স্কুল তহবিলের ৩১ লাখ টাকা প্রধান শিক্ষকের পকেটে!

শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ কক্সবাজার জেলার পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশনের তহবিলের ৩১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা নিজ পকেটে ভরার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

বিদ্যালয়ের অডিট কমিটির তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে চেক ইস্যুবিহীন যে টাকা খরচ দেখিয়েছেন এসব টাকা কোন খাতে খরচ করেছেন তার কোন হদিস এখনও পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমার নির্দেশে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনের চিঠির আলোকে একটি অডিট কমিটি গঠন করা হয়। এতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) উলফাত জাহান কে প্রধান করে স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক নূর মোহাম্মদ ও অরিন্দম দেব নাথকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি অডিট কমিটি গঠন করা হয়। তিন বছরের আয়-ব্যয় হিসাব শেষে গত ২৮ এপ্রিল ২০২২ ইংরেজি তারিখে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমা বরাবর তিন সদস্য বিশিষ্ট অডিট কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অডিট প্রতিবেদনের কাগজ ঘেঁটে দেখা যায়, স্কুলের ক্যাশ বই মতে তিন বছরে হিসাবের ব্যয় ৯৮ লাখ ৬০ হাজার চারশত চুয়াত্তর টাকা, তার মধ্যে সভাপতির চেকের মাধ্যমে ব্যয় করেছেন ৬৭ লাখ ১৩ হাজার একশত পঁচানব্বই টাকা, বাকি ৩১ লাখ সাতচল্লিশ হাজার দুইশত ঊন আশি টাকার চেক ইস্যুবিহীন খরচ দেখিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন।

প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন স্কুলের আর্থিক হিসাব-নিকাশ সংরক্ষণে অধিকাংশ খরচ স্কুলের সভাপতির অনুমতিবিহীন ভাউচার করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি পূর্বিতা চাকমার অনুমতিবিহীন গত ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই অন্য স্কুলের ৯০ জন ছাত্র-ছাত্রী নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন। তবে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী হাজিরা খাতায় তাদের নাম নেই। ২ বছর পর্যন্ত এদের মাসিক ফি ও স্কুলের আয় ব্যয় রেজিস্টারেও নাই।

এ ছাড়া এনজিওর মাধ্যমে গর্ত খননের ৮ হাজার টাকা খরচ দেখানো, এস.এস.সি পরীক্ষার্থীর বিদায় খরচ ১০ হাজার টাকা, তিনি তাঁর নিজের মামলার খরচ ৭৮ হাজার টাকা ও আয় ব্যয়ের ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ইংরেজি তারিখ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা গরমিল করে লাখ লাখ টাকা স্কুল প্রতিষ্ঠান থেকে মেরে খাচ্ছেন তিনি। এভাবে প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন পেকুয়ার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অডিট কমিটির প্রধান ও পেকুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) উলফাত জাহান বলেন, স্কুলের দুইজন সিনিয়র শিক্ষকসহ স্কুলের ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিন বছরের আয়-ব্যয় হিসাব নিকাশ শেষে গত ২৮ এপ্রিল ২০২২ সালে তিন জনের স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদন স্কুলের সভাপতি ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমা বরাবর জমা দিয়েছি। অডিট কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্যারের। যেহেতু স্যার স্কুলের সভাপতি।

এ ব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনের মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি বিদ্যালয়ের এক পয়সাও মেরে খাননি। অডিট কমিটি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে। তিনি বিদ্যালয়ের কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত নাই। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ তাকে সহ্য করতে পারেনা।

এ ব্যাপারে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমা বলেন, বিষয়টা খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি বিধি মোতাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।