সবার দৃষ্টি এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে
অনলাইন ডেস্ক।।
টানা ১২ বছর বেশি সময় ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর এই বাস্তবতায় দেশের সব পরিস্থিতি তার নখদর্পণে। গত এক যুগে প্রায় একাই সব সমস্যার সমাধান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই যেকোনো সংকটে সকলে প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। সকলের একটি প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী কি করবেন?
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে অনেক সংকট কাটিয়ে উঠেছেন নিপুণ দক্ষতায়। সরকারের অনেকেই বিভিন্ন সংকটের সময় যখন মনে করে যে এই সংকট থেকে উত্তরণের অসম্ভব হবে তখন প্রধানমন্ত্রী তার বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়ে এসেছেন। এ কারণেই এখন নতুন সংকটে আবার সকলে প্রশ্ন করছে প্রধানমন্ত্রী কি করবেন?
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ১৭ মে নিগৃহীত হয়েছেন স্বাস্থ্য সেবা সচিবের দফতরে। এই নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাটি পরিকল্পিত এবং দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের অনেকেই। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, ১৭ মে ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক। সারাদেশ, গণমাধ্যম এই দিনটিকে উদযাপন করছিল। ঠিক সেই দিনেই ঘটনা যারা ঘটালো তাদের পেছনে অন্য কোন দুরভিসন্ধি আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছে যে, এই ঘটনার পাঁচটি দিক রয়েছে। এই পাঁচটি দিক বিচার বিশ্লেষণ করে প্রধানমন্ত্রীকে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে পাঁচটি দিক নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বৃষ্টিপাত করছেন তার মধ্যে রয়েছে-
১. ঘটনা আসলে কি ছিল:
এই ঘটনার বিভিন্ন রকম তথ্য দেওয়া হচ্ছে। যে সমস্ত ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে সেই সমস্ত ভিডিও তে বিভিন্ন রকম বক্তব্য আসছে। একটি পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রোজিনা আসলে কোন কাগজ চুরি করেনি। তাকে তার সোর্স কাগজ দিয়েছে। আবার ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, রোজিনা কাগজ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং এজন্য মুচলেকা দিতে রাজি আছেন। আবার কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা থেকে সত্য ঘটনা বের করা সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটির সত্য বের হলে বোঝা যাবে যে কারা আসলে ষড়যন্ত্রকারী।
২. ৬ ঘণ্টা কেন রোজিনাকে আটকে রাখা হল:
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া যায় যে রোজিনা কাগজপত্র চুরি করেছেন তাহলে এটি সমাধান করা ছিল ১৫ থেকে ২০ মিনিটের ব্যাপার। রোজিনার কাছ থেকে একটি মুচলেকা নিয়ে তাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সোপর্দ করাই ছিল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মূল দায়িত্ব। তারা পাশাপাশি মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েও প্রথম আলোর সম্পাদককে এ ব্যাপারে লিখিত চিঠি দিয়ে জানাতে পারতেন। কিন্তু সেগুলো না করে ৬ ঘণ্টা ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন কেন এই প্রশ্নের উত্তরটি অত্যন্ত জরুরী। এই প্রশ্নের মধ্যেই এই ঘটনাটি কি ষড়যন্ত্রমূলক নাকি দায়িত্বহীনতা তা বেরিয়ে আসবে। কাজেই প্রধানমন্ত্রী কি করবেন সেই সিদ্ধান্তের আগে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।
৩. গণমাধ্যম বান্ধব সরকার:
বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে যখন গণমাধ্যমের সকল পক্ষই সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে তখন এই বিতর্ক কেন চলছে এবং এই বিতর্ক কেন উস্কে দেয়া হচ্ছে সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজতে হবে। এখন পুরো গণমাধ্যমকে আবার আস্থায় নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ প্রধানমন্ত্রী কিভাবে মোকাবেলা করবেন সেটি দেখার বিষয়। কারণ রোজিনার ইস্যুতে শুধু বিরোধী পক্ষের সাংবাদিকরা নয়, সরকার সমর্থক সাংবাদিকরাও মাঠে নেমেছেন। এখানেই বস্তুনিষ্ঠ এবং দায়িত্বশীল একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে সরকারকে। সেই সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকিয়ে আছেন সকলে।
৪. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যৎ:
এই ঘটনার মধ্যে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যা তা হল যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অযোগ্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং দুর্নীতিবাজদের হাতে রয়েছে। তারা এই বিষয়টি একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা কথাবার্তা বলছিলেন। এখন প্রধানমন্ত্রী কি করবেন? তিনি কি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোন বড় ধরনের পরিবর্তন আনবেন?
৫. আমলাদের বাড়াবাড়ি:
এই ঘটনায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে তা হল আমলারা বাড়াবাড়ি করেছেন। আর আমলাদের বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী কি করবেন সেটি দেখার অপেক্ষায় আছে গোটা দেশবাসী।