২৩ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী সাংবাদিকদের বিক্ষোভ
নিউজ ডেস্ক।।
দেশের ছয়টি সাংবাদিক সংগঠনের ১১ নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিকরা। এটি সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন তারা। এ অবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে চিঠি প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় সাংবাদিক সংগঠনগুলো কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। গতকাল (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে
আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজের) সভাপতি মোল্লা জালাল।
মোল্লা জালাল বলেন, যেভাবে সাংবাদিক নেতাদের হিসাব চাওয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন। আমরা রাষ্ট্রের কাছে এর ব্যাখ্যা চাই। আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, গণমাধ্যম ও সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতেই এটা করা হয়েছে। সন্তোষজনক সমাধান না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সরকারের সাথে আমাদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। সাংবাদিকদের আজ রাস্তায় দাঁড়ানোর কথা নয়। কিন্তু আজ রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে বিশ্বে। বিষয়টি আমরা সরকারকে খুঁজে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের অভিযোগগুলো সুস্পষ্ট জানাতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে কারও ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি পাঠাতে পারে, যখন তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে। সাংবাদিকতা পেশায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষনেতাদের নামে ঢালাওভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ উদ্দেশ্যমূলক বলে আমরা মনে করি।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, সাংবাদিক সংগঠনগুলোয় অনেক সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। কিন্তু অনেক পেশাজীবী সংগঠনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। রাগটা হয়তো সেখানেই, তারাই কেন স্পষ্ট নির্বাচনে বারবার নির্বাচিত হয়। সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব তলবের এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানী বলেন, আমার কী আছে, কী নেই- সাংবাদিক সমাজ জানে। আপনারা তদন্ত করে যে তথ্য পাবেন সেটিও জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে এই দুষ্টু আমলাচক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান ও ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব?্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব দ্বীপ আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়েনের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীসহ বিভিন্ন নেতা বক্তব?্য রাখেন।
ডিএসইসির উদ্বেগ
১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল (ডিএসইসি)। গতকাল কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সংগঠনের পল্টনস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, প্রচলিত আইনে কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হতে পারে। কিন্তু শুধু একটি পেশার ১১ জন শীর্ষ নেতার ঢালাওভাবে ব্যাংক হিসাব তলব উদ্দেশ্যমূলক, যা অতীতে কখনো কোনো সময় কোনো পেশার ক্ষেত্রে ঘটেনি। এ ধরনের ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতা পেশার ওপর চাপ ও হুমকিস্বরূপ। সাব-এডিটরস কাউন্সিল মনে করে, ঢালাও ব্যাংক হিসাব তলবে সাংবাদিক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি মামুন ফরাজীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হƒদয়ের সঞ্চালনায় সভায় সহ-সভাপতি আনজুমান আরা শিল্পী, কোষাধ্যক্ষ অলক বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম সেতু, দপ্তর সম্পাদক মনির আহমাদ জারিফ, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক আলমগীর কবীর, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক লাবিন রহমান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক তৌফিক অপু, কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা জবা, আবদুর রহমান, আবু জাফর সাইফ উদ্দিন, সাফায়েত হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।