স্কুলের সভাপতি ছুটি ঘোষণা এখতিয়ারবহির্ভূত: ঢাকা শিক্ষা বোর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ রাজধানীর মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রতিষ্ঠানটিতে যে ছুটি ঘোষণা করেছিলেন, তাকে এখতিয়ারবহির্ভূত ঘোষণা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের পক্ষ থেকে ছুটি ঘোষণাকে সরকারের জারি করা নির্দেশনা অমান্য করার শামিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এসব বিষয় উল্লেখ করে মনিপুর স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
এতে ছুটি ঘোষণা ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে সভাপতিকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। নোটিশটি বোর্ডের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে।
মনিপুর স্কুলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের পদ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই বিবদমান দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি ছুটি ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের পক্ষ থেকে ৭ মার্চ জারি করা এক নোটিশে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। আর পরদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত তিন দিনের ছুটি থেকে আজ বৃহস্পতিবার এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের স্বাক্ষরে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের পরিচালনা কমিটির অস্থায়ী (অ্যাডহক) সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো. জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রদানে অবহেলা করেন মনিপুর স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি। এ ছাড়া ৯ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সভাপতি যে ছুটি ঘোষণা দেন, সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা সরকারি ছুটির লঙ্ঘন। মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানপ্রধানের সংরক্ষিত ছুটি তিন দিন। সে ক্ষেত্রে সভাপতির ছুটি ঘোষণার বিষয়টি এখতিয়ারবহির্ভূত এবং সরকারের জারি করা নির্দেশনা অমান্য করার শামিল।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার বলেন, এ কে এম দেলোয়ার হোসেন যা করেছেন, স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না। এ জন্য তিন দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
এদিকে ছুটি থাকলেও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার মনিপুর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকেরা প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাসের বালিকা বিদ্যালয় অংশে যান। তবে তাঁরা সেটির ফটক বন্ধ পান। এরপর তাঁরা যান মূল ক্যাম্পাসের বালক বিদ্যালয় অংশে। তাঁরা সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ২০২০ সালে তদন্ত করে বলেছিল, মনিপুর স্কুলের অধ্যক্ষ পদে মো. ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ অবৈধ। এরপর ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আরেক তদন্তে উঠে আসে, অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসেনের মেয়াদ বৃদ্ধি বিধিসম্মত হয়নি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তা উচ্চ আদালতে গড়ায়। কারণ, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী একটি অংশ ফরহাদ হোসেনের পক্ষে।
এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) এক তদন্তে উঠে আসে, নিয়ম না থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সদস্যসচিব ও সদস্যরা মিলে দেড় কোটি টাকা নিয়েছেন। সম্মানীর নামে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাঁরা এ টাকা নিয়েছেন। এর বাইরে আরও কিছু অনিয়ম উঠে এসেছিল।
এসব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই আদালতের নির্দেশে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো. জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেয় মাউশি। তবে তাঁকে দায়িত্ব নিতে দেওয়া হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়