সড়ক দুর্ঘটনা কমবে কীভাবে ?
সাধন সরকার।।
প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে চালকদের বেপরোয়া যানবাহন চালনা। এছাড়া চালকদের নিয়ম-কানুন মানাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনীহা, গাফিলতি ও অন্যায় করে চালকদের পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি। সড়ক পরিবহন খাতে শুধু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। দাবির মুখে সরকার নিরাপদ সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনও করে। কিন্তু সড়ক নিরাপত্তা আইনের বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তা যেন কাটছেই না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে যে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন তাও পুরোপুরি মানা হচ্ছে না।
পাঁচ দফার মধ্যে রয়েছে—দূরপাল্লার বাসযাত্রায় বিকল্প চালক রাখা, পাঁচ ঘণ্টা পরপর চালক পরিবর্তন, চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ, চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট রাখা বাধ্যতামূলক, মহাসড়কের পাশে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার ইত্যাদি। তথ্যমতে, বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহন আছে ৪৪ লাখ আর চালকের মোট সংখ্যা ৩২ লাখ।
স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে ১২ লাখ চালক কম আছে, ফলে এই ১২ লাখই ভুয়া চালক বলা চলে! বেসরকারি হিসাবে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর সাত-আট হাজার মানুষ মারা যায়। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার কী? সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা দরকার। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপে সড়ক আইনটির বাস্তবায়নের শিথিলতায় সড়কে তাজা তাজা প্রাণ কি ঝরতেই থাকবে?
সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, সংস্থা ও সংগঠনকে আরো আন্তরিক হতে হবে। মালিক ও চালকদের অতি লোভ পরিহার করতে হবে। স্বাভাবিক বিশ্রাম দিতে হবে চালকদের। সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে শুধু আইন করলেই হবে না, আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের পাশাপাশি লাগাতার চেষ্টা ও উদ্যোগ সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারে।
যা হোক, সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে—
১. চালকদের বেপরোয়া মনোভাব ও গতি রুখতে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।
২. চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের পরই কেবল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ব্যবস্থা।
৩. সড়কে পুলিশ ও মোবাইল কোর্টকে সক্রিয় রাখা।
৪. মহাসড়কে ছোট যান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন।
৫. দুর্ঘটনাপ্রবণ বিভিন্ন মোড় ও ট্রাফিক পয়েন্ট সংস্কার।
৬. গাড়ির গতির ওপর ভিত্তি করে আলাদা লেন করার পাশাপাশি ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা।
৭. বিভিন্ন কোম্পানি না রেখে একটি রুট একটি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
৮. এ খাতে সব ধরনের চাঁদা বাণিজ্য বন্ধসহ চালকদের চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধ করা।
৯. বেসরকারি খাতের দৌরাত্ম্য কমাতে রাজধানীসহ সারাদেশে আরো বেশি সরকারি আধুনিক গণপরিবহন চালু।
১০. দুর্ঘটনা কমাতে সড়কের ওপর চাপ কমিয়ে রেল ও নদীপথকে কাজে লাগাতে হবে।
১১. সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং
১২. সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পথচারী, চালক-মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা।
ঢাকা