২০ মাস পর করোনায় মৃত্যুশূন্য দিন
নিউজ ডেস্ক।।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আগের দিন সকাল ৮টা থেকে গতকাল শনিবার একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ চলমান মহামারী শুরুর ২০ মাস পরে মৃত্যুশূন্য দিন পেল দেশবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘসময় পর মৃত্যুশূন্য দিন পেলেও, এই পরিস্থিতি ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ। এ জন্য মাস্ক পরা, টিকাদানে গতি আনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
দেশে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় মৃত্যুর তথ্য আসে। এর পর থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু যেন হয়ে উঠেছিল মানুষের নিত্যদিনের ভাগ্য। এ সময়ে দেশ যেমন করোনায় হারিয়েছে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে, তেমনি সাধারণ বহু মানুষ হারিয়েছেন তাদের স্বজন। এমনকি গত ৫ ও ১০ আগস্ট করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যুর শোকও সইতে হয়েছে। তবে এই ভয়াবহতার পর ধীরে ধীরে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে। যা গতকাল পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। শীতের শুরুতে ইউরোপ-আমেরিকায় নতুন করে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার মধ্যে বাংলাদেশে চিত্র ভিন্ন। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে গত এক মাসের হিসাবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপালের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতের সংখ্যা শূন্য দেখানো হয়েছে। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা আগের দিনের মতোই ২৭ হাজার ৯৪৭ জন রয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় ১৭৮ জনের মধ্যে নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৯ জন। একই সময়ে সেরে উঠেছে ১৯০ জন। তাদের নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬ জন। দৈনিক শনাক্তের হারও ১.১৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী ধরা পড়ে। প্রথম মৃত্যুর খবর এসেছিল এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ। ওই পর্যায়ে দৈনিক মৃত্যু যথাক্রমে ০, ১, ৩ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। সে সময় ৩ এপ্রিল সর্বশেষ মৃত্যুহীন দিনের খবর এসেছিল।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের গত কয়েক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম, দ্রুততার সঙ্গে মানুষকে টিকাদান, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে আমরা একটি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে আসতে পেরেছি। তা ছাড়া দেশের মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়মিত মাস্ক পরেই বাসা থেকে বের হন। এটিও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি ধরে রাখতে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বর্তমানে শীত মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ পর্যটনে বেরিয়ে পড়ে। তা ছাড়া শহর ও গ্রামাঞ্চলে মেলা বসে। এসব স্থানে জনসমাগম ঘটে। তাই পর্যটন ও মেলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৯৩৭ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক মানুষ এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে। অথচ তিন মাস আগেও এই সংখ্যা লাখের ওপরে ছিল। গত একদিনে সারাদেশে মোট ১৫ হাজার ১০৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ৬ হাজার ৬৬২টি নমুনা। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৪.৭০ শতাংশ। মোট মৃত্যুর হার ১.৭৮ শতাংশ।