এইমাত্র পাওয়া

সার্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সার্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

রবিবার (১২ মে) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন চত্ত্বরে এই কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন। কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এতে বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীরাও অংশ নেন।

এসময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদেরকে “নবম পে স্কেল বাস্তবায়ন করা হোক”; “এক দেশে দুই নীতি মানিনা মানবোনা”; “স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কালো আইন চাপিয়ে দেয়া, মানিনা মানবোনা”; “বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই”; “সার্বজনীন পেনশন স্কীম মানিনা মানবোনা”; ” ৭৩ এর আদেশে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে”; ইত্যাদি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা বলেন, অর্থ মন্ত্রানলয় থেকে জারিকৃত সার্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের কারণে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন মনে করে, এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। একই বেতন স্কেলের আওতাধীন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ভিন্ন নীতি সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

তারা আরও বলেন, এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দুরভিসন্ধি রয়েছে কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার। যে মূহুর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় এসে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমাজও তাঁর উন্নয়ন যাত্রায় বিপুল উৎসাহ নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছেন, ঠিক সেই মূহুর্তে বিদ্যমান সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের পথে ঠেলে দেওয়ার পুরনো কৌশল শুরু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। অনতিবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা ও অসন্তোষ লাঘব করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হকের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বক্তব্য দেন। এসময়, বক্তব্য দিতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন অফিসের ব্যবস্থাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিজস্ব পরিচয় রয়েছে, নিজস্ব সিন্ডিকেট রয়েছে, সিনেট রয়েছে। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এটি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। অতএব, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কখনোই যায় না। আমরা আশা করি, আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুঃখের এই ভাষা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছবে এবং বৈষম্যমূলকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে। যদি তা না হয় তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ঠিকই জানে যে, কিভাবে দাবি আদায় করতে হয়। আমাদের দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সব ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবোনা।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পেনশন সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে সেটি আমাদের জন্য নয়। যারা ১লা জুলাই থেকে কাজে যোগদান করবেন তাদের জন্য। আমরা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি এবং এখানেই বছরের পর বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় হল আমাদের প্রাণ, আমাদের চেতনা। আজকে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা এখানে বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের চেতনায় আঘাত করা হবে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হবে।

তিনি বলেন, এই নিয়ম বাস্তবায়িত হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালযয়ের কোন পার্থক্য থাকবে না। ‘প্রত্যয়’ নামে যে পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে এটি অবশ্যই সার্বজনীন নয়। এটি গতানুগতিক ধারায় একটি গোষ্ঠীকে নিষ্পেষিত করার ষড়যন্ত্র মাত্র। এটি বাস্তবায়ন করা হলে কোন মেধাবী লোক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতে আসবেন না। মেধাশূন্য হয়ে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অতএব আমরা চাই, টেনশন সংক্রান্ত এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হোক।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পেনশন সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এতে বলা হয়, ‘সকল স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং উহাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকরিতে যে সকল কর্মকর্তা বা কর্মচারী, তাহারা যে নামেই অভিহিত হউন না কেন ১ জুলাই ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করিবেন, তাহাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করিল।’

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১২/০৫/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.