খুঁড়িয়ে চলছে মাগুরার সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ
মাগুরাঃ জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চলছে নানা সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক ও কর্মচারীর তীব্র সংকটে ভুগছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি অবকাঠামোসংকটও ভোগাচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে জানা যায়, ১৯৪০ সালে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৯ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়। ১৯৭৪ সালে এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি স্নাতক ডিগ্রি পাস কোর্স চালু হয়। ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে পাঁচটি বিষয় দিয়ে স্নাতক (সম্মান) চালু করা হয়। এরপর ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর (অনার্স ডিগ্রিধারীদের জন্য) এবং ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রিলিমিনারি মাস্টার্স (ডিগ্রি পাস কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য) চালু হয়। এখন এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাশাপাশি স্নাতকে ১৪টি, স্নাতকোত্তরে ১৩টি এবং প্রিলিমিনারি মাস্টার্সের ৬টি বিভাগ চালু রয়েছে।
উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন এই প্রতিষ্ঠানে। আর শিক্ষক আছেন মাত্র ৫৭ জন। কর্মচারী আছেন ১৪ জন। অথচ পুরো শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে শিক্ষক প্রয়োজন ২৩৩ জন, কর্মচারী প্রয়োজন ২৬৫ জন।
শিক্ষকেরা বলছেন, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে কলেজে ডিগ্রি পাস কোর্স চালুর পর যে জনবলকাঠামো ছিল, এখনো তাই রয়ে গেছে। এরপর স্নাতক, স্নাতকোত্তর চালু হলেও নতুন জনবলকাঠামো তৈরি হয়নি।
ডিগ্রি পাস কোর্স চালুর সময়ের ওই জনবলকাঠামো অনুযায়ী এই কলেজে বর্তমানে শিক্ষকের পদ আছে ৬৩টি। এই পদগুলোর মধ্যে সাতটি পদ শূন্য। শিক্ষার্থীদের ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, ভূগোল, কৃষিশিক্ষা ও গার্হস্থ্য অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো পড়াতে হলেও এসব বিষয়ে শিক্ষকের কোনো পদ এখনো সৃষ্টি হয়নি। এসব বিষয়ে অতিথি শিক্ষক দিয়ে কাজ চালাতে হয়।
বিদ্যমান জনবলকাঠামোতে কলেজে কর্মচারীর পদ রয়েছে ২৩টি। তাঁদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১৪ জন। শূন্য আছে ৯টি পদ।
প্রায় সময় ক্লাস হয় না
সম্প্রতি কলেজ স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষকসংকটের প্রভাব তাঁদের ওপর সরাসরি পড়ে। তাঁরা বলছেন, কলেজে পর্যাপ্ত ক্লাস না হওয়ায় প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীকে জটিল বিষয়গুলোতে প্রাইভেট পড়তে হয়।
গণিত বিভাগে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শিক্ষকসংকটের প্রভাব আমাদের কলেজে একদম স্পষ্ট। বড় কলেজগুলোর তুলনায় আমাদের শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা কম। নানা কারণে মাঝেমধ্যে ক্লাস বাতিল হয়। শিক্ষার্থীরাও কমসংখ্যক ক্লাসে আসেন।’
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক ইমরান নাজির বলেন, ‘আমাদের উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ে একটা করে ক্লাস হিসাব করলে দেখা যায়, সেটা ৫০ ছাড়িয়ে যায়। নিয়মিতভাবে এতগুলো ক্লাস নিতে হলে ১২ থেকে ১৪ জন শিক্ষকের দরকার। সেখানে আমরা আছি চারজন। একজন শিক্ষকের পক্ষে দিনে চারটার বেশি ক্লাস নেওয়া কঠিন কাজ।’
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিকাশ রায় বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স মিলিয়ে আমাদের প্রায় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার শিক্ষার্থীকে বাংলা পড়াতে হয়। চারজন মিলে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হয়। এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর তো পড়েই।’
ছাত্রাবাস নেই
বর্তমানে কলেজে ছাত্রীদের জন্য দুটি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। যেখানে মাত্র ৩৪০ জন ছাত্রী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন। বাকিরা মেসে বা বাড়িতে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে কলেজে কোনো ছাত্রাবাস নেই। গণিত বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. কাজল হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি শালিখা উপজেলায়। আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেসে থাকেন। যেখানে মেসে প্রতি মাসে একেকজনের থাকা খাওয়াসহ খরচ হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে। কলেজে ছাত্রাবাস থাকলে এই টাকার অনেকটাই সাশ্রয় হতো।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. আবদুল হাকিম বিশ্বাস বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কলেজে জনবলের সংকট রয়েছে। সংকট সমাধানে আমরা প্রস্তাবিত একটি জনবলকাঠামো মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। আরও ১৭০ জন শিক্ষক ও ১২১ জন কর্মচারীর পদ সৃষ্টির আবেদন জানানো হয়েছে। সেটা বাস্তবায়িত হলে একেকটা বিভাগে ১ জন অধ্যাপক, ৩ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৫ জন সহকারী অধ্যাপক ও ৫ জন প্রভাষক মিলে মোট ১৪ জন শিক্ষক থাকবেন। তবে এটা কবে বাস্তবায়িত হবে, এ বিষয়ে আমাদের কাছে সঠিক কোনো তথ্য নেই।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়