অনেক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন থাকলেও নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও নিবন্ধন থাকলেও সরকারের দেওয়া শর্ত মানছে না। অনেক প্রতিষ্ঠানে শয্যার অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স বা অন্যান্য সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী নেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ডিগ্রিহীন ও প্রশিক্ষণহীন জনবল দিয়ে রোগ নির্ণয়ের কাজ চালাচ্ছে। অভিযোগ আছে, এসব কারণে রোগনির্ণয় যথাযথ হচ্ছে না, অনেক প্রতিষ্ঠানে ভুল চিকিৎসা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের গণমাধ্যমে মানুষের ভোগান্তির কোনো না কোনো কাহিনি প্রকাশ পাচ্ছে।
গত ২৬ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা দেশে অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। দেশের প্রায় সব জেলা ও উপজেলায় এই অভিযানে স্বাস্থ্য বিভাগকে সহায়তা দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, অভিযানে বেশ সাড়া পাওয়া যায়। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ অবৈধ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত ও বন্ধ করতে সহায়তা করে। প্রথম ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে ১ হাজার ৮৫১টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা সম্ভব হয়। এরপর আরও কিছু বন্ধ হয়েছে।
অভিযান শুরুর পর থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত তিন হাজার প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করে। এর মধ্যে দুই হাজার প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন নিয়ে ১৯৮২ সাল থেকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে একবার নিবন্ধন নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান আর তা নবায়ন করেনি। অনেক প্রতিষ্ঠান শুরুতে ১০ শয্যার ক্লিনিকের অনুমোদন নিয়েছিল। কিন্তু পরে শয্যার সংখ্যা বাড়ালেও স্বাস্থ্য বিভাগকে তারা তা জানায়নি। অথবা শয্যার সঙ্গে সংগতি রেখে জনবল বাড়ায়নি। প্রতিবার নিবন্ধন নবায়নের সময় সেই ১০ শয্যারই অনুমোদন নিয়ে চলেছে।
অতীতে প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের আবেদন করতে হতো কাগজে। তখন একটি হাসপাতালের নিবন্ধন ফি ছিল পাঁচ হাজার টাকা। একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন ফি ছিল এক হাজার টাকা। এখন একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন নিবন্ধন ফি ২৫ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবীর বলেন, গত ২৬ মে থেকে এ পর্যন্ত নতুন নিবন্ধন ও নিবন্ধন নবায়ন করে সরকারের আয় হয়েছে ছয় কোটি টাকা। এর চেয়ে বড় কথা, অনেক প্রতিষ্ঠানকে এখন করের আওতায় আনা হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকারের কয়েক শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা জানায়, দেশে এখন অনলাইনে নিবন্ধন করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৪৩। এর মধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিক ৪ হাজার ১৪০টি। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার বাকি ৭ হাজার ৬০৩টি। এর বাইরে আরও প্রায় পাঁচ হাজার নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আছে, যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো অনলাইনে নিবন্ধনের বাইরে আছে।
গত ২৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ‘অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান ও শুদ্ধাচার’ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত হয় যে অনিবন্ধিত যেসব ব্যক্তি চিকিৎসা পেশার চর্চা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেবে অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্রাকটিশনারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাচিপের সভাপতি ইকবাল আর্সলান। চলমান অভিযানকে ভালো উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে অবৈধ ক্লিনিকে অবৈধ চিকিৎসকের হাতে অপচিকিৎসার খবর শুনতে পাই, দেখতে পাই। এই অবৈধ ব্যবসার কারণে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ঝুঁকির মুখে। দেরিতে হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অভিযান শুরু করেছে।