বৃহস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪

ঢাকাঃ দেশের ইতিহাসে বড় হৃদয় বিদারক ঘটনা সাভারের রানা প্লাজা ধস। এই ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ ২৪ এপ্রিল। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন দুই হাজারের বেশি মানুষ। জীবিত উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় এই শিল্প দুর্ঘটনা।

কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছরেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাননি নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা।

এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। হত্যা মামলার ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এত দিনেও বিচার শেষ না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে শ্রমিক মৃত্যুর এই মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অপরদিকে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনে দায়ের করা মামলাটিও হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে। ফলে, আইনি জটিলতার কারণে এগোচ্ছে না এই মামলার কার্যক্রম।

শ্রমিক মৃত্যুর হত্যা মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করে আসামিপক্ষ। হাইকোর্টে পাঁচ বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকে। পরে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত এক বছর তিন মাসে এ মামলায় অভিযোগপত্রের ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমদ্দার মামলাটি সম্পর্কে জানান, মামলাটিতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে। এরপর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিলে আসামিরা সেই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান। শুরু থেকে মামলাটি বিভিন্নভাবে সময় নষ্ট হয়েছে। অন্যান্য আইনগত বাধা পেরিয়ে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এসেছে। কিন্তু সাক্ষীরা ঠিকমতো হাজির না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

মামলায় কারাগারে থাকা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে জামিন স্থগিতের আবেদন জানায়। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ বছরের ১৫ জানুয়ারি সোহেল রানার জামিন স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির বেঞ্চ।

আইন না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে ওই সময় সোহেল রানাসহ ১৩ জনকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তৎকালীন (রাজউক) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার সাক্ষী করা হয় ১৩০ জনকে।

জানতে চাইলে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছরের ১৯ নভেম্বর ঢাকার সাবেক জেলা ও দায়রা জজের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালত বিচারিক ক্ষমতা বলে হত্যা মামলার পাশাপাশি ইমারত নির্মাণ আইনের মামলাটিও নিয়ে যান। যাতে একইসঙ্গে দ্রুত এই দুই মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। তবে উচ্চ আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যায়নি। মামলাটির এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। এই মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে সবাই জামিনে আছেন।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুই মামলায় আট বছর আগে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনি বলেন, মামলা দুইটির বিচার শেষ না হওয়ায় আসামি সোহেল রানা কারামুক্ত হতে পারছেন না। তার মতে আসামি সোহেল রানা বিচারহীনভাবে কারাগারে আটক রয়েছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, রানা প্লাজা নির্মাণে ছয় তলার অনুমোদন থাকলেও আট তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। এ কারণে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক মফিদুল ইসলাম।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ এস এম জিয়াউর রহমানের আদালতে বিচারাধীন। এ মামলায় মোট ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছেন আদালত। সর্বশেষ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক এম এ মফিদুল ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। তবে তার জেরা শেষ না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান রয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

রানা প্লাজা ধসের মামলাকে একটি দুর্ঘটনার মামলা উল্লেখ করে এ বিষয়ে আসামি রানার আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, এই মামলায় রানা গত ১১ বছর ধরে জেলহাজতে রয়েছে। বাকি সবাই জামিনে পেলেও রানা জামিন পাচ্ছেন না। মামলার রায়ে যা হওয়ার তাই হবে। এভাবে বিনা বিচারের ১১ বছর জেলে থাকা মানবিক দিক থেকে অন্যায়। তাই আদালতের উচিত হয়তো মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করা, নয়তো আসামিকে জামিন দেয়া। আশা করছি এ মামলার রায়ে রানাসহ অন্যান্য আসামিরা খালাস পাবেন।

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম শেষে মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছি।

এ মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার মেয়র রেফায়েত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার কামাল, আমিনুল ইসলাম, নিউওয়েব স্টাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইথার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাকটার এবং রেজাউল ইসলাম।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় তিন মামলার বাইরে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলাটিই কেবল নিষ্পত্তি হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট এ মামলার রায় ঘোষণা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর তৎকালীন বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস। রায়ে সোহেল রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই মামলায় তার মা মর্জিনা বেগমকেও তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রানা প্লাজা ধসে হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় আজও কাঁদছেন তাদের স্বজনরা। পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন অসংখ্য শ্রমিক। এ ঘটনার ১১ বছরেও ভবন মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

রানা প্লাজার সামনে অঝরে কাঁদছিলেন ৭০ বছর বয়সী সাফিয়া বেওয়া। রানা প্লাজা ধসে মেজ ছেলে লাল মিয়াকে হারিয়েছেন তিনি। লাল মিয়া কাজ করতেন ভবনটির তৃতীয় তলায়।

এ ঘটনায় বিচার না হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে নেতারা বলছেন 'রানা প্লাজা ধসের পর থেকেই আমরা বেশ কয়েকটি দাবি তুলে আসছি। গত ১১ বছরেও আমাদের দাবিগুলো পূরণ হয়নি। এত বছর পর আমরা একই দাবি জানাচ্ছি।'

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনা একটি হত্যাকাণ্ড। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, এটা সবার দাবি।' এ ঘটনায় আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, ‘১১ বছরেও আমাদের কোনো দাবি পূরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সুদৃষ্টি আশা করছি।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ তাপদাহে পুড়ছে দেশ। দিনদিন তাপমাত্রার পারদ ওপরের দিকে উঠছে। প্রখর তাপে বিপর্যস্ত জনজীবন। গরম ও অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় হিট অ্যালার্টের (তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা) মেয়াদ আরও তিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানা গেছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান এ তথ্য জানান।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, আমরা এর আগে তিন দিনের যে হিট অ্যালার্ট জারি করেছিলাম তার মেয়াদ আজ শেষ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে আরও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হবে। কারণ, আপাতত বড় পরিসরে বৃষ্টি হয়ে তাপপ্রবাহ দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা হিট অ্যালার্ট জারি করে সরকারকে জানিয়ে দিই। সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্টরা তাদের করণীয় যা সেটা করবে।

তিনি বলেন, সারাদেশের তাপমাত্রা গতকালের থেকে আজ কিছুটা বেড়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ পুরোপুরি দূর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা দেখছি যে এটা মে মাসের ২ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এরপর হয়তো বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এর আগে পর্যন্ত বড় পরিসরে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। স্থানীয়ভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে।

মো. আজিজুর রহমান বলেন, আপাতত দিনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তাপমাত্রা আর খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় দেওয়া পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিবিরাজ করতে পারে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

চট্টগ্রামঃ জেলার  রাঙ্গুনিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই ছাত্র নিহতের ঘটনায় আজ বুধবার তৃতীয় দিনের মতো চলছে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। এরপর দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে মোট চার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি তোলেন তারা।

শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, বাস মালিক সমিতি ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছে। এ টাকা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা হলো। নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে দুই কোটি টাকা করে চার কোটি টাকা দিতে হবে। কারণ, শাহ আমানত পরিবহন সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগর এলাকায় ওভারটেক করতে গিয়ে বাসের চালক দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়েছেন।

চুয়েটঃ এ সময় শিক্ষার্থীরা পাঁচটি নতুন বাস ও চারটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বাস ও একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, তারা চারটি অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত ক্যাম্পাসে দেখতে চান। আর বাস কেনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে দ্রুত চিঠি পাঠানো এবং এসব চিঠি নোটিশ আকারে শিক্ষার্থীদের মেইলে পাঠাতে হবে।

শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, মানবিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুমন দে আন্দোলন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। তাকে বরখাস্ত করতে হবে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রম পুনর্নির্ধারণ করে নোটিশ আকারে জানানোর দাবি তোলেন। তারা বলেন, আজ বিকেল ৪টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীর মেইলে জানাতে হবে। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

সকালে সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নে চুয়েট ক্যাম্পাস অবস্থিত। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের একটি অংশ পড়েছে চুয়েট ক্যাম্পাসে। আজ সকাল ১০টার দিকে সড়কে গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা সড়কে মৃত্যুর বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

গত সোমবার আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার জিয়ানগরে বাসের ধাক্কায় মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। এ ছাড়া আহত হন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু। দুর্ঘটনার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

সালাউদ্দিন মোল্লাঃ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে ধনী দরিদ্র সব দেশকেই ফেলে দিয়েছে জীবন-জীবিকার কঠিন বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে। বৈশ্বিক যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা, সামাজিকতা, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রে এক অদৃশ্য ভাইরাস আজ তছনছ করে ফেলেছে দেশের অর্থনীতি।

এই বাস্তবতায় আগামী বাজেট প্রণয়ন সরকারের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর গত কয়েক বছরে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিতে হবে।

তাছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও শ্রমিক এবং প্রান্তিক চাষীদের কর্মহীন হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেটে কর্মসংস্থান, শিল্প ও কৃষি খাতে উৎপাদন, সার্ভিস সেক্টর সচল করাসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার করার মত উপাদান থাকতে হবে। অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সৃজনশীল উদ্ভাবন এবং গার্মেন্টসসহ ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতির উন্নতি করা ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করে জনগণের রক্ষা করাই সরকারের জরুরি করণীয়। আগামী বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক দক্ষতা ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

প্রবৃদ্ধি কি হবে সেটা এখন ভাবার বিষয় নয়, এখন মূল ভাবনার বিষয় হচ্ছে মানুষের জীবন ও জীবিকার সমন্বয় করে বৃহত্তর অর্থনীতির স্বার্থে কীভাবে বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অর্থনীতির গতি ফেরাতে পণ্যের চাহিদা ও যোগানের সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখতে হবে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে বর্তমানে চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে (১) শিক্ষা ব্যবস্থাপনা (২) স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা (৩) কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের ব্যবস্থাপনা (৪) জরুরি সেবা নিশ্চিতকরণ (৫) রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা (৬) আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতা (৭) আইন শৃঙ্খলা ও সার্বিক সমন্বয় উল্লিখিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। আগামী বাজেটে যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে তা হচ্ছে- কোথায় অর্থ খরচ করা হবে আর সেই অর্থ আসবে কোন জায়গা থেকে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া, মূল্য সংযোজন কর, আমদানি শুল্ক, আয়কর, সম্পূরক শুল্কের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। আগামী বাজেটে দেশের শিক্ষা ও কৃষি খাতের জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে। বাজেটে সবচেয়ে বেশি নজর রাখতে হবে শিক্ষা খাত এই খাতেও সর্বোচ্চ ভর্তুকি রাখতে হবে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক সংকটের মধ্যে অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্য আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখতে হবে। বাজেট নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে। বাজেটে সরকারি অপচয় রোধ করতে হবে।

আগামী বাজেটে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও গবেষণা, বেকারত্ব ভাতা, পেনশন ভাতা, শিশু প্রতিপালন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, অবসর ভাতা, আবাসন সহায়তা, স্বাস্থ্য ভাতার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। বাজেটে সবুজ শিল্পায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতি উদ্ভাবন সমন্বিত শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্য ইকুইটি ম্যাচিং তহবিল গঠন করা যেতে পারে।

বৈশ্বিক মন্দার কারণে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ায় আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর কমবে, ফলে রাজস্ব কমে যাবে, এই পরিস্থিতিতে অর্থসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উৎস সমন্বয়ে সমন্বিত কৌশল নিতে হবে। প্রথমত, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে, বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ ভর্তুকি বাদ দিতে হবে। সরকারের অতিরিক্ত জনবল ইত্যাদি বিষয়ে ব্যয় কমাতে হবে।

দ্বিতীয়ত, সহজে কর আদায়ের খাতগুলি বের করতে হবে, যেমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পন্থায় কর ফাঁকি দেয় তাই ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল সক্রিয় করে কর আদায় বাড়ানো যেতে পারে। তাছাড়া দেশি কোম্পানিগুলোকে যে কর সুবিধা দেওয়া হয় তা পুনঃনিরীক্ষণ দরকার। তৃতীয়ত, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে বিদেশি অনুদান বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। চতুর্থত, র্দীর্ঘমেয়াদি কম সুদের হার ও গ্রেস পিরিয়ড সম্পন্ন বিদেশি ঋণ নিতে হবে। পঞ্চমত, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যাংক খাত হতে আর ঋণ নেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের অর্থের জোগান দিতে হবে।

লেখকঃ  সহকারী পরিচালক (অর্থ)) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ঃ চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে পানিসংকটের শঙ্কা ও শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে পূর্বনির্ধারিত গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গ্রীষ্মকালীন ছুটি পিছিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির সঙ্গে সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সম্মেলনকক্ষে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুপুরে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

ছুটি পুনর্বিন্যাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ৫ থেকে ৯ মে ও ১৬ থেকে ২৪ জুন ঈদুল আজহার ছুটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের কারণে পানিসংকটের শঙ্কা ও শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ছুটিগুলো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। পুনর্বিন্যস্ত ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা ৯ থেকে ২৭ জুন এবং অফিস ৯ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ৩০ জুন থেকে যথারীতি আবার ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ২১ এপ্রিল জরুরি সভায় ২ মে ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিভাগগুলো প্রয়োজন মনে করলে ৬ জুন পর্যন্ত অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিভিন্ন গ্রুপ ও নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের ফেসবুক গ্রুপে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আফরোদিতি জামান লিখেছেন, ‘রাজশাহীতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করল প্রশাসন...!’ মোহাম্মদ রাওফিল নামের একজন লিখেছেন, ‘এটা কী আদৌ ভালো সিদ্ধান্ত হলো? গ্রীষ্মকাল শেষ হওয়ার পর গ্রীষ্মের ছুটি!’

তবে অনেকেই পক্ষে মত দিয়েছেন। সাকলাইন মোস্তাক নামের একজন লিখেছেন, ‘যথার্থ ও সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত।’ মোস্তাফিজুর রহমান ওই সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন দিয়ে লিখেছেন, ‘ভালো সিদ্ধান্ত। তবে ক্লাসগুলো অনলাইনে হলে ভালো হতো।’

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান গ্রীষ্মের ছুটি সমন্বয় করার কথা তুলে ধরে ওই গ্রুপে একটি পোস্ট করেছিলেন। তিনি একসঙ্গে সব ছুটি দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে লেখেন, ‘...ভেঙে ভেঙে ছুটি দেওয়ায় ক্লাস-পরীক্ষার নিয়মিত ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে এবং বারবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করায় বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।’ এ জন্য তিনি গ্রীষ্ম ও ঈদের ছুটি সমন্বয়ের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মতামত চেয়েছিলেন। ওই পোস্টের এক দিন পর আজ প্রশাসন ছুটি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই কাঠফাটা রোদে, প্রচণ্ড দাবদাহে, হাঁসফাঁস গরমে আর বিদ্যুতের বাঁদরামির মধ্যে পূর্বনির্ধারিত গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করে ঈদের ছুটি বাড়ানো হলো। বাহ্‌! ভাবতেই কি ভালো লাগছে! ঈদের লম্বা ছুটির আনন্দে বাতাসে শরীর শীতল হয়ে আসছে! রৌদ্রস্নান করে শরীর একটু ঠান্ডা করে নিতে মন চাইছে!’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

ঢাকাঃ সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. খাদেমুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ প্যানেলের প্রার্থী হিসেবে মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলরদের ভোটে তিনি সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। ড. খাদেমুল ইসলাম রাশিদাজ্জোহা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর দেড়টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং দুপুর তিনটার দিকে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এরপরে একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশন শেষে রাত সাড়ে সাতটার দিকে ভোট গণনা শুরু হয় এবং সাড়ে ৮টার দিকে ভোট গণনা শেষ হয়। ভোট গণনা শেষে সিনেট হলে নির্বাচনের ফল প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু হাসান। নির্বাচনে ৩৪৬ জন ভোটারের মধ্যে ২৮৬ জন ভোট দেন। সিন্ডিকেটে ২টি পদের বিপরীতে ৫ জন এবং সিনেটে ৫টি পদের বিপরীতে ১১জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এবারের সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের একটি অংশ ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে একটি প্যানেলে অংশ নেন। অন্যদিকে, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের আরেকটি অংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা জোট করে ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি প্যানেল দেন। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে নির্বাচন করা সাত জনই নির্বাচিত হন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

ঢাকাঃ  আর্জেন্টিনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট কমানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। সরকারের এই ব্যয় সংকোচন নীতির প্রতিবাদ জানাতে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের সড়কে নেমে আসেন তারা। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলের গৃহীত কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতির প্রতিবাদে এবারই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।

বুয়েন্স আয়ার্সের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন পেড্রো পাম। তার বয়স এখন ৮২ বছর। এরপরও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট কমানোর প্রতিবাদে শামিল হতে এসেছেন তিনি। পেড্রো পাম বলেন, আমি এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষা করতে এসেছি।

জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্স বিভাগের শিক্ষক ইভান মাসারি বলেছেন, বিনামূল্যে শিক্ষাকে রক্ষা করতে হবে। কারণ সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার সর্বোত্তম উপায় এটি।

আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি বর্তমানে অনেক বেশি। কিন্তু গত বছরের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একই পরিমাণ বাজেট দিয়েছে সরকার। এতে বরাদ্দকৃত বাজেটের প্রকৃত মূল্য ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এমন পরিস্থিতি বুয়েন্স আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর রিকার্ডো গেলপি সতর্ক করে বলেছেন, বাড়তি অর্থ বরাদ্দ না দিলে তিন মাসের মধ্যে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

দেশের পাবলিক সেক্টরে ব্যাপক কাটছাঁট করে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত বছর ক্ষমতায় আসেন জাভিয়ের মিলে। বিভিন্ন ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে বাজেট ঘাটতি এড়ানো গেলেও দেশটির সরকারি খাত মুখ থুবড়ে পড়ে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ  উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের দেশে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ ২৪ ও ২৫ এপ্রিল দুই দিনব্যাপী রাজধানীর আফতাবনগরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সিএসই ফেস্ট অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।

এবারের সিএসই ফেস্টে প্রায় ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০টি আইটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।

উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘৫০ বছর আগে চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো যে অবস্থায় ছিল, এখন তার চেয়ে বহুগুণ এগিয়েছে। তাদের দেশের মেধাবীরাই দেশকে এগিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের অর্জন আরও বেশি হতো, যদি মেধাবীরা বিদেশমুখী না হয়ে তাদের মেধা দেশের কাজে লাগাতো। তাই শিক্ষার্থীদের দেশে থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করার আহ্বান জানাই।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের অর্জনে এই দেশ, সমাজ, মা-বাবার অবদানের কথা চিন্তা করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক শামস রহমান এবং সিএসই বিভাগের চেয়ারপারসন ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহিন ইসলাম।

এবার ‘সিএসই ফেস্ট’ আয়োজনের মধ্যে রয়েছে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, গেমিং প্রতিযোগিতা, রোবো সকার, লাইন ফলোয়ার প্রতিযোগিতা, প্রজেক্ট শোকেসিং প্রতিযোগিতা, চাকরির মেলা, আইটি অলিম্পিয়াড, প্রযুক্তির নানা বিষয়ে পাঁচটি সেমিনার এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ  স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি অপরিহার্য বলে মনে করেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার চাঁপা। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিতে নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেশ, সমাজ ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নারীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।’

বুধবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘এমপাওয়ারিং গার্লস উইথ আইসিটি স্কিলস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপর্চুনিটিস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা প্রবলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এ খাতে দেশের নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম। নারীদের এই খাতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সমাজ এবং দেশের অগ্রগতির জন্য নারীদের কর্মক্ষম হওয়া জরুরি।’

বেগম শামসুন নাহার চাঁপা বলেন, ‘ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে নারীদের জন্য কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে প্রযুক্তিতে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই ডিজিটাল প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা আছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে সরকার আইসিটি খাতে নজর দিচ্ছে এবং নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছে। বাংলাদেশে প্রযুক্তির বিকাশ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং সামগ্রিকভাবে দেশের সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

সভায় ড. মনজুর হোসেন বলেন, ‘আরএমজি ও রেমিট্যান্সের পর বাংলাদেশে জিডিপিতে আইসিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ খাতে কম বিনিয়োগ লাগে তাই এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ ক্ষেত্রে নারীদের অবদান রাখা খুব সহজ।’

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসিফ হোসেন খান। স্বাগত বক্তব্য দেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

ঢাকাঃ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তারা হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাদের নিয়োগ দিয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার তারা শপথ নেবেন বলে জানা গেছে। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন।

এদিকে আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের, হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ হতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করেছেন।

বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৫ জন বিচারপতি রয়েছেন। নতুন করে ৩ জনকে নিয়োগ দেওয়ায় আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়াল ৮ জন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার আসন বিন্যাসকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) উপাচার্যপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত দুই সহকারী প্রক্টরের মধ্যকার দ্বন্দ্বের জেরে পদত্যাগ করেছেন এক সহকারী প্রক্টর। সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও জুনিয়র শিক্ষক কর্তৃক হেনস্তার যথাযথ বিচার পাননি দাবি করে তিনি পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগকৃত শিক্ষক হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) কাজী এম. আনিছুল ইসলাম। এবং অন্য সহকারী প্রক্টর হলেন মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু ওবায়দা রাহিদ।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রেজিস্ট্রার দপ্তর বরাবর প্রেরিত কাজী এম. আনিছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পদত্যাগ পত্রে এটি জানা যায়।

পদত্যাগপত্রে আনিছুল ইসলাম দাবি করেন, আবু ওবায়দা রাহিদ অনুমতি ছাড়াই আমাদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নির্মিতব্য সংরক্ষিত কক্ষে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আসন বিন্যাস পরিকল্পনা করেন এবং তা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠিয়ে দেন। অনুমতি ছাড়া ল্যাবে প্রবেশ ও আসন পরিকল্পনা করার কথা জানতে চাইলে তিনি কাজী আনিছের সাথে উদ্ধত আচরণ করেন। ঈদের ছুটি শেষে ‘অনুমতি নেওয়ার’ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের গোল চত্বরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ফের বাকবিতণ্ডা হয়। পরবর্তী সময়ে ‘সমঝোতা বৈঠকে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একজন অধ্যাপকের সামনে তিনি আমাকে মারতে উদ্যত হন এবং আমার পরিবার নিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কাজী আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইনফরমালি বিচারের জন্য বসেছিলাম। সেখানে প্রক্টর ও মিজান স্যার ছিলেন। সেখানে আমি বিচার পাইনি। অথচ ঐ সময়ে রাহিদ আমার উপর চড়াও হয়েছে। উপাচার্য স্যারকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। স্যারের বাংলোতেও আমি গিয়েছি। সেখানে আমি সবকিছু খুলে বলেছি। আমি স্যারকে বলেছি, যেহেতু উনি বারবার হুমকি দিচ্ছেন, প্রক্টরিয়াল বডির একটা শক্তি দেখাচ্ছেন, সেজন্য আমি শঙ্কিত বোধ করছি। আমি যদি এখন উনার সাথে বসে প্রক্টরিয়াল কাজ করি তাহলে পরিবারের প্রতি অশ্রদ্ধা হয়। সেজন্য আমি পদত্যাগ করেছি। এর আগে উপাচার্য স্যারকে আমি একটা দাবি দিয়েছিলাম, তাকে এ জায়গা সরিয়ে আমাকে রাখেন।”

এ বিষয়ে আবু ওবায়দা রাহিদ জানান, আমি ওনাকে মারতেও যাইনি, ওনার পরিবার নিয়েও কোনো বাজে কথা বলিনি। বরং উনি কথায় কথায় আমাকে অনেক খোঁচা দিয়ে কথা বলেছেন। আমাকে বলেছেন আমার মুখের কথা নাকি আমার জুতার মতো সুন্দর। এরকম অনেক উস্কানিমূলক কথা বলেছেন। উপস্থিত শিক্ষকদের কেউ যদি বলে আমি ওনার সাথে আমি বাজে আচরণ করেছি আমি মেনে নিব। আর ঐ ল্যাবের রুম ফাঁকা থাকায় ও ল্যাবের যন্ত্রপাতি প্যাকেট বন্দি থাকায় আমরা কক্ষটি নিয়েছিলাম। তাছাড়া রুমটি পেতে কাজী আনিছ স্যার কে মেইল করেছি এবং মেইলের কোনো উত্তর পাইনি। দীর্ঘদিন একসাথে কাজ করার পর তিনি হুট করেই নিজের কথা বলার সুর পাল্টে ফেলেছেন।

তিনি আরও বলেন, ওনার এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করার কারণে উনাকে বলেছিলাম, যারা এই গ্রুপটাকে ঔন করত, তারা আপনার জন্য চলে গেছে। আপনি আইনুল স্যার, লতা ম্যাডাম, হাসিনা ম্যাডাম, আইন বিভাগের শিক্ষকদের সাথে বাজে আচরণ করার কারণে উনারা চলে গিয়েছেন।

উপাচার্যপন্থি শিক্ষকের এমন পদত্যাগের বিষয়ে এক শিক্ষক জানান, ঈদের আগে থেকেই শুনে আসছি উনি পদত্যাগ করবেন।তিনি মূলত পদত্যাগ করার একটা সুযোগ খুঁজছিলেন। যখন যেদিকে সুযোগ আসে, তিনি ঐদিকেই চলে যান।

এদিকে উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে ৩ দফায় ক্লাস বর্জন করে উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকরা। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রায় ১২ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। এবার নতুন করে পদত্যাগ করছেন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরাও।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

টাঙ্গাইলঃ জেলার ঘাটাইল উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের প্রধান খন্দকার জাকিয়া শামছির বিরুদ্ধে শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষকরা এসবের প্রতিবাদ করায় গত সোমবার আধাবেলা প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন শামছি। তবে অন্যসব বিষয় অস্বীকার করেন তিনি।

শিক্ষক ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গত সোমবার পর্যন্ত শিক্ষকদের ৩৮টি দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দলে ৩০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণে ২৮ দলে ৮৪০, একীভূতকরণের কৌশল, শিখন শেখানো এবং মূল্যায়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণে চার দলে ১২০, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে তিন দলে ৯০ এবং প্রাক-প্রাথমিকের তিন দলে ৯০ শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষকের সংখ্যা ১ হাজার ১৪০।

শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে ৮০ টাকা। মোট হিসাবে যার অঙ্ক দাঁড়ায় ৯১ হাজার ২০০ টাকা। শিক্ষক প্রতি ১ হাজার টাকা করে প্রতিটি দলে শিক্ষা উপকরণ বাবদ বরাদ্দ ৩০ হাজার। কিন্তু শিক্ষকদের অভিযোগ, তাদের যা দেওয়া হয়, তার মূল্য ৩০০ টাকাও হবে না। সেই হিসাবে এক দলে খরচ সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা। উদ্বৃত্ত থাকে ২১ হাজার টাকা। শিক্ষকদের দেওয়া হিসাবে ৩৮ দলে শুধু উপকরণ বাবদ উদ্বৃত্ত টাকার অঙ্ক ৭ লাখ ৯৮ হাজার।

গত সোমবার এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করেন প্রশিক্ষণরত শিক্ষকরা। এতে তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর।

ঝুনকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান জানান, আধাবেলা বন্ধ থাকে প্রশিক্ষণ। শিক্ষকদের থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান। নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা কাটার বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ আচরণ শুরু করেন রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর খন্দকার জাকিয়া শামছি।

প্রতিবেদকের কথা হয় প্রশিক্ষণরত বেণীমাধব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর জন্য শিক্ষা উপকরণ বাবদ বরাদ্দ ১ হাজার টাকা। সেখানে আমাদের যে উপকরণ দেওয়া হয়, তার মূল্য ৩০০ টাকার বেশি হবে না। অর্থাৎ একটি ব্যাগ, যার মূল্য ২৫০ টাকা এবং একটি কলম ও প্যাড, যার মূল্য ৫০ টাকার ওপরে হবে না। অথচ দেওয়ার কথা রাইটিং প্যাড, কলম, নেইম ব্যাজ, পেন্সিল, শার্পনার, ইরেজার, কিটব্যাগ, জালিব্যাগ ও তথ্যপত্র।’

আবুল কালামের তথ্য অনুসারে কথা হয় প্রশিক্ষণ নেওয়া আরও ৫০ শিক্ষকের সঙ্গে। তারাও আবুল কালামের সুরে কথা বলেছেন।

কাজলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষক থেকে ৮০ টাকা করে কেটে রাখা হয়। তাঁর অভিযোগ, কেন বাড়তি টাকা কেটে রাখা হচ্ছে? এমন প্রশ্ন শুনে তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এমরান হোসেন জানান, জাকিয়া শামছি শিক্ষকদের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেন তা মুখে উচ্চারণ করার মতো নয়। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ শিক্ষকরা।

টাকা কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ইনস্ট্রাটর খন্দকার জাকিয়া শামছি। তাঁর ভাষ্য, অডিট ফেস করতে হয় এবং প্রশিক্ষণের বিল উত্তোলন করতে গেলে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসেও টাকা দিতে হয়। তবে শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণের কথা অস্বীকার করেন তিনি।

বিল উত্তোলন করতে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন। তাঁর দাবি, এসব মনগড়া কথাবার্তা। সূত্রঃ সমকাল

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪

magnifiermenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram