৪ বছরেও স্থায়ী হয়নি এক শিক্ষকের চাকরি
বরিশালঃ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) লোকপ্রশাসন বিভাগের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির (পিঅ্যান্ডডি) স্বেচ্ছাচারিতায় এক শিক্ষকের চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি চার বছর ধরে আটকে আছে। আর ওই কমিটির ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না শিক্ষক।
সূত্রে জানা গেছে, লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক রানি সুলতানা ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে প্রভাষক পদে অস্থায়ী নিয়োগ পেলেও চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি। এরই মধ্যে ওই বিভাগের একটি পদ শূন্য থাকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রেজিস্ট্রার দপ্তর। পরে রানি সুলতানা ওই পদে ক্যান্ডিডেট হিসেবে আবেদন করেন। আর রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে লোকপ্রশাসন বিভাগের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির (পিঅ্যান্ডডি) আবেদন যাচাই-বাছাই করে রেজিস্ট্রার দপ্তরের কাছে সুপারিশ পাঠাতে বলেন। কিন্তু রেজিস্ট্রার দপ্তর দুইবার চিঠি ইস্যু করেও ওই বিভাগ থেকে কোনো উত্তর পায়নি। ফলে এখনো আটকে আছে ওই আবেদনগুলো।
কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রানি সুলতানার সঙ্গে একই সময়ে নিয়োগ পাওয়া ব্যাচের সবার চাকরি স্থায়ী হয়ে গেছে। তারা তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেই প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। আর নিয়মানুযায়ী রানি সুলতানার চাকরি স্থায়ী হলেই পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যানের অসহযোগিতায় তিনি এখনো পর্যন্ত চাকরিতে স্থায়ী হতে পারেননি। আর তার পদোন্নতিও আটকে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিভাগের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেখানে চাকরি স্থায়ীকরণে প্রভাষক পদের জন্য আবেদন করতে বলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রার অফিস থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য আবেদনটি সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়। পরে সেটি বিভাগীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির (পিঅ্যান্ডডি) মতামত ও প্রস্তুতকৃত তথ্যছক ফেরত চান রেজিস্ট্রার দপ্তর। রেজিস্ট্রার অফিস থেকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এগুলো ফেরত দেওয়ার কথা জানালেও তা এখনো দেওয়া হয়নি। পরে ১০ জুলাই আবারও সংশ্লিষ্ট বিভাগে পত্র পাঠালে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রেজিস্ট্রার শাখায় জমা দেওয়ার কথা থাকলে সেখানেও কর্ণপাত করেননি ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান লিজা। এদিকে বিভাগীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির (পিঅ্যান্ডডি) সভাপতিও ইসরাত জাহান লিজা।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগের শূন্য পদ খালি থাকলে সে বিভাগ চিঠি দিয়ে অবহিত করলে রেজিস্ট্রার দপ্তর সেটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে আবেদন জমা পড়ে। আর এই আবেদনগুলো একটি ফরওয়ার্ডিং করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়। আর বিভাগীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটিকে (পিঅ্যান্ডডি) ফেরত পাঠাতে বলা হয়। আর সংশ্লিষ্ট বিভাগের পিঅ্যান্ডডি সভাপতি থাকেন বিভাগীয় প্রধান। এটি করে পাঠানোর পরে শুরু হয় নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম।
লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান লিজা বলেন, ‘এটা ব্যক্তিগতভাবে বিভাগের চেয়ারম্যান করেনি। এটা বাস্তবায়ন করার জন্য একটি পিঅ্যান্ডডি কমিটি থাকে। তারা করে এবং ভিসি স্যারের অনুমতি নিতে হয়। এটা ব্যক্তিগতভাবে আমরা কিছুই করি না।’
এই বলে ফোনে মন্তব্য বা তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ফোন কেটে দেন ইসরাত জাহান লিজা।
এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) সুপ্রভাত হালদার বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে আবেদনের বিপরীতে বিভাগীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির মতামত গ্রহণের জন্য লোকপ্রশাসন বিভাগে পত্র দিয়েছিলাম। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও আমরা ওই বিভাগ থেকে কোনো সুপারিশ বা মন্তব্য পাইনি।’
রানি সুলতানা বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধমূলক কাজ করিনি এবং দায়িত্বের সঙ্গে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি বঞ্চিত হচ্ছি। আমার সঙ্গে কারও কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। তা সত্ত্বেও আমি অন্যায়ের স্বীকার হচ্ছি।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়