে,,, কিন্তু তাতে কি? আমিতো তার জন্য একটা সেলসম্যানের চাকরিও জুটিয়ে দিতে পারিনি।

আরেকজন তরুণকে চিনি আমি, যে অসহায় মাকে গ্রামের বাড়ি রেখে এক পোশাকে ঢাকায় এসেছে। বলে এসেছে, মা ঢাকায় কামলাগিরি করে হলেও তোমার খরচ পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। কলেজ পড়ুয়া ছেলেটি চার মাস যাবত ঢাকায় ঘুরে ঘুরে বড়ই ক্লান্ত।

এখানে চাকরি বাকরি দূরের কথা নিজের খাওয়া থাকারও নিশ্চয়তা করতে পারেনি। বেশ কদিন ধরে কমলাপুর স্টেশনেই রাত কাটায় সে, দিনে একবার খাওয়ারও পথ নেই তার।

দুদিনের অনাহারী অবস্থায় এনে তিন দিন আমার বাসায় রেখেছি, শেষ দিন দুপুরে খাইয়ে ৫শ টাকা ধরিয়ে বিদায় দিয়েছি তাকে। গত ১০/১২ দিন সে কোথায় থাকছে, কি খাচ্ছে, তার মায়ের অবস্থাই বা কি সেসবের কিছুই জানা হয়নি আমার।

প্রতিবেশী অপরাধীকে মাদক ব্যবসা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছিল শরিফুল। একই টিনশেড বিল্ডিংয়ে ভাড়া থাকায় রাত দিন মাদকসেবীদের আনাগোনায় স্বপরিবারে শরিফুলের অবস্থান করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে।

এ জন্যই অনুরোধ করেছিল যে, বাসার বাইরে মাদক ব্যবসা চালাতে। এতে ওই মাদক ব্যবসায়ী মাইন্ড করেছে। তাই সে রাতেই বিশ পিচ ইয়াবা দিয়ে উল্টো শরিফুলকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়।

কোলের শিশু সন্তান নিয়ে খুব বিপাকে পড়েন শরিফুলের স্ত্রী। বলেন, মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতনে মুদি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করা শরিফুল জীবনে পান, সিগারেট, চা পর্যন্ত পানাহার করেন না।

যে রাতে শরিফুলকে গ্রেফতার হন পরদিন সকালে রান্নার মত একমুঠো চাল কিংবা বাজার বলতে কিছুই ছিল না তার ঘরে। হাতে ছিল না টাকা পয়সাও। কি করবে কোথায় যাবে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না শরিফুলের অসহায় স্ত্রী। বিলাপ কান্না ছাড়া যেন কিছুই করার ছিল না তার।

যাকে পাচ্ছিলেন তারই হাত পা জড়িয়ে ধরে তিনি শুধু শরীফুলকে মুক্ত করে দেয়ার আর্তনাদ করছিলেন। বলছিলেন, স্বামীকে ছড়াতে পারলে এক মুহূর্তও আর ঢাকা থাকবেন না তিনি, চলে যাবেন ভোলার গ্রামে। তার কান্নাকাটিতে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যন্ত্রণায় ব্যথিত হয়ে নিজের মনটাও।

থানার সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, শরিফুলকে গ্রেফতারের পরদিনই আদালতে চালান দেয়ায় জেলে পাঠানো হয়েছে তাকে।

এবার উকিল, আদালত, জামিন আবেদনের দীর্ঘ সূত্রীতায় আটকে পড়ে শরিফুলের জীবন। অপরদিকে মাত্র ৭/৮ দিনের ব্যবধানে ঘর ভাড়া প্রাপ্তির অনিশ্চয়তায় শরিফুলের তরুণী স্ত্রীকে বিতাড়িত করে দিয়েছে বাড়ির মালিক।

শহরের কিছু না চেনা মেয়েটি তার কোলের শিশু নিয়ে কোথায় ঠাঁই জুটিয়েছে, কোথাও কি মিলছে দু'মুঠো খাবার? সে খবরটুকু জানাও সম্ভব হয় না আমার।

জীবনের এমন ছোট ছোট আর্তি আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে। নানা সীমাবদ্ধতায় সেগুলোর দায় এড়িয়ে চলি আমরা, গায়ে মাখাই না।

মনে করি উটকো ঝামেলা। অথচ আমাদের কারো কারো উদ্যোগহীনতায় একেকটি জীবন ঝরে যায়, ধ্বংস হয় অজস্র পরিবার।

আসলে বক্তৃতার মঞ্চে, ফেসবুকের টাইম লাইনে অনেক কিছু বলা যায়, অনেক কিছুই করে ফেলা যায় কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি কঠিন।

সেখানে কারো জন্য মঙ্গলজনক কিছু করা হয়ে উঠে না সহজে। এরজন্য প্রয়োজন সমমনাদের সমন্বিত উদ্যোগ, এগিয়ে আসার আন্তরিকতা,,,,

লেখক : সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র অনুসন্ধানী সাংবাদিক

শিক্ষাবার্তা/জামান/০৬/০৫/২৪

magnifiermenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram