স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি কান ধরে ওঠবস
নোয়াখালীর চাটখিলে চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের চেষ্টাকারীকে কান ধরে ওঠবস করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সালিশের রায় মেনে নিতে মেয়ের বাবার কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও রাখা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ সালিশ বসে। এতে নেতৃত্ব দেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বাহালুল।
জানা গেছে, রাজারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে গত রোববার রাত ৯টার দিকে স্থানীয় জনতা বাজার থেকে তার ভাই একই বাড়ির চাচা সম্পর্কিত মো. সোহেলের (৩৫) সঙ্গে বাড়ি পাঠায়।
এ সময় সোহেল তাকে সোজাপথে বাড়ি না নিয়ে নির্জনস্থানে পরনের কাপড় খুলে কয়েকবার ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে শিশুটির চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে এলে অভিযুক্ত সোহেল পালিয়ে যায়। তিনি মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রুস্তম পাটোয়ারীর ছেলে।
শুক্রবার সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বাহালুলের নেতৃত্বে মেয়েদের বাড়িতে সালিশ বসে। এতে অভিযুক্ত সোহেল, তার বাবা রুস্তম পাটোয়ারী, মামা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী বেলাল, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সমাজপতি আবুল কাশেম পাটোয়ারী, আজিম মিয়াজীসহ এলাকার কয়েকশ লোক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত মো. সোহেলকে ‘উপযুক্ত শাস্তি’ হিসেবে ১০ বার কান ধরে ওঠবস করার সাজা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মেয়ের মা-বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়। এসময় সালিশের রায় মেনে নিতে সাদা স্ট্যাম্প উভয়পক্ষের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়।
নির্যাতিতার কৃষক বাবা কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঘটনার পর থানায় মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আসামি আওয়ামী লীগ নেতার ভাগনে। তাই স্থানীয় সমাজপতিরা বিচারের আশ্বাস দিয়ে সালিশের আয়োজন করেছে। তাদের বাইরে কিছু করলে এলাকায় থাকতে দেবে না।’
চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বাহালুল সালিশ বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, উভয়পক্ষের সম্মতিতে সালিশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ধর্ষণচেষ্টার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় সবার সিদ্ধান্তে অভিযুক্ত সোহেলকে কানধরে ওঠবস করার সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতের জন্য স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও রাখা হয়েছে।
এদিকে মো. সোহেলের মোবাইলে বারবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা জানান, তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে আসার পর এ ধরনের আরও দুটি ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিবাহিত সোহেলের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।
এ ব্যাপারে চাটখিল থানার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু জাফর বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’