১২০০ কেজি বই ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালঃ নগরীর মথুরানাথ পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে প্রায় ১২০০ কেজি বই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এরআগেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বই বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে স্কুলের বিরতির সময় দেখতে পান স্কুলের সামনে থেকে হলুদ অটো রিক্সায় একাধিকবার বই তুলছেন স্কুল কতৃপক্ষ। এ সময় তাদের কাছে বই কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানেন বলে তারা জানান। পরে অটোরিকশার পিছু নিলে দেখা যায় প্রায় ১২০০ কেজির বইয়ের চালানটি নতুন বাজারের স্কুলের গলিতে স্থানীয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী শেখ আব্দুল গফফারের দোকানের গুদামে আনা হয়।
ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী জানান- বইগুলো প্রধান শিক্ষক বিক্রি করেছেন। ইতিপূর্বে অনেকবারই তাকেই বই দেওয়া হয়েছে ৪০ টাকা দরে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষিক স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যায় দ্বিগুণ দেখিয়ে বছরের পর বছর বই উত্তোলন করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে অর্ধেক বই বিতরণ করে বাকি বই গোপনে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক ঐতিহ্যবাহী মথুরানাথ স্কুলের বিভিন্ন খাতের বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ পেয়ে স্কুলের জিনিসপত্র যখন যা হাতের কাছে পায়, সেটিই তিনি বিক্রি করে টাকা নিজের পকেটে নেন।আর সবখানে সভাপতির নাম বিক্রি করেন। সভাপতি যেহেতু স্থানীয় কাউন্সিলর,তাই তার হাতও লম্বা। শিক্ষক-কর্মচারীসহ এলাকাবাসী তার এসব দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর ভয় দেখিয়ে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা যথাযথ মাধ্যমে শিক্ষা অধিদফতরকে বিষয়টি জানাবেন বলে আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে মথুরানাথ পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, বই বিক্রির বিষয়ে সভাপতির অনুমতি নিয়েছি। প্রায় ৫০০ কেজির উপরে আজ বই বিক্রি করেছি। বইয়ের আসল পরিমাণ জানতে কোন তালিকা আছে কিনা বা বিক্রির মেমো রয়েছে কিনা জানতে চাইলে কিছুই নাই বলে জানান।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গাজী নাইমুল হোসেন লিটু জানান- ‘বিস্তারিত জানিনা। তবে শুনেছি বই বিক্রির বিষয়ে।’
বরিশাল সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বীথিকা সরকার বলেন, এ সব বই সরকারি সম্পত্তি। অবন্ঠিত বই অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক সরকারি বই বিক্রি করে দিয়ে থাকলে অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে অবশ্যই।’’
অধিদফতর বিক্রির অনুমতি দিলে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে প্রধান করে নিলাম কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটি উন্মুক্ত নিলামে প্রতিযোগিতামূলক দরে বই বিক্রি করতে পারবেন। সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক কোনোভাবেই নিজে বই বিক্রি করতে পারবেন না সেটি গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে। প্রমাণ হলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্তের নির্দেশ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকারি নিয়মে বই বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের পর বই অবশিষ্ট থাকলে প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে বইয়ের সংখ্যা জানাতে হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়