হজ্ব-কুরবানির শিক্ষা চিরজাগ্রত থাকুক
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ।।
ইবাদত আত্ম-নিবেদনের মহিমায় সমুজ্জ্বল হজ্ব-কুরবানি এবং এ গুলোর শিক্ষা শ্বাশত ও চিরজাগ্রত। কেননা, মহান আল্লাহ্ বলেন “আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্ব ও ওমরা পূর্ণ কর ” (বাকার: ১৯৬)। তাই হাজি সাহেবানকে মনে রাখতে হবে, তাঁরা আল্লাহর ঘরের মেহমান। তাঁদের লাখো কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ধ্বনিত হয়েছে ‘লাব্বাইক......’ প্রভু হে আমি উপস্থিত, উপস্থিত! তাঁরা আল্লাহ্র ঘর সামনে রেখে ভবিষ্যতে অন্যায় না করবার দৃঢ় সংকল্পে ‘তওবা’ করেছেন।
তাই তো হাদিসে আছে “পানি যেমন ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়, হজ্বও তেমন পাপহীন ও পবিত্র করে দেয়” (বুখারি)। প্রিয়নবী (স.) আরো বলেন “...... সে নবজাতকের মত নিঃষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে” (বুখারি-মুসলিম)।
যিনি মহান আল্লাহ্র ঘরের মেহমান, তাঁর ‘হৃদ-কাবা’য় বিশ্ব প্রভুর উপস্থিতি চির জাগ্রত থাকা স্বাভাবিক। হাজি সাহেবান তাদের আচরণ, ইবাদত, লেনদেন সবক্ষেত্রে একজন ‘স্বেত-শুদ্ধ মনের মানুষ’ হিসেবে সমাজে অভিভাবক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করবেন। হজ্ব একটি মৌলিক ইবাদতÑ গর্ব করবার বিষয় বা পদবি-উপাধি নয়।
কেবল নামের আগে ‘আলহাজ্ব’ লেখা হজ্বের উদ্দেশ্য হতে পারে না। অথবা নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হওয়া হজ্বের লক্ষ নয়। একজন নামাযি বা রোজাদার যেমন নিজেকে ‘মুসল্লি’ বা ‘সায়িম’ নামে আত্ম-প্রচার করেন না। তেমনি ‘হাজি’ নামধারণ করা উদ্দেশ্য হলে তা হবে ‘রিয়া’ তথা লোক দেখানোর বিষয়। বরং হাজি সাহেবান সমাজ সংস্কার, জাতিগঠন ও কর্তব্য নিষ্ঠায় নিবেদিতপ্রাণ। যেমন হাজী শরিয়তুল্লাহ্, হাজী মোহাম্মদ মহসিন, হাজী দানেশ প্রমুখ।
প্রিয়-প্রয়োজনীয় ধন-প্রাণ উৎসর্গের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভে ধন্য হবার উপায় কুরবানি একটি উচ্চমর্যাদার ইবাদত। মহান আল্লাহ্ বলেন “তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং কুরবানি দাও” (কাওসার: ০২)। ভোগবাদীতা, লোক দেখানো, ফ্রিজে সংরক্ষণ করে সারা বছর মেহমানদারি করা কুরবানির শিক্ষাকে ¤øান করে দেয়। বরং ত্যাগ-তাকওয়া (ধর্মভীরুতা) হলো কুরবানির লক্ষ। দয়াময় আল্লাহর কতই না অনুগ্রহ পশুটি উৎসর্গ করা হয় মহান আল্লাহর জন্য কিন্তু তার স্বাদভোগ করে মানুষ এবং তা হয়ে যায় সামাজিক সম্পদ ও সম্প্রীতির বাহন।
মহান আল্লাহ বলেন “তা হতে তোমরা নিজেরা খাও এবং ধৈর্যশীল, অভাবী ও মুখাপেক্ষীদের খেতে দাও...... আল্লাহর কাছে না তাদের গোশত পৌছে না তাদের রক্ত বরং পৌছে যায় তোমাদের ধার্মিকতা” (হজ্ব: ৩৬, ৩৭)। মহান আল্লাহ্ আরো বলেন “(বল) আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার বেঁচে থাকা, আমার মরে যাওয়া (সবকিছু) আল্লাহ্র জন্য” (আন-আম: ১৬৩)।
‘ঈদুল আযহা’ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী (স.) বলেন ‘উমিরতু বি-ইওয়ামিল আযহা জা’লাল্লাহু ঈদান লি-হাজিহিল উম্মাহ’ অর্থাৎ “আমি কুরবানির দিন সম্পর্কে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ তা’লা এ উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন” (আবুদাউদ)। এ জন্যই প্রিয়নবীর (স.) মুনাজাত “তাকাব্বালহু মিন্না ওয়া মিন্কা” অর্থাৎ ‘আল্লাহ্ যেন তা আপনার ও আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করেন’।
প্রসঙ্গত বলা যায়, প্রাচীন আরবের নববর্ষ উৎযাপন ও ঘৌড়দৌড়-কবিতা পাঠের দু’টি উৎসব ‘নওরোজ’ মেহেরগান’। এগুলো ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও হাঙ্গামাযুক্ত। অন্যদিকে ‘ঈদ’ মুসলমানদের জাতীয় উৎসব। ইসলামের উৎসব গুলোর উদ্দেশ্য ইবাদত ও আত্মনিবেদন। ইসলামের উৎসব হল ধৈর্য, সংযম ও ত্যাগের পরীক্ষায় সমুজ্জ্বল। শুধু পশু জবাই নয় বরং পাষবিকতা দমন ও প্রিয়বস্তু প্রিয়প্রাণ উৎসর্গের চেতনা শিক্ষা দেয় কুরবানি। ব্যক্তি-সমাজ তথা জীবনের সব ক্ষেত্রে এ চেতনা জাগিয়ে রাখা একটি সার্বক্ষণিক ইবাদত। নিঃস্প্রাণ ও বিবেকের জাগ্রত উপস্থিতিহীন ইবাদত মূল্যহীন। জাতীয় কবির উচ্চারণ
“দাও কুরবানি জান ও মাল
বেহেশত্ তোমার কর হালাল....”
(শহীদি ঈদ)।
অথবা
“মনের পশুরে কর জবাই
পশুরাও বাঁচে বাঁচে সবাই”।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ কাপাসিয়া গাজীপুর- ১৭৩০।