স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শীঘ্র শুরু হচ্ছে
নিউজ ডেস্ক।।
করোনা প্রতিরোধে গত ১ নবেম্বর থেকে শুরু হয়েছে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচী। রাজধানীসহ নির্দিষ্ট কিছু স্কুলে একাধিক বুথে চলছে এ কর্মসূচী। তবে এতে করে শুধু রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরাই টিকা পাচ্ছিল। কিন্তু এবার থেকে সারাদেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় নিয়ে আসতে নেয়া হয়েছে বড় পরিকল্পনা। দেশের প্রতিটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিম এসব স্কুলে গিয়ে টিকা দেবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে ফাইজারের টিকা। এসব টিকা মজুদ আছে বলেও দাবি করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। টিকা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্রিজারেরও ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে ‘হার্ড টু রিচ’ এলাকা বা দুর্গম এলাকা যেখানে টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই সেসব এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য নেয়া হচ্ছে বিশেষ পরিকল্পনা।
গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এখন ১৮ থেকে ২০টি স্কুল কেন্দ্রে করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। একেকটি কেন্দ্রে পাঁচটি করে স্কুল যুক্ত রয়েছে। এ টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা গেছে, বেশি শিক্ষার্থী হওয়ায় টিকা নিবন্ধনে সমস্যা হচ্ছে। সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব স্কুলে করোনার টিকা কেন্দ্র নাই বা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি, এখন থেকে ওই স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেবো। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের পৃথক পৃথক টিম থাকবে।
এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডাঃ রোবেদ আমীন জনকণ্ঠকে বলেন, এখন ২৩টি জেলার স্কুল শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে। সব জেলায় স্কুলে স্কুলে গিয়ে এই টিকা দেয়া চ্যালেঞ্জ হলেও এটি সম্ভব। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকা মজুদ আছে। মজুদ টিকা থেকেই সব শিক্ষার্থীকে ফাইজারের টিকা দেয়া হবে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হলেও স্কুলের ছেলে- মেয়েদের টিকার আওতায় আনতে যা যা করা সম্ভব সব করা হবে। কবে নাগাদ এ কর্মসূচী শুরু করা যাবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি যেহেতু অনেক বড় একটি কর্মসূচী হবে। প্রতিদিন ১৫ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাই একটু তো সময় লাগবেই। তবে খুব শীঘ্রই তা শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
গত ১ নবেম্বর রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে শুরু হয় স্কুল-কলেজের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচী। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর আটটি স্কুলকে ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব স্কুলে এই আট স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এসব স্কুলে গিয়ে টিকা নেয়। প্রতিটি স্কুলে ২৫টি বুথে দিনে চার থেকে পাঁচ হাজার শিশুকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ও জাতীয় টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ শামসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকার বাইরে ২২টি জেলায় আমরা স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দিচ্ছি। সব শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনাই আমাদের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে যেসব এলাকার স্কুলে আমাদের ফ্রিজার সুবিধা দিতে পারবে সেসব স্কুলেই টিকা দেয়া হবে। এমনও হতে পারে যেসব এলাকায় একটি মাত্র স্কুলে ফ্রিজার আছে সেখানে অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। তিনি বলেন, ফাইজারের টিকা দেয়া এবং ডাইলুয়েন্ট মিশ্রণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন হয়। এ কারণে নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হবে। এসব কেন্দ্রে আলাদা আলাদা বুথে টিকা দেয়া হবে। তিনি জানান, শুক্রবার পর্যন্ত ২ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৯ জন শিশু শিক্ষার্থী করোনার প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ১১৭ জন শিক্ষার্থী। সবাই এক মাস পার হলে একই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবে বলেও জানান তিনি। ডাঃ শামসুল হক আরও বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই সব জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু করতে পারব। ইতোমধ্যে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিং করিয়েছি। এখন জেলাগুলো তাদের ক্যাপাসিটি ডেভেলপ করে টিকা কার্যক্রম শুরু করবে। তবে কে কবে থেকে এ কার্যক্রম শুরু করবে, সেটা নির্ভর করবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলাগুলোর ওপর।
তিনি বলেন, এখনও আমরা ফাইজারের টিকা দেশের ৬৪ জেলায় পৌঁছাতে পারিনি। নানা কারণে সব জায়গায় টিকা পাঠানো বা নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফাইজারের টিকা ১২ ঘণ্টার মধ্যে যেকোন জায়গায় পৌঁছাতে হয়। ঢাকা থেকে সব জেলার দূরত্ব এক রকম না। তাছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী সব জেলায় এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নেই। তাই, এসব কারণে প্রাথমিকভাবে ২৩টি জেলাকে নির্বাচন করেছি, যেখানে আমরা টিকাগুলো দ্রুত পৌঁছাতে পারছি। সেসব স্থানে স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিং ও যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। তবে ২৩টি জেলার পর পরবর্তী ধাপে আরও ২৪টি জেলাকে নির্বাচন করেছি। ৬৪ জেলার মধ্যে বাকি থাকবে ১৭টি জেলা। সেগুলোতেও অল্প সময়ের মধ্যে টিকার ব্যবস্থা করে ফেলব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় আমাদের ২৬টি ফ্রিজার ছিল। সম্প্রতি আরও ৪টা পেয়েছি। এগুলোতেই শুধু ফাইজারের টিকা রাখার ব্যবস্থা আছে। আমরা খুব দ্রুত আরও ১০টি ফ্রিজার আনছি, যেগুলো সারাদেশের আটটি বিভাগে চলে যাবে। তারপর যখন আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে টিকা রাখতে পারব, তখন আমাদের বিভাগগুলো থেকে জেলাগুলোর দূরত্ব কাছে চলে আসবে। এরপর আমাদের পক্ষে ১২ ঘণ্টার মধ্যে টিকা পৌঁছে দেয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম খুরশীদ আলম জানিয়েছিলেন, নিজ নিজ স্কুলের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের এই টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সক্ষমতা অনুযায়ী সারাদেশের জেলা ও সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে মোট ২১টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। এসব কেন্দ্রে স্কুল শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেয়ার প্রস্তুতি আছে। এবার বৃহৎ আকারে পরিচালিত হতে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচী।
প্রসঙ্গত, গত ১ নবেম্বর রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। ২ নবেম্বর থেকে রাজধানীর আটটি কেন্দ্রে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন কেন্দ্রে গড়ে ৫ হাজার করে দৈনিক ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হচ্ছে।