স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের বৈষম্যর শেষ কোথায়
ফিরোজ আলম ।।
শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ আমার সোনার বাংলাদেশ।সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে গড়ে উঠেছে অসংখ্য স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়।কিন্তু রাষ্ট্রীয় অবহেলা আর বৈষম্য স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের অধিকারের প্রশ্নে আজ প্রশ্নবিদ্ধ।নিম্নে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা ছাত্রদের বৈষম্য তুলে ধরা হল।ক•বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য:
মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী,বাংলা,অর্থনীতি, রাষ্টবিজ্ঞান সহ সকল বিষয়ে বর্তমানে সরাসরি ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।অথচ দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় বাংলা ২০০ ইংরেজী ২০০ নম্বরের শর্তরোপের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ন ৯টি বিষয়ে মাদরাসা ছাত্রদের ভর্তি না করার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিল।যদিও মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে তুলনামূলক ৫ টি আরবী বিষয় বেশি পড়ছে।সেদিকে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নাই বললেই চলে।
খ•ভাল বিষয় প্রাপ্তির ক্ষেত্রে:প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান সহ টপ ২০ জনের মধ্যে প্রায় ০৯/১০ তম থাকার পরও মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের কে ভালো বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই রকম অসংখ্য নজির আছে। অথচ সরকারী অধ্যাদেশের মাধ্যমে দাখিল ও আলিম কে যথাক্রমে এস এস সি ও এইচ এস সি সমামান দেয়া হয়েছিল।
গ•মাদ্রাসার প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত:স্কুলে প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত সরকারি।এবং এখানকার সব ছাত্র-ছাত্রী শতভাগ সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত।মাদ্রাসার প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্তকে ইবতেদায়ী বলা হয়।এটি বেসরকারি।এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় ছাত্র-ছাত্রীরা সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত।সরকারি হিসেব মতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যত শিক্ষার্থী ভর্তি হয় ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শেষ করতে তার ৫২% ই ঝরে পড়ে।যতটুকু টিকে থাকে তাতে পাশের হার বাড়লে ও মান বাড়ছেনা।অথচ এখানে শতভাগ সরকারি সুবিধা বিদ্যমান।অন্যদিকে প্রাথমিকের তুলনায় মাদ্রাসার ইবতেদায়ী যেমনি জাতীয়করনের আওতা ভুক্ত নয় তেমনি সুযোগ সুবিধা নাই বললেই চলে।অথচ এখানে ঝরে পড়ার পরিমান ৪২%।
ঘ.ইবতেদায়ী ছাত্র-ছাত্রীরা সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত:স্কুলে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা তুলনামূলক আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল।অন্যদিকে মাদ্রাসায় পড়ুয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই গরীব ।অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা এবং মেধার ভিত্তিতে অধিক বৃত্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে ও মাদ্রাসার ইবতেদায়ীর ক্ষেত্রে তা শূন্যের কোঠায়।
ঙ.অনেক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কুসংস্কার কিংবা ধর্মীয় গোড়ামির জন্য আনন্দ দায়ক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।অথচ স্কুলে এটি সচরাচর।মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য কোন ডিবেটিং ক্লাব,ল্যাংয়েজ ক্লাব,সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কিংবা বিনোদনের জন্য আলাদা কোন সেক্টর ই গড়ে উঠেনি।যেই টুকু দেখা যায় তা ও লোক দেখানো। সেজন্য রাষ্ট্রীয় নির্ধারিত অনুষ্ঠান ও গুটি কয়েক মাদ্রাসা ছাড়া বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসায় নামে মাত্র অনুষ্ঠিত হয়।
চ.স্কুল জাতীয়করন হলেও মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীরা জাতীয়করন সুবিধা থেকে বঞ্চিত:
গত এক যুগ ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।উদাহরন স্বরুপ ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ৯.৯৮ হওয়া সত্ত্বেও ‘ঘ’ ইউনিটে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম হন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন। একই ইউনিটে মানবিক শাখা থেকেও প্রথম হন আরেক মাদ্রাসা ছাত্র আব্দুস সামাদ। ‘খ’ ইউনিটে দ্বিতীয় হন মাদ্রাসা ছাত্র মো. রিজাত হোসেন। ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষেও ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় শীর্ষস্থানটি মাদ্রাসা ছাত্রের দখলেই। তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ছাত্র আব্দুল্লাহ মজুমদার মেধাতালিকায় প্রথম হন। পাসের হার যেখানে মাত্র ১১.৪৩ শতাংশ, সেখানে একজন মাদ্রাসা ছাত্র প্রথম হওয়ার পরও শুধু ‘মাদ্রাসা ছাত্ররা দূর্বল এটি চিহ্নিত করা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।
বাংলাদেশে সরকারি মাদ্রাসা মাত্র তিনটি। এর বাইরে উচ্চশিক্ষায় ২১৫টি কামিল, ৭৭টি ফাজিল (অনার্স) এবং এক হাজার ৯৭ টি ফাজিল (পাস) মাদ্রাসা রয়েছে।মাদ্রাসার ছাত্ররা এত সফলতার স্বাক্ষর রাখার পরও বাংলাদেশে তিন শতাধিক কলেজ এবং দুই শতাধিক স্কুল জাতীয়করণ করা হলেও সরকারি মাদ্রাসার সংখ্যাটি তিনটিতেই থেকে যাচ্ছে কিছু অদৃশ্য শক্তির চক্রান্তের কারনে। সর্বশেষ তথ্য মতে ৩০২ টি কলেজ জাতীয়করণ করা হলেও একটি মাদ্রাসাও জাতীয়করণ করা হয়নি।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি, এমন কলেজ জাতীয়করণ হওয়া সত্ত্বেও পাসের হার ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকাশচুম্বী সাফল্যের স্বাক্ষর রাখার পরও জাতীয়করণের তালিকায় একটি মাদ্রাসার নাম ও যুক্ত হয় নি। ফলে মাদ্রাসার গরীব ছাত্র-ছাত্রীরা পর্যন্ত মাসিক ক্লাস ভেদে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা কিংবা তার ও বেশি বেতন দিয়ে অতি কষ্টে লেখাপড়া করছে।অন্যদিকে সচ্ছল পরিবার হওয়া সত্বেও জাতীয়করনের সুবিধা যেমন মাসিক সাত টাকা বেতন,মিড ডে ফ্রি মিল,উপবৃত্তি,ফ্রি ড্রেস সহ অন্যান্য সু্বিধা নিয়ে ধনীরা পরিবারের মানুষ গুলো রাষ্ট্রীয় সুবিধা আর ও বেশি করে পাচ্ছে।
ছ•12•মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষায় বৈষম্য:মাদ্রাসা শিক্ষা আজ অনেকটা চার দেওয়ালে বন্দি।মাদ্রাসা ছাত্রদের বর্তমানে অবস্থা হল এই যে পাস করলে সরকারি চাকুরি তাদের জন্য স্বপ্ন হয়ে যায়। বাংলাদেশের মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৫% ই হল এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা।
অথচ মোট সরকারি চাকরির বাজারে ১০% ও মাদ্রাসা থেকে পাস করা ছাত্রছাত্রীদের দখলে নাই।যে ১০% মাদ্রাসা থেকে পাস করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশই আলিম তথা এইচ এস সি পাসের পর কোন বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজে থেকে স্নাতক নিয়ে ঐ সরকারি চাকুরিতে প্রবেশ করছে।প্রতি বছর আলিম পাসের পর জিপিএ ৪ থেকে ৫ পর্যন্ত পাওয়া মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ছুটছে নামী দামী কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। ফলে মেধাশূণ্য হচ্ছে আলিম/ফাজিল/কামিল মাদ্রাসা।কেন মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা মাদ্রাসাতে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা থাকার পরও মাদ্রাসা ছেড়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটছে? তাহলে কি মাদ্রাসাতে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা নাই? নাকি মানহীন লোক দেখানো উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে?
এবার আলোচনা করা যাক উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে কি বুঝি।অক্সফোর্ড, হার্ভাড,ক্যমব্রিজ,আল আজহার,মদিনা,মক্কা,সহ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সমুহের তথ্য মতে উচ্চ শিক্ষা বলতে বোঝায় নতুন জ্ঞানের সৃজন ও প্রশিক্ষন এবং গবেষনার মাধ্যমে জ্ঞানের সীমারেখাকে ক্রমাগত বিস্তৃত করা।তার মানে যেখানেই উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা আছে সেখানেই যত বিষয় পাঠদান হবে তাতে নতুন জ্ঞানের সৃজন,প্রশিক্ষন এবং গবেষনার পথ থাকতে হবে।তাহলে মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ফাজিল অনার্স/ডিগ্রি কিংবা কামিলের যত বাংলা, আরবি, ইংরেজী বিষয় থাকবে তাতে সৃজনশীল এবং গবেষনাধর্মী জ্ঞান প্রসারের ব্যবস্থা থাকতে হবে।যত সেমিনার হবে তাতে প্রশিক্ষনে জেনারেল ও এ্যারাবিক শিক্ষক উভয়ের অংশ গ্রহন থাকতে হবে।
অথচ এগুলির খুব কম প্রয়োগ থাকার কারনেই মাদ্রাসার মান ও উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে।এদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেটে ও বাড়তি বরাদ্দ নেই।নেই গবেষনায় ছুটি,উন্নত সেমিনার,সমৃদ্ধ জার্নাল,উন্নত অবকাঠামো,বিজ্ঞান শিক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, নেই এমপিল,পিএইচডি ডিগ্রির ব্যবস্থা।অন্যদিকে ৮২ টি কামিল মাদ্রাসায় কোরান,হাদীস,দাওয়া ,ফিকহ,ইসলামী স্টাডিজ এবং জেনারেলের মধ্যে শুধু ইসলামের ইতিহাসে অনার্স কোর্স চালু হলেও, নেই চাকুরী উপযোগী কোন অনার্স বিষয়।অথচ সরকার এখানে ভ্রুক্ষেপই করছে না।ইসলামের ইতিহাসে অনার্স চালু হলে ও মাদ্রাসার প্রশাসনিক পদে তারা আবার চাকরী করতে পারবেনা রয়েছে মাদ্রাসা জনবল কাঠামোতে সুস্পস্ট নিষেধাজ্ঞা।এমতাবস্থায় মাদ্রাসা গুলো উচ্চ শিক্ষায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারে কাছেই নেই।
জ.চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা:মাদ্রাসার কামিল পাস(মাস্টার্স সমমান) কোন ছাত্র-ছাত্রীকে যেমনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা প্রশাসনিক পদে চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়না,তেমনি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কোন ছাত্র-ছাত্রীকে ও মাদ্রাসার প্রশাসনিক পদে চাকরীর সুযোগ দেওয়া হয়না।এতে মাদ্রাসা এবং কলেজের ছাত্ররা সমান হারে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আলিয়া মাদ্রাসাগুলি যেহেতু এ্যারাবিক ও নন এ্যারাবিক দুইয়ের সমন্বয়ে পরিচালিত এবং এখানে উভয়ের কার্যক্রম মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বোর্ডে আরবি শিক্ষিত ও জেনারেলদেরকে সমহারে পদায়ন করা দরকার হলেও জেনারেল শিক্ষিতদের এখানে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ।আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকার ভুলেই গিয়েছে শুধু আরবি শিক্ষিতরা সিন্ডিকেট মেম্বার থাকলে মাদ্রাসার জেনারেল বিষয়গুলি পিছনে পড়বে,মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে।
ঝ•নায্যতার ক্ষেত্রে বৈষম্য:মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।সম্প্রতি মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষায় চালুকৃত জেনারেল বিষয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হলেও অনার্স তৃতীয় বর্ষের সিলেবাসে নন মেজর হিসেবে আরবী বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বাস্তবিক ক্ষেত্রে কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর অনার্স কোর্সে ভর্তি হওয়ার উপর তা অলিখিত নিষেধাজ্ঞার মত।
ঞ• সাংবিধানিক অধিকারে বৈষম্য:আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রবিধান ২০১৯ এর ৭ পৃষ্ঠার ২.১অনুচ্ছেদ মতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কিংবা মাদ্রাসায় ক্লাস ওয়ান থেকে আলিম পাস করার পর আরবি বিশ্ববিদ্যালয় চালুকৃত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় সহ অন্য বিষয়ে ৪+১ বছর অনার্স-মাস্টার্স পাস করা মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরাই মাদ্রাসার প্রশাসনিক পদে আবেদন করতে পারবেনা।অথচ সাধারন কামিল ও সাধারন ডিগ্রি নিয়ে তুলনামূলক কম যোগ্যরা মাদ্রাসার প্রশাসনিক পদে আবেদন করতে পারবে। এটি বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(১),২৮(১),২৮(৩),২৯(১),২৯(২) অনুচ্ছেদ পরিপন্থী।
ট.নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগে বৈষম্য:
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন,উপজেলা নির্বাচন,ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায় শতকরা ৯৯ শতাংশই জেনারেল বিষয় থেকে পাস করা কলেজ শিক্ষক থেকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়।কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কামিল মাদ্রাসার(মাস্টার্স সমমান) অধ্যক্ষ /উপাধ্যক্ষ,সহকারী অধ্যাপকে ও (এ্যারাবিক/নন এরাবিক) প্রিজাইডিং অফিসার না দিয়ে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার করে দেওয়া হয়।এটি মাদ্রাসা পড়ুয়াদের জন্য বিব্রতকর ও অপমানজনক।
বাজেট বিতরনের ক্ষেত্রে বৈষম্য:
ডয়চে ভেলের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে ইবতেদায়ি মাদরাসার সংখ্যা ৬,৮৮২টি, দাখিল মাদরাসা ৯,২২১টি, আলিম মাদরাসা ২,৬৮৮টি, ফাজিল মাদরাসা ১,৩০০টি ও কামিল মাদরাসা ১৯৪টি। এই গুলি এমপিওভুক্ত এবং পরিচালিত হয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে।দেশের ৪৯ তম বাজেট ঘোষনা হল ১১ই জুন তারিখে।নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা খাতে ও বাজেট ঘোষনা হয়।শিক্ষাখাতে বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে আসন্ন অর্থবছরে পাঁচ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় (দুই বিভাগ) মিলিয়ে শিক্ষাখাতে মোট ৬৬ হাজার ৪০১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে যা গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এই দুই মন্ত্রণালয়ের বাজেট ধরা হয় ৬১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।
মোট বাজেটের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৪ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছ। যা এবারের শিক্ষা বাজেটের ৩৭% ।যা গত অর্থবছরে ছিল ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা।বেড়েছে ৯০০ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ১.৫% । অথচ মাদ্রাসা ইবতেদায়ীর জন্য আলাদা বাজেট উল্লেখ করা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট শিক্ষা বাজেটের ৫০.২%। যা গত অর্থ বছরে ছিল ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। বেড়েছে ৪ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা অর্থাৎ ৭% এর কাছাকাছি। আর কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে আট হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা যা মোট শিক্ষা বাজেটের মাত্র ১২.৬%। যা গত অর্থ বছরে ছিল সাত হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।বেড়েছে ৮৯৪ কোটি টাকা অর্থাৎ মাদ্রাসায় বেড়েছে ১.৪% এর কাছাকাছি ।এটি বৃদ্ধির কারন ও হচ্ছে নতুন এমপিও ভুক্ত মাদ্রাসার ব্যায়ভার বহনের জন্য।
যেখানে প্রাইমারি +মাধ্যমিক +উচ্চ মাধ্যমিকে বাজেট বেড়েছে ৯০০+৪৫০৭=৫৪০৭ কোটি টাকা অর্থাৎ ১.৫%+৭%=মোট ৮.৫% সেখানে মাদ্রাসায় বাড়ল মাত্র ৮৯৪ কোটি টাকা অর্থাৎ ১.৪%। বিষয়টি ভাবনার ও।
2020-2021সালে মোট বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, তার মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে ৬৬৪০১কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ১১.৬৯ শতাংশ।
গত বছরের বাজেট বিশ্লেষনে দেখা যায় 2019-2020 বাজেটের তুলনায় টাকার অংকেই ৫হাজার ২৮৩ কোটি টাকা বেড়েছে যা আনুপাতিক হারে ০.০১ শতাংশ বেড়েছে 2018-2019 বাজেটের তুলনায় টাকার অংকেই ৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বেড়েছে যা আনুপাতিক হারে ০.২২ শতাংশ বেড়েছে।কিন্তু 2016-2017 অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় তা ২.৬৪ শতাংশ এবং 2017-2018 অর্থবছরের তুলনায় ০.৮৬শতাংশ কমেছে।
অন্যদিকে গত বছর শিক্ষা বাজেটে প্রাথমিক শিক্ষায় ২৪ হাজার ৪১ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট শিক্ষা বাজেটের ৪০শতাংশ প্রায়,আগের বছরের বাজেটে ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ৪২শতাংশ।মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গত বছর বরাদ্দ ২৯৬২৪ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ৪৮শতাংশ।যা আগের বাজেটে ছিল ২৪০০০ কোটি টাকা অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ।কারিগরি ও মাদ্রাসায় শিক্ষায় গত বছরের বরাদ্দ ৭৪৫৩ কোটি টাকা অর্থাৎ১২ শতাংশ।যা গত বাজেটে ছিল ৫৭৫৮ কোটি টাকা অর্থাৎ ১০.৮১ শতাংশ।অন্যদিকে কারিগরি ও মাদ্রাসার ১২ শতাংশ বরাদ্দের মধ্যে কারিগরির জন্য ৪৪০০ কোটি টাকা অর্থাৎ ৭ শতাংশ আর মাদ্রাসার জন্য ৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ৫ শতাংশ।বাজেটে তুলনামূলকভাবে কারিগরি ও মাদ্রাসায় বরাদ্দ কম ই রাখা হয়েছে।আর মাদ্রাসার বরাদ্দতো তো সর্বনিন্ম।
লেখক-
ফিরোজ আলম,বিভাগীয় প্রধান(অনার্স,এম এ শাখা)।
আয়েশা( রা:) মহিলা কামিল(অনার্স,এম.এ) মাদ্রাসা,সদর,লক্ষীপুর।