স্কুলড্রেস পরে না আসায় শিক্ষার্থীদের পেটালেন শিক্ষক
স্কুলড্রেস পরে না আসায় শিক্ষার্থীদের বেদম পিটিয়েছেন এক শিক্ষক। মারধরের বিষয়টি অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম স্বীকার করলেও এটিকে শাসন বলেছেন তিনি। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা। তাঁরা ওই শিক্ষকের বিচার চেয়েছেন। ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার্থী পেটানোর ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুর সদর উপজেলার ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের চাঁদগঞ্জ এএসএম দ্বিমুখী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
জানা যায়, বুধবার সকালে অ্যাসেম্বলি শেষে স্কুলড্রেস পরে না আসা শিক্ষার্থীদের তাঁর কক্ষে ডেকে আনেন অভিযুক্ত শিক্ষক। এ সময় ৮ থেকে ১০ শিক্ষার্থীকে সারি করে দাঁড় করিয়ে বেত দিয়ে পেটান। পরে তাদের স্কুল থেকে বাসায় পাঠিয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা বেত্রাঘাতের বিষয়টি অভিভাবকদের জানায়। পরে অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের কাছে মারধরের বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ দেন।
মারধরের শিকার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌরভ বলে, 'আমরা বলেছিলাম, দুই দিন সময় দেন স্যার। টেইলার্স থেকে ড্রেস দুই দিন পর দিতে পারবে বলেছে। তখন হেডস্যারও (প্রধান শিক্ষক) বলেছিলেন মারতে হবে না। তবু তিনি আমাদেরকে মারলেন। বলতেছিলেন, চাকরি গেলে যাক।'
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহনেওয়াজ ইসলাম শাকিল বলে, 'আমার তো সাদা শার্ট ছিল। প্যান্ট ছিল না শুধু। এ জন্য নজরুল স্যার মারছে। মারতে মারতে বেতও ভেঙে ফেলছে। এত জোরে কেউ কাউকে মারে ?'
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম বলে, 'স্যারকে বলছিলাম, দর্জি প্যান্টটা কাল দেবে। স্যার বললো, যেদিন দেবে সেদিন পরে আসিও। আমি বললাম কালকে পরে আসব। তিনি কথা না শুনে মারছে।'
অভিভাবক সিয়ামের মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'এভাবে আমার সন্তানকে মারা উচিত হয়নি। তাকে পড়ালেখার জন্য স্কুলে পাঠাইছি, মার খেতে নয়। আমার ছেলে যদি অন্যায় করত তাহলে মেনে নিতাম। এই স্কুলের ড্রেস আগে থেকেই বাধ্যতামূলক ছিল না। আমি এই শিক্ষকের শাস্তি চাই।'
ঘটনার পর অভিযুক্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামকে স্কুলে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তেমন কিছু নয়। এটি একটি মিস্টেক হয়েছে। বাচ্চাদের একটু শাসন করতে চেয়েছিলাম। অভিভাবকরা একটু বেশি বেশি এমন করছে।'
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসএম শাহজাহান চৌধুরী বলেন, 'আমাদের স্কুলে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী। স্কুলের পাশেই বাজার। কে কখন বাইরে যায়, চেনা যায় না। সে জন্য আমরা স্কুলড্রেসের কথা বলেছি। এই স্কুলড্রেস পরে না আসায় নজরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের এভাবে বেত্রাঘাত করছেন, এটা আসলেই দুঃখজনক। এ বিষয়ে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক নজরুল ইসলামকে নিয়ে সমাধানের জন্য আলোচনা করা হবে। আর আমরা স্কুলে গভর্নিং বডির সঙ্গে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'