সরকারি মোস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা: নানা অনিময়ের অভিযোগে দ্বন্দ্বে শিক্ষকরা
বগুড়াঃ মাদ্রাসা থেকে একটি ঐতিহ্যবাহী লোহার সিন্দুক গোপনে বিক্রি। অবৈধ পন্থায় গাছ বিক্রি। গাছের ডাল বিক্রি। হোস্টেলের বড় বড় হাঁড়ি ভেঙে বিক্রি করা হয়েছে। ১২টি সিসি ক্যামেরা গায়েব। ১টি কম্পিউটার ল্যাবের সব কম্পিউটার গায়েব। লিজ ছাড়াই পুকুর চাষ ও মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। অতিরিক্ত সেশন ফি আদায়সহ নানা দুর্নীতি হচ্ছে বগুড়ার সরকারি মোস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসায়। স্বয়ং মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন জি এম শামছুল আলম নামে এক শিক্ষক। তিনি একই মাদ্রাসার আরবি ও ইসলামি শিক্ষা সহকারী অধ্যাপক।
জি এম শামছুল আলম আরও বলেন, এসব দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করায় আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানির মধ্যে ফেলা হয়েছে। আমার নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। আমি আমার নামে ছড়ানো সব অপবাদের প্রমাণ চেয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ প্রমাণ দিতে পারেননি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। জানা যায়, সম্প্রতি বগুড়ার সরকারি মোস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক জি এম ছামছুল আলমের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা হয়।
এ বিষয় বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ওই মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী। অভিযোগের কপিতে স্বাক্ষর করেন আলিম শ্রেণির সোয়াইবা আক্তার, মারিয়া খাতুন, মেঘলা এবং সাফিয়া নামের চার শিক্ষার্থী। তারা তাদের লিখিত অভিযোগে বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষক জি এম ছামছুল আলম তাদের এ প্লাস পেয়ে দেয়ার প্রলোভনে বিভিন্ন সময়ে কু-রুচিপূর্ণ আচরণ, হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর মেসেজ প্রদানসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করেছেন। বিষয়টির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক জি এম ছামছুল আলম বলেন, সোয়াইবা আক্তার নামে যে মেয়েটি স্বাক্ষর করেছে সে বর্তমানে ওই মাদ্রাসার ছাত্রী নয়। ২০২২ সালে আলিম পরীক্ষা দিয়ে এখান থেকে পাস করে চলে গেছে। দরখাস্তে যে মোবাইল নম্বরটি দেয়া হয়েছে সেটি সোয়াইবা নামের ওই মেয়েটির। কিছুদিন আগে সে তার অন্য বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে আমার বাসায় এসে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। যা তাদের আমার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তার সঙ্গে আসা কয়েকজনের মধ্যে আসিফ, সিদ্দিকুর ও ফাহমিদার সঙ্গে আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি।
তারা প্রত্যেকে বলেছে আমরা কখনোই শুনিনি স্যার তার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ বা খারাপ কথা বলেছেন। তাদের কথোপকথনের রেকর্ড আছে আমার কাছে। তিনি আরও বলেন, আমি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং তার সহযোগী কিছু শিক্ষকের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি এজন্যই আমার নামে এসব মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সাইফুল ইসলাম কোয়েল নামের একজন মাদ্রাসার খণ্ডকালীন গেটম্যান হিসেবে চাকরি করতেন। সঠিকভাবে ডিউটি না করার কারণে অধ্যক্ষ তাকে চাকরি থেকে বাদ দেন। এ ছাড়াও গত বছর পর্যন্ত সে মাদ্রাসার পুকুর লিজ ছাড়াই অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে মাছ চাষ করেছিল। সে এ বছর মাছ চাষের সুযোগ পায়নি। আমি যেহেতু স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারি তাই সে আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে যেকোনো ভাবে আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে। তার মূল উদ্দেশ্যই হলো আমাকে মাদ্রাসা থেকে বিদায় করা। এর আগেও সাইফুল ইসলাম কোয়েল আমাকে আক্রমণ করেছিল। সে সময় আমি তার বিরুদ্ধে জিডি করেছিলাম।
বগুড়া সদর থানায় যার জিডি নং-১৯৩৭/১৯। আরেকজন খণ্ডকালীন শিক্ষক হারুনুর রশিদ মাদ্রাসার নানা দুর্নীতির সহযোগী। তিনি মাদ্রাসার নাম ব্যবহার করে মাদ্রাসার গেটের সঙ্গেই একটি কোচিং সেন্টার খুলেছেন। ক্লাস না নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে ভর্তি হতে বাধ্য করান। আমি তার এমন কর্মকাণ্ডের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছি। ফলে ওই শিক্ষকও নিজের অপরাধ আড়াল করতে আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমি প্রশাসনকে অবহিত করলেও কোনো সুরাহা পাইনি।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, খণ্ডকালীন শিক্ষক হারুনুর রশিদের সঙ্গে আরেক শিক্ষক জি এম ছামছুল আলমের সঙ্গে টাকা লেনদেন নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। তদন্ত কমিটি বলতে পারবে। লোহার সিন্দুক বিক্রি, গাছ বিক্রির অভিযোগগুলো তিনি ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বলেন, সিন্দুকটি অনেক পুরাতন ছিল, আর গাছ নয় গাছের কিছু ডালপালা বিক্রি করা হয়েছে। সূত্রঃ মানবজমিন
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়