সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উচ্চাভিলাষী টার্গেট
নিউজ ডেস্ক।।
না শর্ত আরোপের কারণে মধ্যবিত্তের বিনিয়োগের ভিত্তিস্থল সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। গত আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে পাওয়া গেছে মাত্র আট কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের একই সময়ে যখন পাওয়া গিয়েছিল তিন হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। তারপরও সঞ্চয়পত্র বিক্রির একটি উচ্চাভিলাষী টার্গেট দিয়েছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প খাতে নিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সঞ্চয় স্কিমগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬৬ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, সুদ ও আসল পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের স্কিমভিত্তিক এ সংক্রান্ত বিনিয়োগের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে এক পরিপত্রে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংকগুলোর অনুকূলে ৬৬ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে ৯০ কোটি টাকা। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপ বন্ডের মাধ্যমে ৯৭৫ কোটি টাকা। ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের উল্লিখিত বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিভাজনপূর্বক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিফতরের এই সার্কুলারের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল জানান, বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার যে টার্গেট দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট হিসাব। অন্যদিকে, সঞ্চয় অধিদফতর থেকে যে টার্গেট দেয়া হয়েছে তা নিট বিক্রিসহ সুদ ও আসল পরিশোধের বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে যে টার্গেটই দেয়া হোক না কেন, চলতি অর্থবছরে এই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না। এই কথার সত্যতা পাওয়া গেল অর্থ বিভাগের এক পরিসংখ্যানে। যেমন গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় এই খাত থেকে ঋণ নেয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট টার্গেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিক্রির দৈন্যদশায় বছর শেষে বিক্রি ২০ হাজার কোটি টাকা হবে কি না সন্দেহ রয়েছে।
এর কারণ হিসেবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষের সঞ্চয় এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ হ্রাস ও নানা শর্তারোপকে চিহ্নিত করেছেন।
যেমন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর জন্য ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করাসহ আরো কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সর্বশেষ, সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমিয়ে আনতে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমতে থাকে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষের হাতে বর্তমানে সঞ্চয় করার মতো তেমন কোনো অর্থ থাকছে না। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে অনেকটা ধস নেমেছে। এই ধস আগামীতেও থাকবে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে।