সংশোধন হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের বেশিরভাগ সরকারি-বেসরকারি হাই স্কুলেই ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী চালু রয়েছে। এটি শিক্ষার প্রাথমিক স্তর। মাধ্যমিক স্তরের সব বিদ্যালয় থেকে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম এখন নিজেদের অধীনে নিতে এ সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধন করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে সহায়ক বই পড়ানোর সুযোগও রাখা হচ্ছে।
এই বিধিমালায় ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদনও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত শিক্ষা বোর্ডগুলোও নিজেদের প্রণীত নীতিমালার আলোকে সারাদেশে ইংরেজি মাধ্যমিকের বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে আসছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই বিধিমালার সংশোধনী বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। ২০১১ সালে প্রণীত ‘বেসরকারি প্রাথমিক (বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা’ সংশোধন করেই নতুন বিধিমালা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, ‘ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় শিক্ষা বোর্ডগুলো। এখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও যদি এটি করতে যায় সেক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা হবেই। আসলে শিক্ষার দুটি মন্ত্রণালয় করাই ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এতে অনেক কিছুতেই সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে।’
সংশোধিত বিধিমালায় কৌশলে শিক্ষার্থীদের ‘সহায়ক বই’ পড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। এর খসড়ায় ‘শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক, ইত্যাদি’-বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক (এনসিটিবি) কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যবই আবশ্যিকভাবে পাঠ্যপুস্তক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত, অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষাক্রম অনুসরণ করিতে হইবে।’
এছাড়া ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, প্রয়োজনে প্রতি শ্রেণীর যুগোপযোগী দুটির বেশি বই অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিবে না।’ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয়গুলো প্রতি শ্রেণীতে অন্তত দুটি সহায়ক কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করতে পারেন। নিষিদ্ধ নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসায়ীরাও এ সুযোগকে কাজে লাগাবে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিধিমালা সংশোধনীর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত নয়। বিভিন্ন মহলের মতামত নিয়েই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।
খসড়া বিধিমালায় অন্য একটি ধারায় ‘ইংরেজি ভাষা ও তথ্যপ্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব’ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘প্রত্যেক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্যান্য পাঠ্যক্রমের সঙ্গে ইংরেজি ভাষা, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক পাঠ্যসূচি অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে।’ এই ধারাটিও শিক্ষার্থীদের ঘাঁড়ে বাড়তি বই চাপিয়ে দিতে সহায়ক হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
জানতে চাইলে ২০১০ সালের শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য-সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির বলেন, ‘সহায়ক বই পড়ানো এক ধরনের লাভজনক ব্যবসা। এই সুযোগ থাকলে স্কুলপ্রধান, পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষা প্রশাসনের অনেকেই সুবিধা হয়। আর এর খেসারত দিতে হয় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের।’
খসড়া বিধিমালা ওপর মতামত নেয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই), উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজ গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েক বছর আগে প্রায় সাতশ’র মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণী চালু করে আটকে রয়েছে। কারণ বর্ধিত শ্রেণীর জন্য অবকাঠামো তৈরি ও শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। আবার এই স্তরের পরীক্ষাসহ অন্য ব্যবস্থাপনাও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এ জটিলতার কারণে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রেখেছে।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যতীত পঞ্চম শ্রেণী/গ্রেড-৫ পর্যন্ত পাঠদানকারী নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন, প্রিপারেটরি বিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে পরিচালিত ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়ও এর অন্তর্ভুক্ত হইবে।’
২০১১ সালের বিধিমালায় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বলতে শুধুমাত্র ‘নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন ও প্রিপারেটরি’কে বোঝানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির বলেন, শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীতকরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুই মন্ত্রণালয়ের (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা) সমন্বয়হীনতার কারণে এটি হয়নি।
বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী চালু করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেসব প্রতিষ্ঠান মাঝপথে আটকে রয়েছে। সে বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের কেউ সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না।’
এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক শ্রেণিগুলোর নিবন্ধনের দায়িত্ব যদি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নেয় তাহলে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে মন্তব্য করে শেখ ইকরামুল কবির বলেন, ‘কারণ তারা নিবন্ধনের দায়িত্ব নেবে, কিন্তু ওই স্তরের শিক্ষক-কর্মচারী ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে চাইবে না।’
খসড়া বিধিমালায় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিবন্ধন ফি বাড়ানো হচ্ছে। এরমধ্যে মেট্রোপলিটন সিটি ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরে অবস্থিত বেসরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ১২ হাজার টাকা (বর্তমানে) থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে।
এছাড়া জেলা সদরে অবস্থিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আট হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা, উপজেলা সদরসহ অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ছয় হাজার থেকে বাড়িয়ে আট হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর নিবন্ধনের মেয়াদ ধরা হয়েছে পাঁচ বছর। সূত্রঃ দৈনিক সংবাদ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়