৯০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বেড়েছে ঢাবির বাজেট
নিজস্ব প্রকিবেদক।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৯০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বেশি। পাশাপাশি এবারের বাজেটে গবেষণা খাতে বেড়েছে ৪ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ঢাবি সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এ বাজেট পেশ করেন। সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বাজেটের ১৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ শিক্ষকদের বেতনের জন্য। এছাড়া ৬১ কোটি টাকা কর্মকর্তা এবং ৭২ কোটি টাকা কর্মচারীদের বেতন দেখানো হয়েছে। সে হিসেবে বাজেটের ২৯.৫৯ শতাংশ বেতন বাবদ বরাদ্দ রয়েছে। পাশাপাশি ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ২৩.৭৪ শতাংশ।
এছাড়াও এবারের বাজেটে পণ্য ও সেবা খাতে ১৭৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের ১৯.৫১ শতাংশ। পাশাপাশি পেনশন ও অবসর বাবদ ১৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা রাখা হয়েছে যা ১৯.৫১ শতাংশ।
এবারের বাজেটে তুলনামূলক গবেষণা খাতে বেড়েছে বরাদ্দ। এ খাতে ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের ১.৬৩ শতাংশ। বিগত অর্থবছরে গবেষণা মঞ্জুরী বাবদ বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি টাকা। এছাড়াও মূল বাজেটের ৩.৬৪ শতাংশ, মোট ৩৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা রাখা হয়েছে অন্যান্য অনুদান বাবদ এবং বাজেটের ২.৩৮ শতাংশ, মোট ২১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা মূলধন অনুদান বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুদান থেকে ৭৮১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আয় হবে। যা মোট আয়ের ৮৪ শতাংশ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আয় করবে ৮৩ কোটি টাকা। যা গতবার ছিল ৬৫ কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমে আসছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা যা এবারে কমে এসেছে ৫৭ কোটি ৫৪ লাখে।
অধিবেশনে সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রয়াতদের জন্য শোক প্রকাশ করেন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার দ্বিতীয় শতকের সূচনালগ্নে দাঁড়িয়ে আছে। তাই ২০২২ সালের বার্ষিক সিনেট অধিবেশন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরমতসহিষ্ণুতা এবং গণতান্ত্রিক, উদার ও মানবিক মূল্যবোধ চর্চার এক অসাধারণ পাদপীঠ। ভিন্নমত ও ধর্ম-দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ গঠনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী গভীরভাবে অনুপ্রাণিত।’
তিনি বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং বস্তুতান্ত্রিক অভাবনীয় উন্নয়নের এ যুগে অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধ চর্চার প্রাসঙ্গিকতা পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।’ এ বিষয়ে তিনি সকলের সুচিন্তিত পরামর্শ ও সহযোগিতা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর আজ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যুগের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন বিভাগ, ইন্সটিটিউট এবং ব্যুরো ও গবেষণাকেন্দ্র সৃষ্টি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ অফুরন্ত নয়। নিজস্ব আয় খুবই সীমিত। এই আয়ের সঙ্গে প্রতি বছর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাধ্যমে সরকারের দেয়া অনুদান যুক্ত হয়। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক ব্যয় সচ্ছ্বলতার সঙ্গে মেটানো বেশ কঠিন কাজ।’
তিনি বলেন, ‘২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে বিমক-এর অনুদানের তুলনায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বিমক-এর বরাদ্দ ৫০ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা বাড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন লাভজনক প্রতিষ্ঠান (Profitable entity) নয় বিধায় নিজস্ব তহবিল থেকে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না। প্রতি বছর এভাবে তহবিলের ঘাটতি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের নতুন নতুন খাত খুঁজে বের করতে হবে অথবা সরকারের নিকট হতে বিশেষ অনুদান চাওয়া যেতে পারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও একাডেমিক ভবন মেরামত ও সংস্কারের জন্য বিমক'কে একটি বিশেষ তহবিল প্রদান করেছেন, যেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং আশা করি আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে বর্ধিত হারে এ ধরণের অনুদান আমরা পাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় সিনেট অধিবেশনে অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য শিক্ষা অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, সিনেট সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সরকারি কর্মকর্তা, ছাত্র প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১২ জুন (রোববার) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম—সিন্ডিকেটের এক সভায় ঢাবির ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়।