সঞ্চয়পত্র থেকে বিনিয়োগ আনার চেষ্টা হচ্ছে পুঁজিবাজারে : গভর্নর
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেজারি বন্ড চালুর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর ৫০ শতাংশ বন্ড সেকেন্ডারিতে বিক্রির নিয়ম করেছি। আমরা চাই মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করুক। গতকাল সোমবার ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২২’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজধানীর বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। গভর্নর বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের দুটো পার্ট। এর মধ্যে একটা ইক্যুইটি বা শেয়ারমার্কেট আর একটা ডেপথ বা বন্ড মার্কেট। বাংলাদেশে শেয়ারমার্কেটই ডেভেলপ করেছে।
বন্ড মার্কেট খুব ডেভেলপ করেনি। বন্ডের সেকেন্ডারি মার্কেট আসলে ততটা ভালো কাজ করছে না। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতে উদ্যোক্তারা ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে পুঁজি সংগ্রহ করে, অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। আমাদের দেশে উল্টো, সবাই ব্যাংক থেকেই লোন নিচ্ছে। এতে ডিফল্টারও বাড়ছে। আমি মনে করি বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করতে পারলে সবাই বন্ড মার্কেটে যাবে। তিনি বলেন ‘বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক বন্ডের টাকা ফেরতে ফল্ট করেনি, আগামীতেও করবে না।
তাহলে তারা কেন মার্কেটে আসবে না। তাই ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি যে ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড ক্যাপিটাল মার্কেটে ইস্যু করতে হবে। আমরা ক্যাপিটাল মার্কেটে বন্ডগুলোকে বড় করার চেষ্টা করছি।’ আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, সরকারি ট্রেজারি বন্ড সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেড করার অটোমেটিক সিস্টেম ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়ে গেছে। মগ ট্রায়ালও হয়েছে এবং এটা খুব ভালো কাজ করেছে। সুতরাং আগামী সপ্তাহ থেকেই এটি চালু করার ঘোষণা দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে শুধু সরকারের আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে বলে জানান। তিনি বলেন, বন্ড মার্কেটের বিকাশে আরেকটা বড় সমস্যা ছিল সঞ্চয়পত্রে হাই ইন্টারেস্ট। এ কারণে বিনিয়োগের একটা বিরাট অংশ সঞ্চয়পত্রে ঢুকে যেত। এখন সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র অটোমেটেড করায় কোনো ব্যাংকে ৫০ লাখের বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। আমরা চাই মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করুক।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের উন্নত দেশ হতে হলে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন সেটার মধ্যে বর্তমানে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল গ্যাপ রয়েছে। বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ উপলক্ষে আমরা চেষ্টা করছি এই গ্যাপটা পূরণ করতে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ যেমন একটি বড় বিনিয়োগ তৈরি করে সেদিকে যেমন আমরা মনোযোগ দিচ্ছি তেমনি বড় বিনিয়োগের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। সলীম উল্লাহ বলেন, কাঁচাবাজারে যারা ছোটখাটো ব্যবসয়ী, গৃহবধূ, অফিসের কর্মচারী, দারোয়ান থেকে শুরু করে যারা আছে সবাই একসময় শেয়ারবাজারে চলে আসে। এটা আমাদের জন্য বিশাল পজিটিভ দিক ছিল। সারা দেশে একটা সুন্দর সাজ সাজ রব উঠেছে। সবাই শেয়ারবাজারে ব্যবসা করছে আর রাতারাতি টাকা পয়সার মালিক হচ্ছে, খুব ভালো একটা জিনিস। কিন্তু হঠাৎ করে ফুস হয়ে গেল।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল মনে আছে, তার কিছুদিন পর ২০১০ সাল। আমার মনে হয় খুঁজে বের করা দরকার যে বাজারে পুঁজি বেচাকেনা করে সে বাজারটা কেন, কারা বাজারে আসবে কে বিক্রি করবে, কেন বিক্রি করবে। এ সবগুলোর উত্তর যদি খুঁজে বেড়াই, তাহলে আমাদের একটি সুন্দর শেয়ারবাজার সৃষ্টি হবে এবং শেয়ারবাজারের যে অতীত ইতিহাস সেগুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া খুব জরুরি।
সেখানে কোথায় গলদ ছিল, সে গলদগুলো আমাদের বের করা এবং সে গলদকে আমরা যদি ঠিকমতো অ্যাড্রেস করতে পারি তাহলে শেয়ারবাজারটা ভালো হবে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের মূল বিষয় হলো মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। এটি আমাদের অর্জন করা খুব জরুরি। অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।