সম্ভাবনাময় জেলা থেকে সমৃদ্ধির পথে পটুয়াখালী
।। বিন-ই-আমিন ।।
বাংলাদেশের দক্ষিণে বরিশাল বিভাগের একটি জেলা পটুয়াখালী। বাংলাদেশের মানচিত্রে সর্ব দক্ষিণের অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল । সূর্যের উদয়-অস্তের পৃথিবীর একমাত্র সমুদ্র সৈকত "কুয়াকাটা"র জেলা । সাগরকন্যার জেলা । যেখান থেকে দক্ষিণে পৃথিবীর আর কোনো বসতি নেই। ধারনা করা যায় পৃথিবীর শেষ প্রান্তের সাথে পটুয়াখালীর সংযোগ। মেঘনা নদীর অববাহিকায় পললভূমি। বাংলাদেশের ২য় সমুদ্র সৈকত ও ৩য় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর"পায়রা" এ জেলায় অবস্থিত।
অপার সম্ভাবনার পটুয়াখালীকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করাতে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে যিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি পটুয়াখালীর সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী । সম্ভাবনার পটুয়াখালীতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিভিন্ন প্রকল্পের ছক তৈরী এবং তা বাস্তবায়নে সরাসরি তদারকি ও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক নিজে। বরিশালের সদ্য সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকারের সিপাহশালার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তার সাবেক কর্মস্থল পটুয়াখালীর উন্নয়নে।
মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে তার নির্দেশনা ও তদারকির ফলে পায়রা সমুদ্র বন্দর ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পটুয়াখালীর অর্থনৈতিক কাঠামো বিশ্ব অর্থনীতিতে এনে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। অবকাঠামোগত উন্নয়নে নতুন সংযোজন শেখ হাসিনা সেনানিবাস, কোস্টগার্ড, শেখ কামাল সেতু, শেখ জামাল সেতু ও শেখ রাসেল সেতু এবং পায়রা সেতু পটুয়াখালীর যোগাযোগে এনে দিয়েছে নতুন দিগন্ত।
এতোসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের পটুয়াখালীকে বর্তমান সরকারের কর্ণধার জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়ই প্রকাশ পায় বিশ্বদরবারে কতোটা সমাদৃত জেলা পটুয়াখালী। সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের সাথে এক ভিডিও কনফারেন্সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী সম্বন্ধে বলেন , ""আমরা পটুয়াখালীতে তো অনেক কিছু করে দিয়েছি। পটুয়াখালী আজ খালি নেই। এখন ভরাট হয়ে গেছে । পটুয়াখালী এখন ভরপুর""। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মমতাপূর্ণ ও প্রত্যয়দীপ্ত উক্তিই প্রকাশ করে বিশ্বদরবারে পটুয়াখালী এক ব্র্যান্ডিং জেলা।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলাই ব্র্যান্ডবুকভুক্ত । "কুয়াকাটা অনন্য, পটুয়াখালী সাগরকন্যা" শিরোনামে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও তত্বাবধানে রচিত ব্র্যান্ডবুকটিতে জেলার সূর্য সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা বদ্ধভূমির কথা তুলে ধরা হয়েছে। সাগরকন্যা কুয়াকাটার বালুকাময় তটে রুপালি ঢেউয়ে আচড়েপড়া সাগরের সঙ্গে সূর্যের উদয়-অস্তের মিতালী মোহাচ্ছন্ন দৃশ্য, ইকোপার্ক, কাজলার চর, জমিদার বাড়ি, হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফার মাজার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ার বৃহত্তম বীজ বর্ধন খামার, পানি জাদুঘর, প্রাচীণ ঐতিহাসিক কুয়া, আইল্যান্ড, গঙ্গামতির চর, ফাতরার বন, শুটকি পল্লী, শ্রী মঙ্গলের বৌদ্ধ বিহার, মিশ্রি পাড়া, বৌদ্ধ মন্দির, ঝাউবন, রাখাইন পল্লী, প্রাচীণ কাঠের নৌকা সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহ পটুয়াখালীর পর্যটন শিল্প খুলে দিয়েছে এক অপার সম্ভাবনার । এসবের সার্বিক তত্বাবধান ও নিবিড় পর্যবেক্ষনেও গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী। যা পটুয়াখালী জেলার পরিচ্ছন্ন, পরিপূর্ণ এবং যথার্থ ব্র্যান্ডিং সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে জেলা প্রশাসনের এক প্রশংসনীয়, নান্দনিক এবং আইকনিক স্থাপনা হলো "বঙ্গবন্ধু তোরণ "। যাতে টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ইতিহাসের বাক পরিবর্তনের ঘটনাসমূহ। "বজ্রকন্ঠ" নামক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ , ১০ লাখ বৃক্ষের চারা রোপন কর্মসূচী, বৈশ্বিক এই মহামারি (কোভিড-১৯) করোনায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠিন পদক্ষেপ, এ আর খান লঞ্চে আইসোলেশন বেড স্থাপন, পিসিআর ল্যাব স্থাপনে ভূমিকা, করোনাকালীন আম্ফান মোকাবেলায় সফলতা, করোনার ২য় ঢেউ মোকাবেলায় কঠোর অবস্থান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাগনকে দেশের প্রয়োজনে জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োগ ও সঠিক তদারকি, জেলার সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা ও সরকারি নির্দেশনা মানাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন: আইন অমান্যে জরিমানা, স্বাস্থ্যবিধি অমান্যে জরিমানা, স্বতঃস্ফূর্তভাবে লক ডাউন কার্যকর, চেকপোস্টে যাত্রীদের তল্লাশি ও রাস্তায় বের হওয়ার সঠিক কারণ নির্ণয় সহ সকল কাজের সরেজমিনে পরিদর্শন, করোনাকালীন সময়েও সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে মাননীয় মন্ত্রী, সচিব সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাজ পরিদর্শনে আসলে সঠিক ও সফলভাবে সমাধান সবই সাহসিকতার সাথে সম্পন্ন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী।
"শিক্ষাবার্তা ডট কম পত্রিকার" সাথে আলাপকালে তিনি আরো জানান, জাতির পিতার আজীবন লালিত স্বপ্ন "সোনার বাংলা " গড়ার লক্ষ্যে অবিরাম ছুটে চলা বাংলাদেশ আজ বহির্বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সুখী,সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নিজস্বতাকে আপন মহিমায় বিকশিত করার জন্য জেলা ব্র্যান্ডিং একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও দুরদর্শি সিদ্ধান্ত। ২য় সংস্করণে সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশনা সম্পন্ন হয়েছে তাদের এবং এটুআই এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
পর্যটন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রস্তাব করেছিলেন"শিক্ষা টিভি" নামক একটি সরকারি চ্যানেল চালু করার। ঐ সভায়ই তার প্রস্তাবের গুরুত্ব চিন্তা করে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহন করেন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার কিছুদিন পরই বর্তমান সময়ের মহামারি কোভিড-১৯ অভিশাপ হয়ে দেখা দেয় পুরো পৃথিবীতে। পৃথিবীর উন্নত দেশের মতোই স্থবির হয়ে যায় বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম। স্থবির হয়ে যায় শিক্ষাটিভি কার্যক্রমও।
সারা পৃথিবীর ন্যায় বাংলাদেশেও যখন স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘরে বন্দী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তখনই শিক্ষা টিভির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরে বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা ব্যবস্থা চালিয়ে নিতে শিক্ষাটিভির কার্যক্রম চালু করেন সরকার। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবের দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষা সচিব সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
জেলায় শিক্ষা প্রসারেও জেলা প্রশাসকের ভূমিকা অনন্য। শিক্ষার প্রসার ও জেলা বাসীর জন্য মানসম্মত শিক্ষার প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তিনি। তেমনি শিক্ষকদের সম্মানে অবসরে যাওয়া শিক্ষককে তার সম্মেলন কক্ষে বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান করেছেন, যা বিরল। গার্লস গাইড প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলায় শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি কো- কারিকুলার কার্যক্রমেও সক্রিয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।