হাতিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস যেন ঘুষের আখড়া
নোয়াখালীঃ জেলার হাতিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতিসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ৭ বছর আগে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় যোগদানের পর থেকে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়কে অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছেন। নিয়মিত অফিস না করা, দেরিতে এসে ইচ্ছামতো অফিস ত্যাগ করা, উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক ও কর্মচারী এমপিও করাতে উৎকোচ গ্রহণ, ঘুষ ছাড়া কাজ না করা, সরকারি নির্দেশনা পালন না করা, সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ফলে এ কর্মকর্তার আচরণে অন্তোষ বিরাজ করছে শিক্ষকদের মনে। ওপর মহলে ভালো সংযোগ থাকায় শিক্ষা কর্মকর্তার অনিয়মের প্রতিবাদ করতে সবাই ভয় পায় বলে জানান ভুক্তভোগী অনেকে। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘যা ইচ্ছা লিখে দেন।’
উপজেলার চরকৈলাশ হাদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক নিশান চন্দ্র দাস জানান, ৫ হাজার টাকা না দেওয়ায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেন আমার প্রমোশন ফাইল বাতিল করে ফেরত পাঠান। এ শিক্ষক নিজের এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের হয়রানির বিষয় উল্লেখ করে বলেন, মফিজিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক কামরুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু হাইস্কুলের শিক্ষক কামরুল, জোড়খালী হাইস্কুলের শিক্ষক ইসরাফিল ও এদেবব্রতর ফাইল নিয়েও বাড়াবাড়ি করেছে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেন ফাইল ফরওয়ার্ড করতে ৫ থেকে ১০ হাজার করে ঘুষ নেওয়া, ঘুষ ছাড়া ফাইল ফরওয়ার্ড না করা, নিয়োগ বাণিজ্য এবং মাসে ১০ থেকে ১৫ দিনও অফিস না করার কথাও তুলে ধরেন এই প্রভাষক। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার এসব ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতিকার চেয়ে দরখাস্ত প্রেরণসহ উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনেও অবহিত করেছেন বলে জানান তিনি। তবে নোয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো সদুত্তর পাননি বলেও জানান মাদরাসা এ প্রভাষক।
হাতিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির দায়িত্বশীল পদের এক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেনের অনিয়ম এবং ঘুষ-দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কোনো কাজে তাকে সহজে পাওয়া যায় না, সে নিয়মিত অফিসও করছে না। তার দীর্ঘদিনের অনিয়মণ্ডদুর্নীতির বিষয়ে যেকোনো তদন্ত এলে আমরা সবাই সাক্ষ্য দেব।’
হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তোফায়েল হোসেন জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেন একজন দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর এবং টাকা ছাড়া সে কোনো কাজ করে না। সরকারি কর্মকর্তারা বদলি হন কিন্তু উনি এত বছর হাতিয়ায় কী করেন, উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?
এদিকে গত সপ্তাহের রবি থেকে বুধবার পর্যন্ত সর্বশেষ সরেজমিন পর্যবেক্ষণে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেনকে কর্মস্থলে দেখা যায়নি। এমনকি অফিসও ছিল তালাবদ্ধ। এর আগে তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি কথা বলতে রাজি না, আপনার যা ইচ্ছা- লিখে দেন। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ বা ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। সূত্রঃ প্রতিদিনের সংবাদ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়