মুতাছিম বিল্লাহ রিয়াদ, ইবি প্রতিবেদকঃ আসন্ন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতেই নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির দ্বিতীয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে গুচ্ছে না যাওয়ার পক্ষে দাবি তুলেছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তবে সেই সিদ্ধান্তে শিক্ষক সমিতি এখনও অনড় বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যরা জানান, ইবিকে গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ইউজিসি ও সরকারের নির্দেশনার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
লোক প্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম বলেন, সভায় গুচ্ছের পক্ষে-বিপক্ষে কেউ কিছু বলেননি। যেহেতু গুচ্ছে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫ হাজার ইবিকে কেন্দ্র হিসেবে পছন্দ দিয়েছে এবং ইবিকে গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ইউজিসি ও সরকারের নির্দেশনা রয়েছে, তাই এখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে অংশ নিচ্ছে। তবে শিক্ষকদের কেউ গুচ্ছের পক্ষে ছিলেন না।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, সভায় গুচ্ছে যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করেনি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, শিক্ষক সমিতি আগের সিদ্ধান্তেই অনড়। তবে যেহেতু প্রশাসন গুচ্ছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই পরবর্তী সময়ে সমিতির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
এই বিষয়ে ইবি ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বর্তমানে গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। এরই মধ্যে ইউজিসি তাদের বিজ্ঞপ্তিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যোগ করেছে। তাছাড়া ১৫ হাজার শিক্ষার্থী ইবিকে পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কথা চিন্তা করে ও সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমাদের গুচ্ছে অংশ নিতে হচ্ছে। এখন যদি পরীক্ষায় অংশ না নিই, শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের প্রতি দায়িত্ববোধ লঙ্ঘন হবে। তাছাড়া আমরা নৈতিকভাবে গুচ্ছের বিপক্ষে আছি। আর শিক্ষকদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে নানা ভোগান্তির প্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহল নিজস্ব পদ্ধতিতে ইবির ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রথম দিকে গুচ্ছের বিপক্ষে অনড় অবস্থান নিলেও পরবর্তীতে শর্তসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে ২০২২-২৩ শিক্ষবর্ষে ইবির সিন্ডিকেট সভায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচিও প্রকাশ করা হয়। তবে পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির আদেশের পর ফের গুচ্ছে অংশ নিয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
এবছরের ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সকলের মতামতের ভিত্তিতে আসন্ন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক সমিতি। এরপরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুচ্ছ পদ্ধতিতে গেলে ভর্তি কার্যক্রমে অংশ না নেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতেই ইবির ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইউজিসি ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় বিষয়টি এজেন্ডা আকারে আলোচনা করা হয়। এ সময় শিক্ষক সমিতির ১৫ সদস্যের কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়া অন্যদের সাতজন গুচ্ছে না যাওয়ার পক্ষে এবং ছয়জন গুচ্ছের পক্ষে মত দেন।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১১/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.