৫ শতাংশ প্রণোদনা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ আগামী ১ জুলাই থেকে ৮ম পে-স্কেল অনুযায়ী এমনিতেই ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পেতেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে জুলাই থেকে ১০ শতাংশ বেশি বেতন পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সাধুবাদ জানালেও প্রণোদনায় নাখোশ অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা বলছেন, ৫ শতাংশ প্রণোদনা বর্তমান বাজারদর ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই প্রণোদনা নয় বরং স্থায়ীভাবে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেতন-ভাতা বাড়াতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দাবি মেনে নেওয়া না হলে ঈদের পর আবার আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ৫ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণায় বেতন বাড়ার জট খুলেছে। কিন্তু এটা বর্তমান বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, আমরা প্রণোদনা চাইনি, চেয়েছি বেতন বৃদ্ধি বা মহার্ঘ্য ভাতা। মুজিববর্ষে দিলে সেটা হতো প্রণোদনা। এখন বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে বেতন-ভাতা বাড়ানো দরকার। প্রণোদনায় কাজ হবে না। ঈদের ছুটির পর সব সংগঠনের সঙ্গে বসে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান বাজারের সঙ্গে মিল রেখে বেতন বাড়ালে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সেখানে ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানো যুক্তিযুক্ত নয়। তার যুক্তি, গত আট বছরে প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট দিয়েছে ৫ শতাংশ করে। তাহলে মোট বাড়ল ৮×৫=৪০ শতাংশ, এর সঙ্গে প্রণোদনা ৫ শতাংশসহ মোট ৪৫ শতাংশ বাড়ছে বলা যায়। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বেড়েছে গড়ে ১০০-১১০ শতাংশ। বাকি ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ গ্যাপ কীভাবে পূরণ করবেন চাকরিজীবীরা?
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ক্ষেত্র বিশেষে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত। মূল্যস্ফীতি এখন দশের কাছাকাছি। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে নতুন পে-স্কেল দেওয়ার জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন সরকারি কর্মচারীরা।
কত টাকা লাগবে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি চাকরিজীবী প্রায় ১৪ লাখ। এর সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বিভিন্ন কর্পোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বেতন-ভাতা বাবদ ৭৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের খসড়া তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ। সেখানে আরও ৫ শতাংশ প্রণোদনার জন্য সরকারের বাড়তি ব্যয় হবে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা।
কার্যকর জুলাই থেকেই
প্রণোদনার টাকা কবে থেকে পাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা– এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোববার এ ঘোষণা দিয়েছেন, মানে এটা হবে ধরেই নেব। তারপর অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষ করতে এক থেকে দেড় মাস লাগতে পারে। প্রথমে কত টাকা লাগবে তার একটি সারসংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করে অর্থমন্ত্রী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠানো হবে। তারপর কোন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কত টাকা পাবে তা তাদের দিতে হবে।
তিনি বলেন, এটা যে মাসেই হোক তা কার্যকর হবে জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকে।
২০১৫ সালে ৮ম পে-স্কেল দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হবে সরকারি কর্মচারীদের। সে অনুযায়ী তা হয়েও আসছে। ওই পে-স্কেলে বলা ছিল মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে। কিন্তু প্রতি বছর ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টে দেওয়া হচ্ছে। ইনক্রিমেন্টের পরিমাণ বাড়ছে না। নতুন করে বেতন বৃদ্ধি ও পে-স্কেলও দেওয়া হয়নি। এছাড়া মহার্ঘ্য ভাতা বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধাও এর মধ্যে দেওয়া হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৭/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়