দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
সভাপতির বিরুদ্ধে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবদুল মোদাচ্ছের হোসাইনী মাসুক চিশতীর বিরুদ্ধে ভুয়া এতিম এবং একই এতিম শিক্ষার্থীকে দুটি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সরকারের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টের (নিবন্ধন প্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানাসমূহে শিশুদের প্রতিপালনের জন্য সরকারি আর্থিক সহায়তা) অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
গত বুধবার তাঁর বিরুদ্ধে এতিমের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হারুনুর রশীদ নামের এক ব্যক্তি। এ ছাড়া কবিরহাট উপজেলা ও লক্ষীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরও একই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
ওই অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আবদুল মোদাচ্ছের হোসাইনী মাসুক চিশতী কবিরহাট উপজেলার পদুয়া গ্রামের করমবপ বাজার সংলগ্ন করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং পার্শ্ববর্তী লক্ষীপুর জেলার সদর উপজেলার খালেকগঞ্জ বাজার সংলগ্ন শাহ জকিউদ্দিন হোসাইনী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসার অন্যতম পরিচালক। তিনি পারবিারিক সূত্র ধরে দায়িত্ব পেয়ে এই দুটি প্রতিষ্ঠান একক নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা করেন। গত কয়েক বছর ধরে মাসুক চিশতীর যোগসাজশে দুটি মাদ্রাসার মধ্যে সমন্বয় করে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টভুক্ত ভুয়া এতিমের তালিকা তৈরি করা হয়। দুটি এতিমখানার গ্র্যান্টভুক্ত এতিমদের তালিকায় দেখা যায় অনেক ছাত্রের নাম দুটি এতিমখানার তালিকাতেই হয়েছে। এভাবে এতিমদের সংখ্যা জালিয়াতির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে সরকারের বিপুল টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন মাসুক চিশতী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট পেতে এতিম ছাত্রদের তালিকা তৈরি, অর্থ গ্রহণ ও বণ্টনে মানা হয়নি সরকারি নীতিমালা। এতিম তালিকায় থাকা ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীর বাবা-মা আছেন। তাদেরও গ্র্যান্ট ক্যাপিটেশন পাওয়া এতিম হিসেবে দেখানো হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কবিরহাটের করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসায় কোনো এতিম ছাত্র নেই। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা এতিমের নামে সরকারি অর্থ বরাদ্দ নিয়ে অর্থ আত্মসাত করছেন।
কবিরহাট করিমের নেছা সাহেবানি এতিমখানায় গিয়ে কথা হয় মিনহাজ হোসেন, শহীদুল ইসলাম রিফাত, তামজিদ হোসেন, রাশেদুল ইসলাম, মো. নোমান, তামজিদ হোসেন, সাইফুল ইসলাম মাহমুদ, ফয়জুল করিম, মো. নিলয়ের সঙ্গে। কাগজে-কলমে এরা এতিমের তালিকায় থাকলেও তাদের বাবা-মা আছেন। তারা প্রত্যেকেই তারা প্রত্যেকেই নিজ খরচে সেখানে পড়াশুনা করছেন। ২০১৬ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পাওয়া (নিবন্ধন নং- ৮৩৫/১৬) এই এতিমখানায় কাগজে কলমে ৭৫ জন এতিম দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৫ জন এতিমের জন্য প্রতি মাসে ৯০ হাজার টাকা করে বছরে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে সরকারি অনুদান (ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট) পেয়ে আসছে এতিমখানাটি। সরকারি ভাতা ৪৫ জন পেলেও বাস্তবে ৫ জন এতিমও পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আবদুল মোদাচ্ছের হোসাইনী মাসুক চিশতী বলেন, অনেক জায়গায় অসহায়দেরকে প্রত্যয়নপত্র থাকলে এতিম হিসেবে গণ্য করা হয়। তার প্রতিষ্ঠানে এতিম আছে, এতিমের বাহিরেও আছে। লুকোচুরি করার কিছুই নেই। এতিমের বাহিরে কতজন আছে এতিমখানায় গেলে তা দেখা যাবে বলেও জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই দুটি মাদ্রাসার সভাপতি তিনি নন। দুটি এতিমখানা, মাদ্রাসা, মসজিদসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহ মোহাইমেন কমপ্লেক্সের অধীনে পরিচালিত হয়। তিনি শাহ মোহাইমেন কমপ্লেক্সের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
কবিরহাট উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, তিনি সেখানে নতুন এসেছেন। তাঁর কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। লক্ষীপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শরীফ হোসেন বলেন, অভিযোগ সত্য হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতিমা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/২৮/২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে পেজে লাইক দিয়ে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
এই বিভাগের আরও খবর