সরকারি বাসা ভাড়া দেন বুটেক্স কর্মকর্তা-কর্মচারী
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকা; দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের বাসাগুলোতে থাকতে পারেন বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী। সরকারি এই বাসায় উঠতে তাদের মানতে হয় বাসা বরাদ্দের সব নীতিমালা। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)-এর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বাড়তি আয়ের আশায় নিজের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি বাসা ভাড়া দিয়ে ভাড়াটে থেকে তোলেন মাসে রুমপ্রতি ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা এবং তিন রুমের পুরো বাসা থেকে ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা। কিছু ক্ষেত্রে নিয়ে থাকেন লক্ষাধিক অগ্রিম টাকা।
সরেজমিনে ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকা-১-এ গিয়ে দেখা যায়, বাসাগুলোর কোনোটা পুরোপুরি, আবার কোনোটা আংশিক ভাড়া দিয়েছেন বুটেক্স কর্মকর্তা-কর্মচারী। তিন রুমবিশিষ্ট সরকারি বাসা যারা পূর্ণ ভাড়া দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ডালিয়া-১ ভাড়া দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভার সিদ্দিকুর রহমান, ডালিয়া-২ ভাড়া দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার, রূপসা-৬ ভাড়া দিয়েছেন সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার ফারুকুল ইসলাম চৌধুরী, রূপসা-৭ ভাড়া দিয়েছেন পাবলিক রিলেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম, চামেলী-৮ ভাড়া দিয়েছেন সহকারী রেজিস্ট্রার এহসানুল করিম, টগর-৮ ভাড়া দিয়েছেন ড্রাইভার বাবু, টগর-১৫ ভাড়া দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ড আব্দুল আলীম।
তা ছাড়া এক রুমে সপরিবারে থেকে বাকি দুই রুম ভাড়া দিয়েছেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৮ এবং দুই রুমে সপরিবারে থেকে বাকি এক রুম ভাড়া দিয়েছেন ১৩ জন।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু লিখিত অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কাবেরী মজুমদারের বরাবর। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মারজানী তুবন নাহার-এর স্বাক্ষরিত অভিযোগে 'বাসা বরাদ্দ নীতিমালা-২০১৬'-এর ধারা ১০(২): কর্মকর্তা/কর্মচারী অথবা পরিবার স্বাভাবিকভাবে বরাদ্দকৃত বাড়িতে না থাকে সেই ক্ষেত্রে বাসার বরাদ্দের আদেশ বাতিল হইবে উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ আনেন, বাসায় অ্যালটমেন্ট নেওয়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বাইরের মানুষদের ভাড়া দিয়ে থাকেন। ফলে অবস্থানরত বুটেক্স কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তার শঙ্কায় থাকেন। তার অভিযোগে আরও বলা আছে, ভাড়াটিয়ার অনেকে রিকশা/ট্যাক্সিচালক হওয়ায় তাদের গাড়ি রাত ১২/১টায় আবাসিক এলাকায় রেখে যেন আবাসিক এলাকা গাড়ির গ্যারেজ বানিয়ে ফেলেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সাবলেট ভাড়াটিয়া আছে মামলার আসামি। আসামির জন্য পুলিশ মাঝেমধ্যে টহল দিতে আসলে বাসার পরিবেশ নষ্ট হয়।
আবাসিক এলাকা-১-এ মেঘনা ভবনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এমদাদ সরকার বলেন, সাবলেট নেওয়া বাসায় মামলায় অভিযুক্ত আসামি অবস্থান নেওয়ায় বিভিন্ন সময় বাসায় পুলিশ আসে। এ জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানরা খেলাধুলার জায়গা পাচ্ছে না বাসা ভাড়াটিয়াদের সন্তানদের জন্য। অনেক ভাড়াটিয়া গার্মেন্টসকর্মী কিংবা গাড়ির চালক। দিনে কর্মস্থলে থাকাকালীন আমাদের সন্তানরা তাদের সন্তানের সঙ্গে মিশে অশোভন আচরণ শিখছে, এসব ব্যাপারে আমরা খুব শঙ্কায় আছি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউর রহমান খানের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত সহকারী রেজিস্ট্রার এহসানুল করীমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি তো আর একা ভাড়া দিচ্ছি না; সবাই ভাড়া দিচ্ছে, তাই আমি দিচ্ছি। যদি সবাইকে নিয়মে আনা হয়, তাহলে আমিও তা মেনে নেব।
অভিযোগের ব্যাপারে আরেকজন অভিযুক্ত পাবলিক রিলেশন অফিসার শফিকুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ আলীমুজ্জামান উপাচার্য পদে রুটিন দায়িত্বে আসার আগে উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম। তিনি উপাচার্য থাকাকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরাদ্দকৃত বাসা বাইরের মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কাবেরী মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে আমারও ইচ্ছা আছে পদক্ষেপ নেওয়ার। কিন্তু আমাদের উপাচার্য রুটিন দায়িত্বে আছেন; আমরা পার্মানেন্ট উপাচার্য পেলেই এটা নিয়ে কাজ করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হবে, তা জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা জানি না; ভিসি কবে আসবেন, তা প্রধানমন্ত্রী থেকে নির্ধারণ হয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়