স:প্রা: বিদ্যালয় শিক্ষক সংকট কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত
মোয়াজ্জেম হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
কলাপাড়ায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক স্বল্পতায় শিক্ষা কার্যত্রম চলছে ধীরগতিতে। দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রমে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা অপরদিকে শ্রেনী কক্ষে পাঠদান, পরীক্ষা, খেলাধূলা সহ প্রাথমিক স্তরের রুটিন কার্যক্রম পরিচালনায় বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের। শিক্ষক সঙ্কটে থাকা বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৭৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসকল বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাধমিক থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ বিদ্যালয় গুলোতে ২৯টি প্রধান শিক্ষক পদ ও ১১৭ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম সহ প্রশাসনিক অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। এমনকি শিক্ষক স্বল্পতায় মানসম্মত ফলাফলের দিক দিয়েও পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা সিলেবাস অনুযায়ী মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতার কারনে নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফলাফলে বিপর্যয় হচ্ছে। দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এর সমাধান না হলে আগামী দিনগুলোতে কলাপাড়ায় প্রাথমিকে ভালো ফলাফল আসবে না। যদিও একাধিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষক সঙ্কটে প্রতিদিনের পাঠদান কার্যক্রম চলছে কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে। এছাড়া উপজেলায় কিছু মহিলা শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় ও কিছু সহকারী শিক্ষক দীর্ঘ দিন ধরে প্রশিক্ষনে থাকায় চলমান সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারন করেছে।
শিক্ষক স্বল্পতায় থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ক্লাস নিয়ে থাকেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে অফিসের কাজের পাশাপাশি এক শিক্ষককে দু’টি ক্লাশে ও পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হয়। শিক্ষক সংকটে অনেক সময় সব শ্রেনীর ক্লাশ নিয়মিত হচ্ছেনা। আর এ কারনে অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে দু’একটি মডেল বিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ বিদ্যালয় গুলোর সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল আশানুরুপ হচ্ছে না।
সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটার খাজুঁরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সঙ্কটে শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন অভিভাবকরা। খাজুঁরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হলেও শিক্ষক সংখ্যার কোনো হেরফের হয়নি।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস ছালাম গাজী বলেন, ২০১২ সালে স্কুলটি অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ার পর থেকে শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাইনি। অথচ অনেক স্কুল রয়েছে যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে দশের অধিক শিক্ষক রয়েছেন।
কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, কলাপাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সমস্যাগুলো দূরীকরনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে, শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অবগত। শুন্য পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে কারন তারা সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদের দাবী করছে। তিনি আরো বলেন, কলাপাড়ায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট শীঘ্রই সমাধান করা হচ্ছে।