বৃহস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪

 এ এইচ এম সায়েদুজ্জামান ।।

১৯৮০ সাল থেকে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি শুরু করে। শুরুতে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ দেওয়া হলেও ২০০৮ সাল থেকে শতভাগ বেতন দেওয়া শুরু হয়। শিক্ষকদের আন্দোলন ও দাবির মুখে ২০০৩ সালে তাত্ক্ষণিকভাবে থোক বরাদ্দ থেকে শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তী অর্থবছরে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রেখে শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া হবে। কিন্তু গত ১৯ বছরেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে। সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে। এর সঙ্গে দুই ঈদে শতভাগ উৎসব ভাতা দিতে হলে অতিরিক্ত আরো এক হাজার ১০০ কোটি টাকা লাগবে।

সূত্র জানায়, ৩৯ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজধানী ও জেলা-উপজেলা সদরে বড় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বরাদ্দের বাইরে শিক্ষকদের বাড়তি কিছু ভাতা দেয়। বাকিগুলোতে সরকারি বেতন-ভাতাই ভরসা। এমনকি ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়িয়ে আলাদা আয় করতে পারলেও অন্য শিক্ষকদের সে সুযোগ নেই। বেশির ভাগ শিক্ষকের সেই সুযোগ নেই।

২০০৩ সালে যে ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা দিয়ে শুরু হয়েছিল, ১৯ বছরেও তা সেখানেই আটকে আছে। এই ১৯ বছরে মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, শিক্ষকরা ব্যাপক বঞ্চনার শিকার।

শিক্ষকরা বলছেন, ‘শতভাগ উৎসব ভাতা দিতে অতিরিক্ত এক হাজার ১০০ কোটি টাকা লাগলেও সেটি সরকারের জন্য বড় কোনো ব্যাপার নয়। এতে শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়বে, সরকারেরও ভাবমূর্তি বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বর্তমান সরকার সরকারি কর্মচারীদের মতোই শিক্ষকদের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা দিচ্ছে।

শতভাগ উৎসব ভাতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো তারা দুই ঈদে শতভাগ বোনাস বা উৎসব ভাতা চান।

শিক্ষক নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে শিক্ষকদের আর্থিক সমস্যা সমাধান ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে।

তাদের ৮ দফা দাবিগুলো হলো-

১. ঈদের আগেই পূর্নাঙ্গ উৎসব ভাতা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা সরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের সমপরিমাণ করতে হবে।

২. অবিলম্বে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণার মাধ্যমে কারিগরি এবং বিজ্ঞান মনস্ক সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩. শূন্য পদের বিপরীতে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলীর ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে।

৪. অতিদ্রুত বিভিন্ন বোর্ড কর্তৃক যথাযথ নিয়মে এফিলিয়েশনপ্রাপ্ত সব স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় আনতে হবে।

৫. সরকারের স্বদিচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা প্রশাসন, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মাউশিসহ বিভিন্ন অধিদপ্তর, শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের প্রত্যাহার করতে হবে।

৬. সব শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ডিভাইস, খাতা-কলমসহ অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী প্রদান ও মাধ্যমিক পর্যায়ে (স্কুল, মাদরাসা, কারিগরি) শিক্ষার্থীদের সরকারি উদ্যোগে দুপুরের টিফিনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দুর্দশা লাঘবে শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।

৮. স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

সামনে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার বেসরকারি শিক্ষকদের চাওয়া পাওয়াকে পাত্তা না দিয়ে আগের নিয়ম বহাল রেখেছে। এই ২৫% ঈদ বোনাস নিয়ে তারা সংসারে কার কেনাকাটা করবে সেই চিন্তাই একে অপরের সাথে শেয়ার করছি এবং ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য লিখছে। শিক্ষকদের চাকরির এই পারিশ্রমিক বেতন না অনুদান এই নিয়ে বিতর্কে সৃষ্টি হয়েছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা নাকি বলেছেন শিক্ষকরা যা পায় তা অনুদান। সেই ক্ষেত্রে শিক্ষকরা শতভাগ বোনাস পেতে পারেন না। বাংলাদেশের শিক্ষকদের এই ২৫ এর পাকে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা কখনই সম্ভব নয়। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের শিক্ষকদের শতভাগ দাবি দাওয়া পূরণের এখনই উপযুক্ত  সময়।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/২৩/০৩/২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রিকশাচিত্রকে মূল প্রতিপাদ্য করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে। এরই মধ্যে উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি উপলক্ষে রিকশাচিত্র অংকন করেছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এবার ঈদের ছুটি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের বৈশাখ উদযাপনের মূল অংশ জুড়েই থাকবে রিকশাচিত্র। বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ কে বরণ করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ফটকের পাশের দেয়ালে পেইন্টিং করা হয়েছে। রিকশা পেইন্টিংয়ের আদলে দেয়ালে ফুটে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক, বুড়িগঙ্গার নৌকা, মা ও প্রকৃতির বিভিন্ন চিত্র। শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রতে রয়েছে ফুল, মাছ, নৌকা, বাঘ, ময়ূরসহ নানা ধরনের চিত্র। দেশের রিকশায় আঁকা নানা ধরনের চিত্রের মধ্য থেকে আকর্ষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন চিত্রগুলোকে উজ্জ্বল রঙে দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রাতেও থাকবে বড় আকৃতির রিকশা পেইন্টিং। এরই মধ্যে দেয়ালগুলোতে রিকশা পেইন্টের মাধ্যমে নান্দনিক ছোঁয়া দিয়েছে চারুকলার শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এ কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন।

‘বৈশাখে নুতন করিনু সৃজন / মঙ্গলময় যত তনু-মন’ স্লোগানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কেউ কেউ পুতুল, পাখি, বাঘের মুখোশ, পেঁচার মুখোশ, পাখির মুখোশ, রাজা-রানির মুখোশ, নানা রকমের মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন আকার ও রকমের চিত্রকর্ম এবং মুখোশে রঙ করছেন তারা। শিক্ষার্থীদের রং তুলিতে ফুটে উঠছে আবহমান বাংলার রূপ।

এদিকে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী। দিন-রাত পরিশ্রম করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এবারের আয়োজনে থাকছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাংলা বর্ষবরণের নানা আয়োজন। পাশাপাশি থাকবে পা‌খি, ফুল ও বি‌ভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তু। প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তুলার জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এবার কাজ হচ্ছে। শোভাযাত্রার জন্য বড় আকারের ফুল, মৌমাছি, পাতা ছাড়াও বাঘ ও পেঁচার মুখোশ তৈরি করা হয়েছে।

আয়োজনের দায়িত্বে থাকা চারুকলা অনুষদের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাঈম মৃধা বলেন, দেয়াল চিত্র, মুখোশ, স্টাকচার সবকিছুতেই রিকশা পেইন্টিংকে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেয়াল পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে রিকশা পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন মুটিভ এবং উজ্জ্বল রঙগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। রিকশাচিত্রে সাধারণত নায়ক-নায়িকা, কুমির, বাঘ, মাছ, ময়ূর, ফুল, লতাপাতার ও বিভিন্ন পশুপাখির ছবি দেখতে পাই। এগুলোর মধ্য থেকে দৃষ্টিনন্দন চিত্রগুলোকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী হৃদয় হোসাইন বলেন, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম হচ্ছে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃত বাংলাদেশের রিকশা চিত্র। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদ হওয়ার পর এটি প্রথম বৈশাখ। এজন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি আগের বারের থেকে আমাদের জন্যে একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। চারুকলা অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীদের হাতে খুব সুন্দরভাবে এই আয়োজনের প্রস্তুতি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে আমরা খুব এ আনন্দিত। এছাড়াও প্রথমবারের মত এবার বৈশাখী চারু শিল্পমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম আপার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

দেয়ালচিত্র অংকন করা শিক্ষার্থী পরমা দাস বলেন, এবারে বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও রিকশা পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হবে। শোভাযাত্রা জন্য আমরা মুখোশ তৈরি করছি। বাঘ পেঁচার পাশাপাশি রিকশা পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন ফর্ম দিয়ে মুখোশ তৈরি করেছি এবং সবগুলো মুখোশে রিকশা পেইন্টিংয়ের মত উজ্জ্বল রং ব্যবহার করছি। রিকশা পেইন্টিংকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

কাজের ফাঁকে আরেক শিক্ষার্থী তৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলো আরও দৃষ্টিনন্দন করে তোলার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই রিকশাচিত্র অংকন করা হয়েছে। দেয়াল পেইন্টিংয়ের পাশাপাশি মুখোশ ও বিভিন্ন রিকশার মোটিভ ফেস্টুনও করা হচ্ছে। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার অনেক মানুষ কম। তাই আমাদের উপর চাপ পরে যাচ্ছে। তবুও আমরা সবাই মিলে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছি।

দেয়াল চিত্রের পাশাপাশি আরও আয়োজন রয়েছে বলে জানান পায়েল দাস অনিক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে বড় একটি কুমিরের স্ট্রাকচার তৈরি করা হচ্ছে। কুমিরটির দৈর্ঘ্যে ১৬ ফুট ও প্রস্থ্যে ৯ ফুট। এছাড়াও সাধারণ রিকশার দ্বিগুণ মাপের একটি রিকশার স্টাকচারও তৈরি করা হচ্ছে। রিকশা উচ্চতা ৯ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট। ঈদের ছুটির আগে কাজগুলো সম্পূর্ণ করা হবে। ঈদের পর অনুষ্ঠিত হবে আমাদের উৎসব।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহা. আলপ্তগীন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে রিকশাচিত্র স্বীকৃতি পেয়েছে। এজন্যই বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ উপলক্ষে আমরা রিকশাচিত্রের যত রকমের অঙ্কন, মোটিভ এবং চিত্রায়ণের যতগুলো অলংকরণ রয়েছে সেগুলো সব নিয়েই রিকশাকে কেন্দ্র করে দেয়াল পেইন্টিং করেছি। মূলত এবারে আমাদের থিম হচ্ছে রিকশা চিত্র। মঙ্গল শোভাযাত্রাতেও বড় আকৃতির রিকশা পেইন্টিং থাকবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে আমরা বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে চাই। সেজন্য ১৮ এপ্রিল আমরা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান করবো। মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা সহ বিগত দিনে চলে আসা সকল আয়োজন থাকবে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা নান্দনিক রিকশাচিত্র ফুটিয়ে তুলার কাজ করছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৬/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

নাগরিকদের আগামী সোমবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট আজ শনিবার এই আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার সৌদিতে পবিত্র রমজান মাসের ২৯ তারিখ। যদি ওইদিন শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায় তাহলে পরদিন মঙ্গলবার দেশটিতে উদযাপিত হবে খুশির ঈদ।

কিন্তু যদি সোমবার চাঁদ দেখা না যায় তাহলে রমজান মাস ৩০ দিনের হবে এবং বুধবার দেশটিতে ঈদ হবে।

রমজান হলো আরবি বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস। আরবি মাসগুলো ২৯ ও ৩০ দিনের হয়ে থাকে। আর মাসগুলো নির্ধারিত হয়ে থাকে চাঁদ দেখার ওপর।

সৌদি আরবে গত ১১ মার্চ ১৪৪৫ হিজরি সনের রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়। আগামী সোমবার ৮ এপ্রিল দেশটিতে রমজানের ২৯তম দিন পড়বে।

গত বছর সৌদিতে রমজান মাস ২৯ দিনের হয়েছিল। যদিও বিশ্বের অন্যান্য দেশে মাসটি ৩০ দিনের হয়েছিল। ইসলামের সূতিকাগার হওয়ায় সৌদিতে চাঁদ দেখা যাওয়া নিয়ে সারা বিশ্বের সব মুসল্লিদের মধ্যে একটি আগ্রহ কাজ করে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাধারণ মানুষের মধ্যে ওইদিন থেকেই একটি আনন্দ লাগা শুরু করে। কারণ সৌদিতে যদি চাঁদ উঠে যায় তাহলে তারা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যান যে পরদিন তাদের দেশেও ঈদ হবে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, এ বছর বাংলাদেশে রমজান মাস ৩০ দিনের হতে পারে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এবার পাকিস্তানে রোজা ২৯টি হতে পারে। কারণ ৯ এপ্রিল রাতেই দেশটির আকাশে ঈদের চাঁদ দেখা যাবে।

সূত্র: ইনসাইড দ্য হারামইন

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৬/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

১৯৯২ সালে ১৮ হাজার টাকার মতো চুরির অভিযোগে মামলা হয়। বিচার শেষে সেই মামলায় সাজাও হয়। কিন্তু এ মামলার দায় থেকে রেহাই পেতে নরসিংদীর আবদুর রাজ্জাকদের লেগেছে ৩২ বছর।

২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্জাকসহ অন্য আসামিদের খালাস দিয়ে রায়টি দিয়েছেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।

সম্প্রতি এই রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আশেক মোমিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট লাকী বেগম ও ফেরদৌসী আক্তার।

আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯২ সালের ৩০ জুলাই সোনালী ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা তুলে ঘরের ট্রাঙ্কে রাখেন জব্বার মিয়া। পাশের কক্ষে বসবাসকারী ইব্রাহিম সেই টাকা রাখতে দেখেন। ৫ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ঘরে শব্দের আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ট্রাঙ্কটি নেই। ঘরের বাইরে এসে দেখেন ইব্রাহিম ও কবির ট্রাঙ্ক ফেলে দৌড়ে পালাচ্ছে। ট্রাঙ্কের আংটা ভাঙা এবং ভেতরে টাকা নেই। এ ঘটনায় ৭ আগস্ট নরসিংদী থানায় মামলা হয়। তদন্ত শেষে ৭ সেপ্টেম্বর আসামি ইব্রাহিম, কবির, আব্দুর রাজ্জাক ও তার মা কিরণ নেছার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এ মামলার বিচার শেষে ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ১৯৯৩ সালের ১৫ মে আসামিদের কারাদণ্ড দেন। রায়ে কবির, রাজ্জাক ও ইব্রাহিমকে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং কিরণ নেছাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। আলামত হিসেবে জব্দ টাকা বাদীকে ফেরত দিতে বলা হয়।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে আপিলের পর নরসিংদীর দায়রা জজ আদালত ১৯৯৫ সালের ২৫ মার্চ আপিল নামঞ্জুর করেন। এরপর আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যরা হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করেন।

শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে হাইকোর্ট বিচারিক আদালত ও আপিল আদালতের রায় বাতিল করেন। আসামিদেরকে টাকা চুরির দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে খালাস দেন।

রায়ে উচ্চ আদালত বলেন, এক নং সাক্ষী হচ্ছেন এই মামলার বাদী। এজাহারের সঙ্গে তার সাক্ষ্যে যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। জবানবন্দিতে বলেছেন, চোরাই টাকার মধ্যে ১৮ হাজার টাকা কিরণ নেছার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছেন মর্মে শুনেছেন। একবার বলেছেন ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা টাকার পরিমাণ ১৭,৭৫০ টাকা, আবার উল্লেখ করেছেন ১৭,৬৬৫ টাকা। ২ নম্বর ও ৩ নম্বর সাক্ষী চুরির কথা শুনেছেন। ৪ নং সাক্ষী টাকা উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন না। ৫ নম্বর সাক্ষীও টাকা চুরির কথা শুনেছেন। ৬ নম্বর সাক্ষী কিরণ নেছার কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করার কথা শুনেছেন। ৭ নম্বর সাক্ষী টাকা চুরির কথা শুনেছেন। ৮ নম্বর সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি জেরায় বলেন, কোন জায়গা থেকে চোরাই করা টাকা উদ্ধার করা হয়েছে জব্দ তালিকায় তার উল্লেখ নেই। উদ্ধার করা টাকার বিশেষ নম্বর ও চিহ্ন নেই।

সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। বাদী আবেদনকারীদের হয়রানির করার হীনমানসে মিথ্যা মামলাটি করেছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৬/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

‘সবুজ সাথী’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি জনপ্রিয় প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে প্রতি বছর সরকারিভাবে বাইসাইকেল পান কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ আদলে প্রাথমিকভাবে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত ১৬ হাজার কিশোরীর মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া পিছিয়ে পড়া ছাত্রীরা পাবে এসব বাইসাইকেল। প্রতিটি সাইকেলের মূল্য ধরা হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে আট জেলায় (রাজবাড়ী, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, সুনামগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ ও বরগুনা) বাইসাইকেল পাবে ১৬ হাজার কিশোরী। ‘কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৫ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনও প্রকল্পের ওপর ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।

প্রকল্প প্রসঙ্গে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান’ প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আমরা পিইসি সভাও করেছি। প্রাথমিকভাবে ১৬ হাজার শিক্ষার্থীকে সাইকেল দেওয়া হবে। এটা এক ধরনের পাইলট প্রকল্প। প্রকল্পের সুফল মিললে দেশব্যাপী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৬/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরে টানা ৬ দিনের ছুটি পেয়েছেন সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতিবছর ২৯ রমজান থেকে ঈদে তিন দিনের ছুটি ভোগ করেন সংবাদকর্মীরা। রোজা ৩০টি পূর্ণ হলে এই ছুটি চার দিনে পরিণত হয়। সে হিসাবে ৯ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছুটি হওয়ার কথা।

কিন্তু এবার ঈদের ছুটির এক দিন পর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হওয়ায় ফের সরকার নির্ধারিত ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যম। এ জন্য ১৩ এপ্রিল বিশেষ ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।

শনিবার (৬ এপ্রিল) নোয়াবের বৈঠক শেষে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে ৯ থেকে ১৪ এপ্রিল টানা ৬ দিন ছুটি পেয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

তবে এবার ঈদের ছুটি ৬ দিন একটি অনন্য রেকর্ড। কারণ স্বাধীনতার পর আর কখনো সংবাদমাধ্যম ৬ দিন বন্ধ থাকেনি।

জানতে চাইলে নোয়াবের কোষাধ্যক্ষ ও মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, এবার ঈদের ছুটির মাঝে এক দিনের ব্যবধানে যেহেতু পহেলা বৈশাখ পড়েছে, তাই মাঝের এক দিন বিশেষ ছুটি দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৬/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

 চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয়েছে তীব্র তাপদাহ। প্রচণ্ড তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

সেই সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনুভূত হচ্ছে ভ্যাপসা গরম। তাপদাহে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।
শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, মাঝারি তাপদাহের পর শনিবার তীব্র তাপদাহ শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৬/০৪/২৪

ঢাকাঃ  ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পরিবারের ওপর শিক্ষা ব্যয়ের চাপ এবং শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি নিয়ে ‘এডুকেশন ওয়াচ ২০২৩’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেশের ২৬টি উপজেলা এবং ৫টি মহানগর এলাকা থেকে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা কর্মকর্তার ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঘাটতি পূরণের জন্য যথার্থ পদক্ষেপের সুপারিশ বর্ণিত হয়েছে প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনের আলোকে নিবন্ধটি রচিত হয়েছে।

শিক্ষা বৈষম্য ও ঘাটতি বেড়েছে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত ‘স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’ জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সের শিশু তরুণদের ৪১ শতাংশ (আড়াই কোটি) কোনো শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে ছিল না। এই হার ২০১৯ সালে ছিল ২৯ শতাংশ। শিক্ষা পরিসংখ্যান ব্যুরো ব্যানবেইসের হিসাবে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ১০ লাখ কমে গেছে। শিক্ষার বাইরে থাকা শিশু-তরুণদের সংখ্যায় বড় বৃদ্ধির আরও বিচার-বিশ্লেষণ দরকার। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারিপ্রসূত নানা অভিঘাত শিক্ষার বড় ক্ষতি করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এডুকেশন ওয়াচ ২০২১ ও ২০২২ গবেষণায় দেখা গেছে, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের সুযোগের অভাব এবং এর কার্যকারিতার সমস্যায় শিক্ষায় আগে থেকে বিদ্যমান বৈষম্য ও ফল অর্জনের ঘাটতি আরও বেড়েছে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এই ক্ষতির ভার বেশি বহন করতে হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে অন্তত তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট কোচিংয়ে যোগ দিয়েছে। এ ছাড়া ৯২ শতাংশের বেশি বাজারের গাইড বই ব্যবহার করেছে। এর অর্থ হচ্ছে শিক্ষা বাজারের সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে। শিশু কতখানি শিক্ষার সুযোগ পায়, তা নির্ভর করে তার পরিবার কত ব্যয় করতে পারে, তার ওপর।

২০২০ সালে দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে যে শিক্ষার্থী ছিল, ২০২২ সালে তাদের যথাক্রমে ৪.৫ শতাংশ ও ৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে ছিল না। এই ঝরে পড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সমগ্র ঝরে পড়ার হারের অতিরিক্ত (যা ২০২২ সালে যথাক্রমে ১৪ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশের বেশি ছিল)।

আরও দেখা গেছে, পরিবারের জন্য প্রতি শিশুর বার্ষিক শিক্ষার ব্যয় ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে প্রাথমিক স্তরে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরে ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য স্কুল ও শিক্ষার্থীর প্রস্তুতি

শিক্ষা কর্তৃপক্ষ ২০১২ সাল থেকে চালু শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তে নতুন শিক্ষাক্রম, শিক্ষণ-শিখন ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ২০২২ সালে। বিদ্যালয় শিক্ষায় আগে থেকে চলে আসা সব সমস্যা ও মহামারি থেকে উদ্ভূত নানা নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আমলে নিতে চায়নি।

কর্তৃপক্ষের ঘোষিত লক্ষ্য হলো, শিক্ষার্থীরা একুশ শতক ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করবে। এ জন্য শিক্ষণ-শিখন ও শিক্ষার্থী মূল্যায়নে অনেক পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। মুখস্থবিদ্যা থেকে সরে এসে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মাধ্যমে জ্ঞানকে জীবনে প্রয়োগ করবে শিক্ষার্থীরা। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের ধারাবাহিক মূল্যায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

■ শিক্ষা পরিসংখ্যান ব্যুরো ব্যানবেইসের হিসাবে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ১০ লাখ কমে গেছে।

■ প্রতি শিশুর বার্ষিক শিক্ষার ব্যয় ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে প্রাথমিক স্তরে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরে ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

■ আগে থেকে চলে আসা সব সমস্যা ও মহামারি থেকে উদ্ভূত নানা নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আমলে নিতে চায়নি।

প্রচলিত পরীক্ষার পরিবর্তে বছরের শেষে এবং দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষায় প্রায়োগিক দক্ষতা দেখাতে হবে। বিদ্যালয়ের ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও প্রান্তিক মূল্যায়নের ফল যোগ করে শিক্ষার্থীর মূল্যায়নপত্র তৈরি হবে। কিন্তু ধারাবাহিক ও প্রান্তিক মূল্যায়নের পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। তেলে-জলে মিশ্রণ কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট নয়।

সংস্কারের প্রয়োজন ও প্রস্তাবিত লক্ষ্য প্রায় সবাই সমর্থন করেন। কিন্তু কীভাবে উচ্চাভিলাষী রূপান্তর সাধিত হবে, তা নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে নানা আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যালয় ও শিক্ষকের বড় রকমের পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি, বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ও প্রয়োজনীয় উপকরণের সরবরাহ কি যথার্থ?

সামগ্রিক শিক্ষার পরিবেশ, বিনিয়োগ, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানের নানা দুর্বলতার সুরাহায় দৃষ্টি দিতে হবে। তা না হলে নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক চালু করা খণ্ডিত ও আংশিক পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়াবে। শিক্ষার্থী মূল্যায়নকে বৈধ, নির্ভরযোগ্য ও ন্যায্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য করা সব দেশেই এক বড় চ্যালেঞ্জ।

ঘাটতি পূরণে প্রধান করণীয়

‘এডুকেশন ওয়াচ ২০২৩’ প্রতিবেদনে মহামারি-উত্তর ঘাটতি পূরণ ও শিক্ষার টেকসই পুনরুত্থানের জন্য কিছু করণীয় সুপারিশ করা হয়েছে।
এগুলো হলো:

১. ঝরে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপের মধ্যে থাকবে:

● শিশুদের ফিরিয়ে এনে ধরে রাখার জন্য উপবৃত্তি এবং বঞ্চিতদের আর্থিক সহায়তা বাড়াতে হবে। বিবাহিত মেয়ে শিক্ষার্থীদেরও সহায়তা দিতে হবে।

● ফিরে আসা শিশুদের জন্য অতিরিক্ত পাঠদান এবং এ জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষাসহায়ক নিয়োগ করতে হবে।

● অভিভাবকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ করতে হবে।

● স্থানীয় সংগঠন, স্থানীয় সরকার ও কমিউনিটিকে যুক্ত করে উপজেলা ও বিদ্যালয়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা করতে হবে।

● এসব কাজ ও এনজিওদের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য বিদ্যালয় ও উপজেলায় অতিরিক্ত আর্থিক বরাদ্দ দিতে হবে।

২. শিখন-ঘাটতি মোকাবিলা। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগের মধ্যে থাকবে:

● শিখন-ঘাটতি নির্ণয়ের সহজ পরিমাপক তৈরি, এর ব্যবহারে শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, ঘাটতির মাত্রা অনুসারে শিক্ষার্থীদের জন্য দলবদ্ধ নিরাময় কার্যসূচি প্রণয়ন করতে হবে।

● স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় শিক্ষাসহায়ক নিয়োগ করা।

৩. শিক্ষকের জন্য সহায়তা ও প্রণোদনা। শিক্ষকের কাজের বোঝা কমানো ও যথার্থ দায়িত্ব পালনের জন্য:

● অতিরিক্ত কাজ ও দায়িত্বের ধরন ও পরিধি এবং এ জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির পর্যালোচনা ও স্বীকৃতি দিতে হবে।

● বিদ্যালয় ও শিক্ষকের অতিরিক্ত কাজে সহায়তা ও অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিদ্যালয় ও শিক্ষাবিষয়ক এনজিওদের একযোগে কাজ করতে হবে।

৪. পরিবারে আর্থিক বোঝা কমানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন:

● প্রাইভেট কোচিং ও বাজারের গাইড বই ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিদ্যালয় ও অভিভাবকদের সহযোগিতা করা।

● বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফি ও চাঁদা যথাসম্ভব বন্ধ করা বা নিয়ন্ত্রণে রাখা।

● প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মধ্যাহ্নভোজ ও মাধ্যমিকে সরকারি সাহায্যে স্বল্প ব্যয়ে পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করা।

৫. তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক মিশ্র পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন:

● ইন্টারনেট যোগাযোগ, যন্ত্র, পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রযুক্তিভিত্তিক বিষয়বস্তুর সরবরাহ, মেরামত ও তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তি ও শিক্ষার্থীর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে শিক্ষক তৈরির জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

৬. শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বিদ্যালয় ও শিক্ষকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন:

● উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি কমিটি নিয়োগ দিতে হবে। এই কমিটি নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন, বিশেষত শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বাধা ও সমস্যার দ্রুত পর্যালোচনা করবে।

● পর্যালোচনার ফল প্রকাশ করে বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের প্রস্তুতি, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের ধারাবাহিকতা, শিক্ষার্থী, মূল্যায়নের বাস্তবসম্মত ও ন্যায্য প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

● ২০২৪ সালকে পর্যালোচনা ও শেখার সময় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষাক্রম প্রবর্তনের সময়সূচি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

৭. শিক্ষা রূপান্তরে উপযুক্ত পরিবেশ ও সক্ষমতা সৃষ্টির জন্য নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত। বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে:

● শিক্ষায় সরকারি বিনিয়োগের স্থবিরতার সমাপ্তি, প্রতি বিদ্যালয়ে ব্যয় বৃদ্ধি, উপজেলার শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ।

● অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাব দূর করার বিশেষ উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

● স্থানীয় সমাজ, স্থানীয় সরকার ও শিক্ষা এনজিওদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের বৈরী মানসিকতায় পরিবর্তন।

● ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যের আলোকে প্রযুক্তিকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর পদক্ষেপ।

নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিটিআরসি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওয়াই-ফাই, হটস্পট, শিক্ষার্থীর জন্য সাশ্রয়ী ইন্টারনেট ও ল্যাপটপ-ট্যাবলেট সরবরাহ করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও মোবাইল ফোন কোম্পানিকে শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রম গ্রহণে উৎসাহিত করতে পারে।

ভবিষ্যৎ-মুখী শিক্ষা নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে নতুন প্রজন্ম ও জাতির ভবিষ্যৎ। এ প্রসঙ্গে দুটি পদক্ষেপ সহায়ক হতে পারে। প্রথমত, শিক্ষার দায়িত্ব ও তত্ত্বাবধান একটি মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়ে আসা এবং ২০১০ সালের শিক্ষানীতির সুপারিশ মেনে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন। শিক্ষানেতৃত্বের আরেকটি অ্যাজেন্ডা হতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সংকীর্ণ ও দলীয় আনুগত্যের রাজনীতির প্রভাব থেকে রক্ষা করা।

● ড. মনজুর আহমদ ও ড. মোস্তাফিজুর রহমান যথাক্রমে এডুকেশন ওয়াচ ২০২৩-এর প্রধান গবেষক ও গবেষণা সমন্বয়ক। গবেষণা দলে আরও ছিলেন ড. সৈয়দ শাহাদত হোসেন, ড. আহসান হাবীব, গিয়াসুদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ নুরে আলম ও আব্দুল কুদ্দুস।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৪/২০২৪

রাজশাহীঃ রাজশাহীর চারটি কলেজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চট্টগ্রামে পাঁচটি কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধিভুক্ত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়া কলেজগুলো হলো রাজশাহী সরকারি কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ, রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি কলেজ, স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ এবং সাতকানিয়া সরকারি কলেজ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদারের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী কলেজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধিভুক্ত করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। শোনর কুমার সরকার নামে রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাজশাহী কলেজের অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি।’ একই কলেজের ইসরাত জাহান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেশসেরা কলেজ হিসেবে সুনামটুকু ছিল। এই সিদ্ধান্ত কার কেমন লাগছে জানি না।’ মোহা. ইসমাইল হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘রাজশাহী কলেজ এখন তার নিজস্ব পরিচয় হারাবে।’

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. ইব্রাহিম আলী বলেন, ‘সরকার যেমন আদেশ দেবে তেমনটি করতে হবে। এখন এ বিষয়ে অন্য কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। তবে এখানে মান ক্ষুন্ন বা সুনাম নষ্ট হওয়ার কিছু নেই।’

রাজশাহী জেলা সুজনের সভাপতি আহম্মেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহীর চার কলেজকে অধিভুক্তিকরণ কেন করা হলো, সেটি আগে দেখতে হবে। কেননা যেখানে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ইউজিসি দুর্নীতির তদন্ত করছে, সেখানে তাদের কাছে এই কলেজ কী পাবে, সেটা ভেবে দেখতে হবে।’

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ভালো কিছু চিন্তা হবে। ভালো কিছু হবে। আমরা কেবলই চিঠি পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, খুললে আমরা বসব। তখন এটি সম্পর্কে বলতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অধিভুক্তি কেন প্রয়োজন সেটি সরকার বলতে পারবেন। নিশ্চিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভালো কিছু ভেবেছে বলেই আমাদের দেওয়া। তবে আমরা এইটুকু বলতে পারি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কলেজ ইন্সপেক্টর অফিস আছে। আমাদের অবকাঠামো আছে, অভিজ্ঞতা আছে। ভালো কিছু হবে। আমরা বসব, এরপরই বুঝতে পারব এটি কীভাবে রান করা হবে। তবে আমি আশা করি বেশ ভালোই হবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৪/২০২৪

ঢাকাঃ এনটিআরসিএ-র নিবন্ধিত এক ঝাঁক অনার্স-মাস্টার্স করা তরুণ-তরুণী নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে ‘নিবন্ধন সনদ’ অর্জন করেছে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) যোগ্যতার সনদ প্রদান করা সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগ ক্ষমতা ছিল ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে, ২০১৫ সালে এনটিআরসিএ-কে নিয়োগ সুপারিশ অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়। স্বাভাবিকভাবে পরের দিন থেকে এনটিআরসিএ নিয়োগ দেবেন। হাইকোর্টের নির্দেশে উত্তীর্ণদের সম্মিলিত তালিকা প্রকাশ করা হয়। পদ্ধতিগত পরিবর্তন হলে মূল্যায়নের সবকিছুই ওলটপালট হয়ে যায়। তাই সম্মিলিত তালিকা করায় কোনো কোনো ব্যাচ লাভবান হয়, আবার কোনো কোনো ব্যাচের একেবারে বিনা কারণে সর্বনাশ হয়ে যায়। নম্বরভিত্তিক তালিকা করার কোনো পূর্ব ঘোষণা ছিল না, ফলে পূর্বে যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১-১২তমদের একই তালিতায় অন্তর্ভুক্ত করায় তাদের নব্বই ভাগেরই অবস্থান থাকে তালিকার পিছনের দিকে। স্বাভাবিকভাবেই সবার জন্য নিয়োগ সুপারিশের কোনো সুন্দর বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি প্রয়োগের মনমানসিকতা না থাকলে ১-১২তমরা নিয়োগ বঞ্চিত থেকে যাবে। হয়েছেও ঠিক তাই।

গণবিজ্ঞপ্তি নামক প্রহসনে বারবার পদ ফাঁকা থেকে যাচ্ছে আর তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট। ১-১২তমদের নিয়োগ সুপারিশ থেকে দূরে রেখে শুধু ১৬তম ও ১৭তম ব্যাচে উত্তীর্ণদের নিয়ে নতুন করে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এনটিআরসিএ। ১৬তম ব্যাচে উত্তীর্ণ সাড়ে ১৮ হাজারের বেশির ভাগ ইতিমধ্যে চতুর্থ সার্কেলে সুপারিশপ্রাপ্ত, ১৭তম ২৩ হাজার নতুন উত্তীর্ণ। তাহলে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিত চাকরি প্রত্যাশী সর্বোচ্চ হবে ত্রিশ হাজার। অথচ শূন্য পদ লক্ষাধিক। এভাবেই প্রতি গণবিজ্ঞপ্তিতে বিশাল নিয়োগের সংবাদ প্রচার হয়। এনটিআরিসিএ-র অনিয়ম সামনে আসে, কেউ কেউ আইনি ব্যবস্থা নেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্টে হয়ে যায়, সুধী সমাজ পরামর্শ দেন—ভুক্তভোগীর পদটি সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হোক। এভাবেই চলছে।

১২.০৬.২০১৮ তারিখের আগে যারা (১-১২তম) নিবন্ধন সনদ লাভ করেছে তাদের ক্ষেত্রে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৩৯০০/২০১৯ রায় অনুযায়ী বয়সসীমা শিথিলযোগ্য। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি উল্লেখ করে এনটিআরসিএ আবেদন গ্রহণ করেন। এনটিআরসিএ-র করা রিভিউ খারিজ হয়েছে। সুতরাং আইনত ১-১২তমদের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা না। এছাড়াও এমপিও নীতিমালা প্রবর্তন পরবর্তীদের জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলে তা পরবর্তীদের জন্য প্রযোজ্য হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এনটিআরসিএ-র তথ্যমতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে স্কুল-কলেজ মিলে প্রকৃত চাকরি প্রত্যাশীর সংখ্যা হিসেবে আবেদন পড়ে মাত্র ৮১ হাজার। শূন্য (এমপিওভুক্ত অপেক্ষমাণ) পদ সারা বাংলাদেশে লক্ষাধিক। সরকার শিক্ষক সংকট দূরীকরণে বছরে চারবার শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এনটিআরসিএ’র হাতে পর্যাপ্ত শিক্ষকও আছে, তবে কেন সনদ বাতিলের মতো হটকারি সিদ্ধান্ত? আইনি বাধ্যবাধকতা বা সংঘর্ষিক প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আইনিভাবেই সমাধান করতে হবে।

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ফাঁকা ৪০ হাজার পদ (ইনডেক্সধারীদের সুপারিশকৃত ২২ হাজারসহ) অথবা চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ফাঁকা থাকা সেই একই ৪০ হাজার পদ এখনো ফাঁকা। ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতেও কমপক্ষে ৭০ হাজার পদ শূন্য থাকবে। ১-১২তম ২০ থেকে ২২ হাজার নিয়োগ বঞ্চিতদের ভাগ্য ফেরানো এখন একটু সুনজরের অপেক্ষামাত্র। পদ শূন্য রেখে ১-১২তমদের নিয়োগ বঞ্চিত করে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষায় ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং কারিকুলাম বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

লেখকঃ আমির আসহাব

মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৪/২০২৪

শরীয়তপুরঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে অভাবের কারণে ছেলে বেলায়েত হোসেন ইমরোজকে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করতে রাজি হননি চা দোকানি বাবা শামছুল তালুকদার। পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকার পরও অভাবের কারণে বাবার দোকানে পুরোদস্তুর চা বিক্রি শুরু করেন বেলায়েত। পরে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ায় গ্রামের শিক্ষকসহ স্বজনদের অনুরোধে ছেলেকে পড়াতে রাজি হন বাবা।

বেলায়েত হোসেনের জন্ম দরিদ্র কৃষক পরিবারে। শৈশব, কৈশোরে পরিবারের অর্থনৈতিক দুর্দশা বিলাসিতা থেকে তাঁকে অনেকটাই দূরে রেখেছে। গ্রামীণ সমাজের বাস্তবতায় বাবার সঙ্গে তিনিও কাজে সহায়তা করতেন। তবুও পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত হননি তিনি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি ৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিষয়ে সারা দেশে দ্বিতীয় হয়েছেন। বেলায়েতের এমন অর্জনে তাঁর মা-বাবা, স্বজন, পাড়াপড়শিরা যেমন খুশি, তেমনি তিনি নিজেও আনন্দিত। বেলায়েত হোসেনের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর বাছারকান্দি গ্রামে। চলতি মাসে তাঁর পোস্টিং পাওয়ার কথা রয়েছে।

বেলায়েত বলেন, ‘আমি সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। পরিবার নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমার মা-বাবা আমাকে উন্নত জীবন দিতে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে পড়িয়েছেন। পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁরা অনেক কষ্ট করেছেন। আমার সাফল্য দেখে তাঁরা অনেক খুশি হয়েছেন। মা-বাবার সেবা করেই বাকি জীবন কাটাতে চাই।’ শরীয়তপুর সরকারি কলেজে পড়ালেখা শেষে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। স্নাতক শেষে ২০১৯ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন। বেলায়েত আরও জানান, একাডেমিক পাঠ চুকিয়ে তিনি সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ২০২২ সালে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় শরীয়তপুর সদর উপজেলায় প্রথম হন। পরে সদরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এরপর ৪১তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিভাগে সারা দেশে দ্বিতীয় হন তিনি।

বেলায়েত হোসেনের বাবা শামছুল তালুকদার বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছি। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। সন্তানদের পড়ালেখা না করাতে পারলে উন্নত জীবন পাবে না। এটি ভেবে দিনরাত পরিশ্রম করেছি। আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে চার সন্তানকে পড়ালেখা করাতে পারছি। আমরা অনেক খুশি। আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’ সন্তানদের পড়ালেখা করাতে নিজেদের প্রাণপণ লড়াইয়ের কথা বলেন বেলায়েতের মা হালিমা বেগম। তিনি বলেন, পড়ালেখার খরচ জোগাতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছেলের সাফল্য দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি।

বেলায়েত হোসেন বলেন, দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাব। তারা যেন সফল হতে পারে, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাব।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৪/২০২৪

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঞাঃ শিক্ষাব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত রূপান্তর ঘটাতে সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম চালু করেছে। উদ্দেশ্য- গতানুগতিক মুখস্থবিদ্যা ও পরীক্ষানির্ভরতার পরিবর্তে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রবর্তন করা। যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়ে নয়, করে শিখবে।

লেখাপড়া হবে ভয়ডরহীন নান্দনিক ও আনন্দময় পরিবেশে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের একটা অভিজ্ঞতার ভেতরে নিয়ে যাবেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করবেন। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক একজন পরিচালক ও সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকবেন।

প্রতিটি অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে একক কাজ, দলীয় কাজ, মডেল তৈরি করে উপস্থাপন ও ভূমিকাভিনয় করবেন। সিমুলেশন, পাঠ্যবইয়ের কাজ, বাড়ির কাজ করবেন। প্রতিবেদন প্রণয়ন ও অ্যাসাইনমেন্ট করবেন। শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জনকালীন শিক্ষক, অভিভাবক ও ক্ষেত্র বিশেষে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেবেন। এভাবে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থেকে হাতে-কলমে কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করবেন।

প্রতিটি অভিজ্ঞতা অর্জনকালে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন বর্ণিত অভিজ্ঞতা কে কতটা অর্জন করতে পেরেছে। অভিজ্ঞতা অর্জনে কেউ পিছিয়ে থাকলে তাকে বাড়তি সময় দিয়ে অগ্রগতির পথে নিয়ে আসবেন।

এভাবে ৫ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় শেষে একজন শিক্ষার্থী ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম মূল্যবোধ ও নৈতিকতা, শিল্প ও সংস্কৃতি এই দশটি বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করবেন। ফলে দেশ পাবে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে দ্রুত অভিযোজনে সক্ষম জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, সংবেদনশীল, মানবিক ও দেশপ্রেমিক নাগরিক।

শিক্ষায় যে কোন সংযোজন ও পরিবর্তনের ভিশন এমনই চমকপ্রদ হয়। অতীতে ইংরেজি শিক্ষায় কমিউনিকেটিভ অ্যাপ্রোচ, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি কিংবা জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাস্তবে এর কোনটিই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

অনেক আশা ও সম্ভাবনার নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। প্রয়োজন ছিল আটঘাট বেধে নমনীয় ও জুতসই পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার। তা না করে অকারণ তাড়াহুড়োতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা হয়েছে এর। দুই দফায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ হলেও শিক্ষাক্রম রূপ রেখায় (মূল্যায়নে) পরিবর্তন আনায় আবার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়বে। এতে সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হবে। দুইবার শিক্ষক প্রশিক্ষণ হলেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল দেওয়া যায়নি। ফলে চোখের দেখা আর আলাপ আলোচনায় শেষ হওয়া প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে নেমে হোঁচট খাচ্ছেন শিক্ষকগণ।

বলা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বিষয় শিক্ষকগণ সম্পূর্ণভাবে টিজি (টিচার্স গাইড) দ্বারা পরিচালিত হবেন। টিজি ছাড়া সফলভাবে একটি ক্লাসও পরিচালনা করা সম্ভব নয়। অথচ টিজি সরবরাহ করা হয়েছে চাহিদার অর্ধেকেরও কম! এই নিয়ে শিক্ষকগণ জোড়াতালিতে চলছেন কোনোমতে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে জারি করা সর্বশেষ মূল্যায়ন নির্দেশিকা পুস্তিকা আকারে শিক্ষকদের সরবরাহ করার প্রয়োজন থাকলেও তা না করে পিডিএফ ফাইল করে অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকগণ এটি প্রিন্ট করে বই বানিয়ে নিজের কাছে রেখেছেন এবং ক্রমে এতে অভ্যস্ত হচ্ছেন। সামনে আবার নতুন মূল্যায়ন নির্দেশনা আসবে। আড়ায় বছর পরে আবার নতুন শুরু হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কোচিং লাগবে না, এমনটাই জানানো হয়েছিল। কিন্তু মাঠের ফল ভিন্ন। প্রাইভেট কোচিং কমেনি বরং বেড়েছে আশাতীতভাবে। সম্প্রতি গণস্বাক্ষরতা অভিযানের গবেষণা প্রতিবেদন "এডুকেশন ওয়াচ ২০২৩" এ ওঠে এসেছে - প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তিন-চতুর্থাংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটর কিংবা কোচিং সেন্টারে গিয়েছে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শুরুতেও রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে প্রাইভেট কোচিং এর একই চিত্র দেখা গেছে। নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দলে দলে কোচিং করছে। এতে শিক্ষা ব্যয় আগের থেকে বেড়েছে। শিক্ষকগণের ধারাবাহিক মূল্যায়নের ফলাফল এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করলে এর নির্ভরযোগ্যতা রক্ষা করা অসাধ্য হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে এবং অকারণে প্রাইভেট কোচিং করতে বাধ্য হবে।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের বারোটা বাজাচ্ছে গাইড বই ও ইউটিউব কনটেন্ট। কোন বিষয়ের একটি অজানা অভিজ্ঞতা পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ও শিক্ষকের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের ধাপে ধাপে অর্জন করার কথা, অথচ তা গাইডবই ও ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কার্যত কোন যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই মূল্যায়নের ধাপগুলো অনায়াসে অতিক্রম করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের মডেল ইউরোপের উন্নত দেশ থেকে এসেছে। সে সব দেশে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত প্রাথমিকে ১:১৫ ও মাধ্যমিকে ১:২৫ এর কাছাকাছি হলেও আমাদের দেশে তা প্রাথমিকে ১:৩০ ও মাধ্যমিকে ১:৪৫ কিংবা তারও বেশি। এছাড়াও আমাদের শ্রেণি কক্ষগুলো নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সহায়ক নয়।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের কাজ বেড়েছে অনেক। শিক্ষকগণ আন্তরিক না হলে এই শিক্ষাক্রমের সফল বাস্তবায়ন সহজ হবে না। অথচ বেসরকারি শিক্ষকদের সামান্য দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকার পরাঙ্মুখ। তাদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত না করলে, জীবনমানের উন্নতির খেয়াল না করলে তাদের থেকে আন্তরিক সেবা ও সমর্থন পাওয়া সহজ হবে না।

শিক্ষা ক্ষেত্রে এ বিশাল রূপান্তর ঘটাতে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন ছিল যা পাওয়া যায়নি। বাজেট স্বল্পতায় পাঠ্যপুস্তকের মানে ছাড় দিতে হয়েছে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, মূল্যায়ন নির্দেশিকা ও টিজি সরবরাহ করা যায়নি। এমনকি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ভাতাও সময়মতো পরিশোধ করা যায়নি। শ্রেণি কক্ষের মানোন্নয়ন ও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে শিক্ষায় বাড়তি বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমন দাবিই শোনা যায়নি। এ ছাড়া শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিং ও গাইডবই বন্ধে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ এই পর্যন্ত চোখে পড়েনি। তাই বলা যায়, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের সফল বাস্তবায়ন অনেকগুলো যদি - কিন্তু'র উপর নির্ভর করছে। সেসবের জুতসই সমাধান ছাড়া সাফল্য প্রাপ্তি প্রলম্বিত হতে পারে।

লেখক: শিক্ষক।

মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৪/২০২৪

magnifiermenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram