সান্তাহারে ছয় মাসে ট্রেনে কাটা পড়েছে ৩০ জনের মৃত্যু
বগুড়াঃ গত ছয় মাসে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার রেলওয়ে (জিআরপি) থানা এলাকায় ব্রড ও মিটারগেজ রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩০ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ফলে প্রতিমাসে গড়ে পাঁচজন করে মানুষের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ জুন পর্যন্ত থানায় ৩০টি অপমৃত্যু মামলাও দায়ের হয়েছে। তবে এসবের মধ্যে আত্মহত্যা আর রেললাইনে অসতর্কভাবে চলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণহানির ঘটনা বেশি ঘটেছে বলে রেল পুলিশের দাবি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেন বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার ইউপির প্রান্নাথপুরে সংস্কারকাজ চলাকালে রেলব্রিজ এলাকায় পৌঁছলে চালক ট্রেনের গড়ি কমিয়ে দেন। সেই সুযোগে আব্দুর রাজ্জাক (৬০) নামের এক মাদুর ব্যবসায়ী সেখানে নামিয়ে পড়ার চেষ্টাকালে ট্রেনের নিচে পড়ে কাটা পড়ে মারা যান। তিনি নওগাঁর রাণীনগরের মধ্যরাজাপুর গ্রামের মৃত আতোয়ার হোসেনের ছেলে।
এছাড়া ওইদিন সকালে রাণীনগর রেলস্টেশন এলাকায় তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে কয়সের সরদার (৫০) নামের এক শ্রমিক ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
তিনিও একই উপজেলার পারইল ইউনিয়নের বোদলা গ্রামের মৃত বাহার সরদারের ছেলে। এসব ঘটনায় ওইদিন রাতেই থানায় পৃথক দুটি ইউডি মামলা হয়।
রেলওয়ে পুলিশের অপমৃত্যু রেজিস্ট্রার হিসাব ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের জনুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সান্তাহার রেলওয়ে থানাধীন এলাকায় ট্রেনে কাটা অপমৃত্যু মামলা হয় মোট ৩০টি। এর মধ্যে ২৭টি লাশের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
বাকি মাত্র তিনটি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সহযোগিতায় সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
রেলওয়ে থানা পুলিশের দাবি, অসাবধানতায় রেললাইন পারাপার, চলন্ত ট্রেনে ওঠা-নামা, ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা, ট্রেনের ছাদে ও দরজায় ভ্রমণ এবং ট্রেন থামার আগে নামার চেষ্টা এসব দুর্ঘটনার বড় কারণ।
সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি মোক্তার হোসেন জানান, ২০০ কিলোমিটারের সান্তাহার রেলওয়ে থানাধীন এলাকায় রয়েছে দক্ষিণে নাটোরের মালঞ্চি ও উত্তরে দিনাজপুরের হিলি এবং পূর্ব দিকে বগুড়ার সোনাতলা। বিশাল এ কর্ম এলাকায় আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে রয়েছেন ওসি, এসআই, মুন্সি ও কনেস্টেবলসহ সর্বমোট ৩৫ জন পুলিশ সদস্য। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
শুধু তাই নয়, ট্রেনে কাটা মরদেহ বহনের জন্য থানায় কোনো লাশবাহী গাড়ি বরাদ্দ নেই। মরদেহ উদ্ধার ও দাফনের খচরের বরাদ্দও কম। এসব কারণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সৃষ্ট সমস্যগুলো দ্রুত নিরসন হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সান্তাহার জংশনের স্টেশন মাস্টার হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, সান্তাহার স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন সর্বমোট ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে মিটারগেজে ১২টি ও ব্রডগেজে ২৬টি ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। তারা শুধু এসব ট্রেনের যাত্রীদের সেবা প্রদানের দায়িত্ব পালন করেন। আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে রেল পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, সম্প্রতি এই স্টেশনের আওতায়ভুক্ত এলাকাসমূহে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়