সিলেট বিভাগ পানির নিচে
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সিলেটে বিদ্যুৎকেন্দ্র তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা, সংযোগ বিচ্ছিন্ন
সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত
সিলেট-সুনামগঞ্জে সেনা মোতায়েন
উত্তরাঞ্চলের পানি বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে
বাংলাদেশের উজানে থাকা ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে গত তিন দিনে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টির পানিই গড়িয়ে এসে ঢুকেছে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে। সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতেও ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে পুরো দেশে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সিলেটের। ওই বিভাগের ৮০ শতাংশ জায়গা এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে। তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে সিলেটের বিদ্যুৎকেন্দ্রও দুর্ঘটনা এড়াতে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকার বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ দিকে উদ্ধারকাজ চালাতে সিলেট-সুনামগঞ্জে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, আগামী আরো তিন দিন উজানে ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশ অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
জানা গেছে, উজান থেকে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টির মিলিত ফলে সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বাকি তিন জেলার মধ্যে শহরের কিছু উঁচু স্থান, পাহাড়ি এলাকা ছাড়া সবখানে এখন পানি থই থই করছে। আগামী তিন দিনে এই পানি আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এ দিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। টেলিফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতে পুরো সিলেটের বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। ফলে সিলেট বিভাগ কার্যত সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের একটি বিভাগের প্রায় ৮০ শতাংশ ডুবে যাওয়ার মতো বন্যা এর আগে বাংলাদেশে হয়নি। সিলেটে এর আগে যত বন্যা হয়েছে, তা মূলত হাওর এলাকা ও এর পাশের এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার গ্রাম, শহর ও উঁচু এলাকাও পানির নিচে চলে গেছে। আগামী দুই তিন দিন আরো ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় সোমবারের আগে পরিস্থিতি উন্নতির খবর নেই বললেই চলে।
এ দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে তিস্তা অববাহিকার চারটি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্র। এ ছাড়া বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলাতেও বন্যা হানা দিতে শুরু করেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে, গতকাল সকাল থেকে সিলেট বিভাগের সব কটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ১০৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৮৬টির পানি বাড়ছে, ২০টির কমছে।
সিলেটে বিদ্যুৎকেন্দ্র তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা : সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে সিলেটের কুমারগাঁওয়ের বিদ্যুতের গ্রিড লাইনের সাব স্টেশনে। এতে পুরো সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও বিদ্যুৎ বিভাগ। গতকাল দুপুর থেকে কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের চার পাশে বালুর বস্তা দিয়ে দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন সিলেট সেনানিবাসের সেনাসদস্যরা। কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশন থেকে ন্যাশনাল পাওয়ার গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এখানে সরবরাহ বন্ধ হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে সঙ্কট দেখা দেবে। পাশাপাশি সিলেট অঞ্চল পুরোটা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দেবে। এরই মধ্যে একাংশ বন্যাকবলিত হওয়ায় সিলেট নগরের একাংশ ও সুনামগঞ্জ জেলা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে সেনা মোতায়েন
সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সেখানকার দুর্গত মানুষকে উদ্ধার ও সহায়তা করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সিলেট জেলার সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলার সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, দোয়ারাবাজার ও ছাতক এলাকায় সেনাসদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের খাদ্য গোডাউন রক্ষা ও সিলেটের কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
সেনাসদস্যরা পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেয়া, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্বাচন ও উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা সহায়তা দেয়া, খাদ্য গোডাউন, পাওয়ার স্টেশন ও অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা এবং খাদ্য ও সুপেয় পানি সরবরাহ করার কাজ করবেন।
কিশোরগঞ্জে ঢেউয়ে ভাঙছে বাড়িঘর
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পর কিশোরগঞ্জে নদ-নদীর পানি ফুলে উঠছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার প্রায় সবগুলো নদীতে ৫০ সেন্টিমিটারের ওপরে পানি বেড়েছে। অধিকাংশ স্থানেই নদ-নদীতে পানি বিপদসীমায়।
এ পরিস্থিতিতে ঢেউয়ে মানুষের বাড়িঘর ভাঙছে। মানুষজন বাঁশের বাজারে ভিড় করছেন। সেগুলো দিয়ে কোনোরকমে বাড়িঘর টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
এ দিকে ইটনা, মিঠামইন, নিকলী ও করিমগঞ্জে দুই শতাধিক মাছের খামার ভেঙে বন্যার পানির সাথে একাকার হয়ে গেছে। ভেঙেছে বাড়িঘর। এতে কয়েক হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মতিউর রহমান বলছেন, যেহেতু সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, সেহেতু কিশোরগঞ্জেও বন্যা বাড়ার আরো আশঙ্কা আছে।
আগামী কয়েক দিনে কিশোরগঞ্জে বন্যাপরিস্থিতি কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান বলেন, সবগুলো অববাহিকাতেই পানির প্রবাহ বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই বেশি, তবে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এখনো তা বলা যাচ্ছে না।
পদ্মার ভাঙনের কবলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া প্রান্তের ১ নম্বর ফেরিঘাট এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। এছাড়া নদীতে স্রোত থাকায় ফেরি চলাচল সাময়িক ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এদিকে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দৌলতদিয়ার জিরো পয়েন্টে শতাধিক দূরপাল্লার পরিবহন, পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান আটকা পড়েছে। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, দৌলতদিয়ার ১ নম্বর ফেরিঘাটের মজিদ শেখেরপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে।
যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে সারিয়াকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদীর কাছাকাছি এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। বিপদসীমার কাছাকাছি পানি থাকায় নদী এলাকার কাছের কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার পরশুরাম জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনা নদীতে সারিয়াকান্দির কালিতলা পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে বাঙালী নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসকিয়া বলেন, যমুনা ও বাঙালী নদীতে পানি বাড়ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে করে ১৯ জুনের মধ্যে যমুনা এবং বাঙালী নদীতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এক্ষেত্রে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যার কবলে তিস্তা অববাহিকা
রংপুর অফিস জানায়, গজলডোবার গেট খুলে দেয়ায় উজানের ঢল এবং বর্ষণে তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে শুক্রবারও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ কমবেশি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বাদামসহ উঠতি ফসল। দুর্গত মানুষের পাশে এখনো পৌঁছেনি কোনো সহায়তা।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলের কারণে ডালিয়া ব্যাজার পয়েন্টে তিস্তায় শনিবার রাতে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। তবে শুক্রবার সকাল ৯টায় তা ৫ সেন্টিমিটার নিচে নেমে আসে। এখনো ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা এবং নদীপাড়ের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধি শুরু হওয়ায় নীলফামারীর ডিমলার ছাতনাই এলাকা থেকে জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারি, সদর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত অববাহিকার ৩৫২ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। দুর্গত এলাকায় মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছেন।
তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বাড়তে থাকে এবং সকাল ৯টার পর থেকে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি, জলঢাকা উপজেলার শৌলমারী ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের ১৫টি চর প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসফাউদ দৌলা জানান, উজানের ঢলে তিস্তার পানি ভোর থেকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্যারাজের সবক’টি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। নদীতীরবর্তী নিচু এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ওপর
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সদর, উলিপুর ফুলবাড়ী, চিলমারী, রাজারহাট উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। চর ও দ্বীপচরগুলো প্লাবিত হওয়ায় ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকায় অনেক পরিবার ঘরের ভিতর উঁচু মাচানে ও নৌকায় দিন পার করছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার, দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভোলায় মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপরে
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ভোলায় মেঘনার পানি বেড়ে বাঁধের বাইরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ এবং পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর থেকে মেঘনার পানি বিপদসীসার ৩১ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর তীরবর্তী দ্বীপচর ও উপকূলের বাঁধের বাইরের অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে এতে কোথায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা।
নেত্রকোনার ৩ উপজেলা প্লাবিত
নেত্রকোনার তিনটি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, শুক্রবার জেলার সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, উব্ধাখালি নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ও ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ময়মনসিংহে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
ময়মনসিংহ অফিস ও ধোবাউড়া সংবাদদাতা জানান, অতিবৃষ্টি, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ধোবাউড়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের খাগগড়া গ্রামে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নোয়াপাড়া, কড়ইগড়া, কালিকাবাড়ি, বল্লভপুর, খাগগড়া গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
নালিতাবাড়ীর ৬ ইউনিয়ন প্লাবিত
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নালিতাবাড়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার একাংশ প্রবাহিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোগাই ও চেল্লাখালির ১৫ জায়গায় ভাঙনের কারণে এ প্লাবিত হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।
ভারত থেকে নেমে আসা খরস্রোতা ভোগাই নদীর বেশ কিছু স্থানে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এ কারণে নয়াবিল, বাঘবেড়, যোগানিয়া, মরিচপুরান, নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে চেল্লাখালী নদীর ভাঙনের কারণে কলসপার ইউনিয়নের কিছু বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মাদরাসায় পানি ঢুকেছে। দুই নদীর পানি বৃদ্ধি পওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতি: দা:) মোস্তাফিজুর রহমান, পৌরসভার মেয়র আবু বকর সিদ্দিক ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
ধুনটে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম
ধুনট (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলার যমুনা নদীর সহড়াবাড়ি ঘাট পয়েন্টে ১৬ দশমিক ৭২ মিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬.৭০ মিটার। গত ৪৮ ঘণ্টায় ১১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যমুনা পাড়ের মানুষের মাঝে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আসাদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ছাতকে কয়েক লাখ মানুষের বাঁচার আকুতি
ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যার ভয়াবহতায় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দিয়েছে। এখানে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী। গোটা সুনামগঞ্জ জেলা বিদ্যুৎবিহীন থাকায় বানভাসি মানুষের দুর্ভোগে শেষ নেই। বন্যাকবলিত থাকায় সিলেট সুনামগঞ্জ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘরবাড়ি গবাদিপশু ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে লাখ লাখ মানুষ। বন্যায় উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নসহ গোটা পৌরসভা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দির। সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সব নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ও নদ- নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে।