সভাপতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ: তদন্তে কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লাঃ জেলার দেবিদ্বারে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হাফেজিয়া শিশু সদন কমপ্লেক্সে ও এতিমখানা মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ভুয়া এতিম ছাত্র দেখিয়ে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত ও জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে কমিটির অনুমোদনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ-১৯৬১ অনুযায়ী নিবন্ধন প্রদান এবং পরবর্তীতে নিবন্ধন প্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানাগুলোর শিশুদের প্রতিপালন, চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয়, যা ক্যাপিটেশন গ্রান্ট নামে পরিচিত। এ ক্যাপিটেশন গ্রান্ট থেকে পাওয়া বিভিন্ন বরাদ্দ লোপাটের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জেলা সমাজসেবা অফিসারের বরাবর প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিসহ ১৬জন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পরে জেলা সমাজসেবা বিভাগ এ বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন।
লিখিত অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সভাপতি মো. জুলহাস সরকার নিজের আইডি কার্ড জাল জালিয়াতি করে এবং কমিটির আরও ১৪ জন সাধারণ সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে কমিটির সভাপতি হয়ে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আর্থিক কেলেংকারীসহ বিভিন্ন বিতর্কিত লোকদের নিয়োগ দেন। যা এলাকায় সাধারণ মানুষদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমিটির সভাপতি জুলহাস সরকার যার মূল জাতীয় পরিচয়পত্রে মো.আব্দুর রউফ সরকার উল্লেখ রয়েছে। তিনি তাঁর জাতীয় পরিচয় পত্র মূল নাম গোপন করে এতিমখানার ব্যাংক একাউন্টের হিসাব নম্বর থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়াও বাবা বাবা-মা থাকা ছাত্রদের এতিম দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসী জানান, দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হাফেজিয়া শিশু সদন কমপ্লেক্সে ও এতিমখানাটি কুমিল্লা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে নিবন্ধিত এবং ক্যাপিটেশন গ্রান্টপ্রাপ্ত। এছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয়দের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হয়। কিন্ত কমিটির বর্তমান সভাপতি জুলহাস মিয়া, কানন, আক্তার, তাজুল ইসলাম, খাইরুলসহ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে নামে বেনামে সরকারি বরাদ্দ আসা অর্থ আত্মসাৎ অভিযোগ উঠার বিষয়টি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো.নাছির উদ্দিন বিষয়টি তদন্ত করছেন।
তাঁরা আরও জানায়, বর্তমান অবৈধ কমিটির সদস্যরা নিজেরদের সুবিধার্থে মাহমুদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়। মাহমুদুল্লাহক ২০১৯ সালে মাদরাসার ১লক্ষ ৮৫ হাজার আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে ৩০০ টাকা টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে কমিটির বর্তমান সভাপতি জুলহাস, সদস্য কানন, আক্তার হোসেন, তাজুল ইসলাম, খাইরুল ইসলামের যোগ সাজেসে তাকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়। তাকে নিয়োগের পর থেকে এতিমখানার মসজিদে নামায আদায় করা বন্ধ করে দেয়।
প্রতিষ্ঠানের জমাকৃত অর্থ, এতিম শিশুদের ভরণপোষণের সরকারি বরদ্দ ও এতিমখানার অবকাঠামো উন্নয়নের নামে অর্থ কালেকশন, এতিমদের নামে আসা সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের সুবাধার্থে তাঁর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে পুনরায় নিয়োগ দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ। স্থানীয়রা আরও জানান, মোহাম্মদ মাহমুদুল্লা গ্রামের কিছু মাদক কারবারীদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। সে তাদের সোর্স হিসেবেও কাজ করছে নিয়মিত।
স্থানীয় বাসিন্দা অন্য একটি মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বর্তমান সভাপতি ছোট বেলা থেকেই নানা আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত। সে যখন এতিমখানায় সভাপতি হয়ে আসল তখন থেকে আমি এখানে দান সদকা করা বন্ধ করে দিয়েছি। তাঁর মূল নাম আব্দুর রউফ। সে যেখানে যখন সুবিধা পায় ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে। এ মাদরাসায় যাদের বাবা মা আছেন তাঁরাও এতিম শিশুর তালিকায় দিয়ে তাদের নামেও সরকারি অর্থ তোলা হয়।
বিষয়ে এতিমখানার শিক্ষক অভিযুক্ত মাহমুদুল্লাহ বলেন, আমি নিয়োগে কোন টাকা পয়সা দেইনি। বর্তমান কমিটি লোকজন মনে করেছেন আমাকে নিয়োগ দিবেন দিয়েছেন। আবার বাদ দিলে আমি চলে যাব। তবে এর আগে আমাকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। আর অন্য সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সভাপতি জুলহাস সরকার (প্রকৃত নাম আব্দুর রউফ) বলেন, আমাকে স্থানীয় আক্তার মেম্বার জালিয়াতি করে আব্দুর রউফ থেকে জুলহাস সরকার নামে ভোটার কার্ড নাম বানিয়েছে। তাকে আমি জিজ্ঞাসা করায় সে বলছে সমস্যা নাই। আমি জালিয়াতির কোন কাজ করিনি। মাদরাসা সুষ্ঠুভাবে চলছে। সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্ত ২২ এতিমের মধ্যে সবাই এতিম না বলেও তিনি স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল জব্বার বলেন, বর্তমান সভাপতির পদে থাকা জুলহাস সরকার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর প্রকৃত নাম আব্দুর রউফ। তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র আসল নাম গোপন করে আরও ১৪ জন সাধারণ সদস্যের জাল জালিয়াতির মাধ্যমে একটি প্রভাবশালী চক্রের সহযোগিতায় কমিটিতে আসে। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বর্হিভূত । এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা পরিচালকের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
দেবিদ্বার উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো.নাছির উদ্দিন বলেন, জেলা সমাজ সেবা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি আমাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি এটি তদন্ত করছি। খুব শিঘ্রই প্রতিবেদন জমা দেব।
কুমিল্লা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক জেড.এম.মিজানুর রহমান খান বলেন, এতিমখানার আর্থিকসহ নানা অনিয়মের বিষয়টি আমাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। দেবিদ্বারের সমাজ সেবা অফিসারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি কাজ করছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়