সাত বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ ঝুলে আছে ৪ বছর
শরীয়তপুরঃ জেলার ভেদরগঞ্জে বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে অন্তত ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বারবার ধরনা দিয়েও কূলকিনারা করতে পারছেন না বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় জানিয়েও সুফল মেলেনি। এলজিইডির কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় চরম মূল্য দিতে হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। শ্রেণিকক্ষ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। এত কিছুর পরও রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার ১৩৩ নং আবু সাইদ মাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩৮ নং সরদার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২৮ নং দুদু মিয়া বেপারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়. ১১৪ নং প্রগতি বিদ্যানিকেতন, ৪৮নং দক্ষিণ সখিপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় ও ১নং সখিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে এলজিইডি। এক বছরের মধ্যে বিদ্যালয়গুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করার শর্তে ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ শেষ করে এখানো বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভবন বুঝিয়ে দিতে পারেনি। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বিদ্যালয়গুলোর পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে, শ্রেণি সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। চরমভাবে শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোতে। এ বিষয়ে বারবার উপজেলা শিক্ষা অফিস, এলজিইডি এমনকি উপজেলায় বিভিন্ন সভায় উপস্থাপন করেও প্রতিকার পাচ্ছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, এলজিইডির নির্মাণ কাজেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে প্রতিনিয়ত। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন সাধারণ মানুষ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো বিদ্যালয়ে একতলার ছাদ ঢালাই শেষে দ্বিতীয় তলার ছাদের কিছু কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ছাদ ও রুম করে ফ্লোর ঢালাই না করেই লাপাত্তা ঠিকাদার। কিছুদিন পরপর ৩-৪ জন শ্রমিক এসে এক দুইদিন কাজ করে আবার লাপাত্তা হয়ে যায়। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। রুম সংকটের কারণে নির্মাণাধীন ভবনে ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে বিদ্যালয়গুলোতে। এলজিইডি কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে বলে অভিযোগ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।
৮৪নং দক্ষিণ সখিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সালমা জাহান বলেন, ভবন সংকটের কারণে আমরা ১ শিফটে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করতে পারছি। ২০২০ সালে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কিছুদিন কাজ করার পরে কাজ বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারের লোকজন। আমরা অফিসে জানানোর পর আবার কাজ শুরু করে। এক দেড় মাস পর আবারো কাজ বন্ধ করে চলে যায়। এখন ছয় মাস ধরে কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা বিপদের মধ্যে আছি।
১২৮নং দুদু মিয়া কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক আলম বলেন, আমার বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর ২০১৯ সালে নতুন এ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এক বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আজ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করছে না। আমরা বাধ্য হয়ে নির্মাণাধীন ভবনেই শিশুদের পাঠদান করছি। কারণ এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ঠিকাদারকে অনেক অনুরোধ করেছি। কোনো লাভ হয়নি। বহুবার শিক্ষা অফিসে, এলজিইডি অফিসে জানানো হয়েছে। কোনো লাভ হয়নি। এখন আমরা কি করব তাও বুঝতে পারছি না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী অনুপম চক্রবর্তী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি মৌখিকভাবে বারবার বলার পরও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি এলজিইডির কর্মকর্তারা। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়েছে। তাই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিত নির্দেশ দেয়া হবে। এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করার ব্যবস্থা করব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়