সশরীরে সব ক্লাস, অভিভাবক মহলে স্বস্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর এ প্রথম পুরোদমে শুরু হচ্ছে সব শ্রেণীর ক্লাস। আগামী মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক রুটিনে ফিরছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দুই বছর পর সব শিক্ষার্থী স্বাভাবিক রুটিনে ক্লাসে ফেরার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, দুই বছরে বিকল্প উপায়ে অনলাইনে শিক্ষার্র্থীদের ক্লাস নেয়া হলেও সশরীরে ক্লাসের যে সুবিধা, তা অন্য কোনো উপায়ে সম্ভব হয় না।
তাই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে এখন সব শিক্ষার্থীকে সশরীরে ক্লাসে ফেরানোর সিদ্ধান্তকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি জানান, আগামী ১৫ মার্চ থেকে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ওই দিন থেকে সর্বস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণীকক্ষে সশরীরে পুরোদমে ক্লাস শুরু হবে। রাজধানীর টিকাটুলিতে শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা জানান। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এতদিন ক্লাস শুরু করতে পারিনি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনা হয়েছে।
এ অবস্থায় আগামী ১৫ মার্চ থেকে স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাস শুরু করা হবে। তিনি বলেন, শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংক্রান্ত নোটিশ দেয়া হবে। একই সাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করণীয় সম্পর্কেও বলে দেয়া হবে। মাধ্যমিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান করা হবে। এ সিলেবাসের আলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা হবে।
পরীক্ষার চাপ থাকবে না। মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা কোনো চাপে থাকুক। তাদের পাঠ আনন্দদায়ক করার জন্য আমরা কাজ করছি। নতুন কারিকুলামের আলোকে পড়াতে পারলে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে যাওয়া লাগবে না। স্কুল খুলে দেয়ার ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করে ইয়াসমিন নামের এক অভিভাবক বলেন, স্কুলে গিয়ে সশরীরে ক্লাসে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা যেভাবে শিখতে পারে, অন্য কোনোভাবে তা সম্ভব নয়।
এ ছাড়া দুই বছর ঘরে থেকে অনেক বাচ্চাই পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। তারা যদি এখন ক্লাসে ফিরতে পারে, তাহলে পড়ালেখাতে আগের মতোই পুরোদমে মন দিতে পারবে। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু গতকাল শনিবার নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘ দুই বছর পর পুরোদমে ক্লাস চালুর ঘোষণায় সব অভিভাবকই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আমরাও চাই সব শিক্ষার্থী সশরীরে গিয়ে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিক।
একই সাথে দুই বছরে পড়ালেখায় যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা পুষিয়ে নিতে সরকার দ্রুত একটি রোডম্যাপও ঘোষণা করুক। প্রসঙ্গত করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ২১ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও সব শিক্ষার্থীকে একই দিনে ক্লাসে নেয়া হয়নি। সরকারি নির্দেশনা মেনে এবং স্বাস্থ্যবিধির আলোকে ভিন্ন ভিন্ন দিনে শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাসে আসার রুটিন দেয়া হয়।
সেই আলোকেই চলছে ক্লাস। অপর দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু হয় গত ২ মার্চ। এ ছাড়া আগামী ১৫ মার্চ থেকে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও এতদিন বিভিন্ন শর্তারোপ করা ছিল। এবার স্বাস্থ্যবিধি ছাড়া অন্য শর্তগুলো তুলে দেয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।